অবৈধভাবে আড়িয়াল খাঁ’র মাটি বিক্রি, ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী

1 day ago 5

মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। নদীর কমপক্ষে ২০টি স্থানে অবৈধভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। প্রতিদিন রাতের আঁধারে ও ভোরে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।

এভাবে মাটি কাটার ফলে ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি। নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয়রা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, একাধিকবার বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অবৈধভাবে আড়িয়াল খাঁ’র মাটি বিক্রি, ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদের মাটি কাটায় জড়িত মাদারীপুর সদর উপজেলার পাচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচর গ্রামের স্থানীয় আবু চৌকিদারের ছেলে ইলিয়াজ চৌকিদার। তিনি তার নিজস্ব লোকজন নিয়ে কখনো রাতের আঁধারে আবার কখনো ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মাটি কেটে ট্রলারে করে নৌপথেই সেই মাটি নিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে তার নিজস্ব জমি থেকে মাটি কাটলেও পরবর্তীতে স্থানীয় খলিল চৌকিদার, বাবুল চৌকিদারের জমি থেকেও মাটি কাটা হয়েছে।

নদের পাড়ে মাটি কাটার কারণে গর্ত হয়ে গেছে। এতে পাশেই কাদের সরদারের লাউ, লাল শাক, টমেটো, করলাসহ তার সবজির ক্ষেত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। হুমকিতে পাশের মিন্টু সরদারের বসতবাড়ি। এখনই মাটি কাটা বন্ধ না হলে পুরো গ্রামটি নদীভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অবৈধভাবে আড়িয়াল খাঁ’র মাটি বিক্রি, ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের উত্তর মহিষেরচরের আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে দুটি স্থানে, একই ইউনিয়নের কাতলা বাহেরচরে দুটি স্থানসহ জেলার কমপক্ষে ২০টি স্থানে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব মাটি বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে ইটভাটায়।

উত্তর মহিষেরচর শিকদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আলমগীর শিকদার বলেন, ‌‘আমাদের গ্রামে স্থানীয় ইলিয়াস চৌকিদার রাতের আঁধারে আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি এর প্রতিবাদ করায় আমাকে হুমকি দিয়েছেন। এমনকী আমার চোখ তুলে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন তিনি।’

একই গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সাইফ বলেন, ‘আমরা বহুবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারপরও মাটি চুরি থামানো যায়নি। প্রতিদিনই রাতের আঁধারে তারা ট্রলারে করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। মাটি কাটা বন্ধ না হলে পুরো গ্রামটি হুমকির মধ্যে পড়বে।’

আরেক বাসিন্দা মিন্টু সরদার বলেন, ‘প্রতিদিন রাতেই এখান থেকে মাটি চুরি করে নিয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি সব নদীগর্ভে চলে যাবে। আমরা এর প্রতিকার চাই।’

একই এলাকার কাদের সরদার বলেন, ‘আমার ফসলি জমির পাশে থেকেই মাটি কাটা হয়েছে। এতে আমার জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এরকম অনেকের জমি হুমকির মধ্যে রয়েছে।’

স্থানীয় বাবুল চৌকিদার বলেন, ‘আমার প্রায় তিন কাঠা জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছেন ইলিয়াস চৌকিদার। নিষেধ করলেও তিনি শোনেন না।’

আরেক ভুক্তভোগী খলিল চৌকিদার। তিনি বলেন, ‘আমার জমি থেকেও মাটি কেটে নিয়ে গেছে। রাতের আঁধারে মাটি চুরি হয়ে যায়। আমাদের এলাকায় এগুলো করছে ইলিয়াস চৌকিদার।’

অবৈধভাবে আড়িয়াল খাঁ’র মাটি বিক্রি, ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী

স্থানীয় শাজাহান চৌকিদার বলেন, ‘আমার জমির পাশ থেকেও মাটি কাটা হয়েছে। এতে আমার জমি হুমকির মুখে আছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মাঝে মাঝে প্রশাসনের অভিযান চললে তা সাময়িক প্রভাব ফেলে। এতে কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে আবার আগের মতোই অবৈধ মাটি তোলা শুরু হয়।

নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহল ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা দরকার বলে মনে করেন মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ। তিনি বলেন, অবৈধ মাটি খনন বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রয়োগ ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইলিয়াস চৌকিদার বলেন, ‘আমি অনেক আগে মাটি কেটেছিলাম। কিন্তু এখন আর মাটি কাটি না। যখন দেখেছি মাটি কাটলে অন্যের ক্ষতি হয়, তখন থেকে আর এই কাজ আমি করছি না।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক আফসানা বিলকিস বলেন, যারা নদীর মাটি কাটছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এসআর/জিকেএস

Read Entire Article