আমার দুই পায়ে ৬ রাউন্ড গুলি করে দুই পুলিশ

2 weeks ago 16

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সময় রাজধানীর রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দুই জনকে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন আমির হোসেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আমার দুই পায়ে ৬ রাউন্ড গুলি করে দুই পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই মামলায় প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আমির হোসেন।

জবানবন্দিতে আমির বলেন, গুলির ভয়ে ছাদে ওঠলেও পিছু নিয়ে দুই পায়ে গুলি করে দুই পুলিশ। সাক্ষ্যগ্রহণের আগে প্রসিকিউশনের পক্ষে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম। পরে এ মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২৭ অক্টোবর দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।

সাবেক ডিএমপি কমিশানর হাবিবুর রহমানসহ এই মামলায় মোট আসামি পাঁচজন। এর মধ্যে একমাত্র গ্রেফতারকৃত আসামি রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ।

আরও পড়ুন
শেখ হাসিনাকে শাস্তি দিতে না পারলে শহীদ-আহতদের প্রতি অবিচার হবে 
হাসিনার অপরাধের প্রমাণ হিমালয়ের মতো দৃঢ়, ক্রিস্টালের মতো স্বচ্ছ 

পলাতক বাকি তিন আসামি হলেন, খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। এদিন প্রথমেই ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

জবানবন্দি শেষে এই সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান ও পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। জবানবন্দির শুরুতে নিজের পরিচয় তুলে ধরেন ১৮ বছর বয়সী আমির হোসেন।

জবানবন্দিতে আমির হোসেন বলেন, ‘গত বছর ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আমার দোকান থেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। রামপুরা খালের ওপর সাঁকো পাড় হয়ে মেইন রাস্তায় ওঠার পর আমি দেখতে পাই, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা আন্দোলনরত জনগণ ও ছাত্রদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। গুলির ভয়ে আমি পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের ৪র্থ তলার ছাদে উঠে যাই।’

তিনি বলেন, ‘তিনজন পুলিশ আমার পিছে পিছে ছাদের ওপরে উঠে আসে। পুলিশদের আসতে দেখে আমি ছাদের সঙ্গে একটি রড ধরে ঝুলে আশ্রয় নেই। একজন পুলিশ আমাকে সেখান থেকে নিচে ঝাঁপ দিতে বলে। আমি ঝাঁপ না দিয়ে রড ধরে ঝুলে থাকি।
তখন ওই পুলিশ সদস্য আমাকে পিস্তল দিয়ে পরপর ৩ রাউন্ড গুলি করে। ৩টি গুলিই আমার পায়ে বিদ্ধ হয়। তারপর সে চলে যায়। আরেকজন পুলিশ এসে পিস্তল দিয়ে আরও ৩ রাউন্ড গুলি করে। সেই ৩ রাউন্ড গুলিও আমার দুই পায়ে লাগে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে আসলে আমি দেখতে পাই, আমি ফেমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি।’

সাক্ষী আমির হোসেন বলেন, ‘যারা আমাকে বিনা কারণে গুলি করেছে, আমি তাদের শাস্তি চাই।’

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ৭ আগস্ট প্রসিকিউশনের পক্ষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। গত ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

এফএইচ/এসএনআর/জিকেএস

Read Entire Article