আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, বিএনপির ১২ নেতাকর্মীর বাড়ি ভাঙচুর

4 days ago 7

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির ১২ নেতাকর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর ও বের কালোয়া গ্রামে পৃথক এ হামলার ঘটনা ঘটে।

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, বিএনপির ১২ নেতাকর্মীর বাড়ি ভাঙচুর

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, কয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য বকুল বিশ্বাসের নেতৃত্বে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হাজীর ভাই সোহেল রানা, স্বেচ্ছাসবক লীগের সহ-সভাপতি ওলি জোয়াদ্দার, ৯ নম্বর নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জমারত সরদার ও দপ্তর সম্পাদক মিন্টু খন্দকার এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক ইয়ারুল ও তাদের লোকজন হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে।

এতে কয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবদল নেতা সালমান এফ রহমান এবং কয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ও তাদের অন্তত ১২টি বাড়িতে প্রায় ৪০ লাখ টাকার নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু ও মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, কালোয়া বাজার এবং পদ্মা নদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি বকুল বিশ্বাসের লোকজনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশিদুল ইসলাম ও যুবদল নেতা সালমান এফ রহমানের।

এনিয়ে গত ১ নভেম্বর কালোয়া বাজারে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে রাশিদুল গ্রুপের দুজন আহত হয়েছিল এবং উভয়পক্ষের বেশকিছু ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সেদিনের ঘটনায় উভয়পক্ষ থানায় মামলা করেন। এসবের জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যায় বকুল গ্রুপের আওয়ামী লীগ নেতারা রাশিদুল গ্রুপের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে।

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, বিএনপির ১২ নেতাকর্মীর বাড়ি ভাঙচুর

শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিন সুলতানপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, যুবদল নেতা সালমানের পাকা বাড়ির সবকটি কাঁচের জানালা ভাঙা। ঘরের ভিতরের আসবাব ও মালামাল অগোছালো। তাতেও ভাঙা ক্ষত। গোয়ালঘরে নেই গবাদিপশু। সাবমার্সিবল পাম্পটি নেই। স্বজনরা ভিড় করেছে বাড়িতে।

এ সময় সালমানের মা শেফালি খাতুন বলেন, ভয়ে ছেলে মাসখানেক হলো বাড়ি থাকে না। শুক্রবার বাদ মাগরিব ইয়ারুল, সোহেল, মাসুম, নাজমুল, ফিরোজসহ অনেক লোকজন অস্ত্রসস্ত্রসহ বাড়িতে হামলা করে। ঘরের জানালা, আসবাব ভাঙচুর করে নগদ টাকা, সোনা, দুটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে।

কয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সালমানের বাবা মতিউর রহমান। তিনি বলেন, আমরা বিএনপি করি। এতোদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজি করেছে। এখনও চাঁদা না পেয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। এতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। থানায় মামলা করা হবে। বের কালোয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বেশকিছু বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুরের ক্ষত। আতঙ্কিত নারী, শিশুসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।

এ সময় সজিবের স্ত্রী লিপি খাতুন বলেন, সন্ধ্যার পরে আওয়ামী লীগের সোহেল, ইয়ারুল, চুন্নু, জমারতসহ শত শত মানুষ গ্রামে হামলা করে। আমার বাড়িসহ অনেকের বাড়িতে লুটপাট করেছে। এতে আমার এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

বিএনপি নেতা রাশিদুল ইসলাম এসব অস্বীকার করে বলেন, বিএনপি নেতা বকুল মেম্বার আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের ১২টি বাড়িতে হামলা লুটপাট করেছে। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার ভাষ্য, চাঁদা না দেওয়ায় একমাসে তিনবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। থানায় চার থেকে পাঁচটি মামলা হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা জমারত, ইয়ারুল, সোহেল কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। কারো বাড়িতে আবার ঝুলছে তালা। তাদের মোবাইল নম্বরও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা বকুল বিশ্বাস বলেন, রাশিদুল ও সালমান পদ্মায় চাঁদাবাজি করার জন্য এলাকায় অশান্তি করছে। প্রায় আমার লোকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। শুক্রবার ফের হামলা চালালে আমার লোকজন পাল্টা ধাওয়া করে। তবে কারো বাড়িতে ভাঙচুর বা লুটপাট করা হয় না।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে এক পক্ষ আরেক পক্ষের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আল-মামুন সাগর/আরএইচ/জিকেএস

Read Entire Article