এক চরম প্রশাসনিক ভুলের কারণে এক উইঘুর নারীকে তুরস্কের পরিবর্তে ভুলবশত চীনে পাঠিয়ে দিয়েছে জার্মানি- এমন ঘটনা কেন্দ্র করে দেশটিতে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকারকর্মীরা একে বলেছেন ‘বড় ধরনের প্রশাসনিক ব্যর্থতা’, যা ওই নারীর প্রাণকেও বিপন্ন করতে বসেছিল।
সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবার (১০ নভেম্বর) জার্মান গণমাধ্যম ডের শ্পিগেল জানায়, ৫৬ বছর বয়সী রেজিওয়ানগুলী বাইকেলি নামে ওই নারীকে গত সপ্তাহে জার্মানি থেকে চীনে পাঠানো হয়। তবে ভাগ্যক্রমে বেইজিংয়ে পৌঁছানোর পর তিনি দ্রুত দেশটি ত্যাগ করতে সক্ষম হন ও শেষ পর্যন্ত তুরস্কে পৌঁছান।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ অ্যাড্রিয়ান জেঞ্জ এএফপিকে বলেন, এটা এক প্রকাশ্য মানবাধিকার লঙ্ঘন। ওই নারীর জীবন বিপন্ন হতে বসেছিল। কেবল ভাগ্যক্রমেই তিনি চীন থেকে বেঁচে ফিরতে পেরেছেন। এটা এক ভয়াবহ প্রশাসনিক ভুল।
ডের শ্পিগেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইকেলি ২০১৭ সালে তার মেয়েকে নিয়ে চীনের শিনজিয়াং অঞ্চল ছেড়ে তুরস্কে আশ্রয় নেন। সেই সময়েই চীনের মুসলিম উইঘুর জনগোষ্ঠীর ওপর দমনপীড়ন ও তথাকথিত ‘পুনঃশিক্ষা শিবিরে’ আটকের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। যদিও বেইজিং সরকার এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
বাইকেলি পরে ২০২৪ সালে তার মেয়ের কাছে থাকতে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসেন ও সেখানে আশ্রয়ের আবেদন করেন। কিন্তু জার্মানির ফেডারেল মাইগ্রেশন অফিস (বিএএমএফ) তার আশ্রয় আবেদন নাকচ করে দেয় ও তাকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
তবে দেশটির স্থানীয় প্রশাসন যখন গত ৩ নভেম্বর লোয়ার স্যাক্সনি অঙ্গরাজ্যে তার বাসস্থান থেকে তাকে নির্বাসিত করতে যায়, তখন তারা দেখতে পায় বাইকেলির কাছে শুধু চীনা পাসপোর্ট আছে, কোনো তুর্কি পরিচয়পত্র নেই।
ফলে বিএএমএফের নির্দেশনায় তুরস্কের নাম থাকলেও সেখানে সরাসরি চীনে পাঠানোর কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় কর্মকর্তারা ভুলবশত তাকে চীনের বিমানে তুলে দেন।
তবে বেইজিংয়ে পৌঁছানোর পর তাকে গ্রেফতার করা হয়নি, বরং তিনি তার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। তার মেয়ে দ্রুত দুবাই হয়ে ইস্তানবুলের টিকিট বুক করে দেন ও সেখান থেকেই বাইকেলি নিরাপদে তুরস্কে পৌঁছান।
এএফপির সঙ্গে কথা বলা এক সরকারি সূত্র এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। যদিও জার্মানির ফেডারেল মাইগ্রেশন অফিস ও সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
জার্মানিতে উইঘুরদের চীনে ফেরত পাঠানোর ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বর্তমান নির্দেশনা অনুযায়ী উইঘুরদের সুরক্ষা দেওয়া উচিত। সর্বশেষ ২০১৮ সালে জার্মানি এক উইঘুর নাগরিককে চীনে ফেরত পাঠিয়েছিল।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও প্রবাসী উইঘুররা অভিযোগ করে আসছেন, চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলে ১০ লাখেরও বেশি মুসলিম উইঘুরকে আটক রাখা হয়েছে তথাকথিত পুনঃশিক্ষা শিবিরে। সেখানে তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয় বলেও অভিযোগ আছে। তবে চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করে, তাদের এসব নীতি চরমপন্থা দমনের অংশ মাত্র।
সূত্র: এএফপি
এসএএইচ

6 hours ago
4









English (US) ·