এআই দিয়ে বানানো নাকি আসল ছবি চিনবেন যেভাবে

3 hours ago 4

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন ছবি মানেই সত্য নয়। জেনারেটিভ এআই, ডিপফেক ও বিভিন্ন ছবি-মডেল এত সূক্ষ্মভাবে ছবি বানায় যে প্রথম দেখায় আসল বলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। সোশ্যাল মিডিয়া, বিজ্ঞাপন, এমনকি ভুয়া খবর ছড়াতেও এখন এসব ভুয়া ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষ যদি কয়েকটি টিপস মাথায় রাখে, খুব সহজেই এআই-তৈরি ছবি আর আসল ছবির পার্থক্য বোঝা সম্ভব।

১. চোখ ও দাঁতের অনিয়মিততা লক্ষ্য করুন
এআই-তৈরি ছবিতে চোখ ও দাঁত প্রায়ই অস্বাভাবিকভাবে রেন্ডার হয়; চোখে একইরকম বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ রিফ্লেকশন দেখা যায়, চোখের কোণ হালকা ব্লারড বা অনোট্র ফলে জীবন্ততা ছাড়া মনে হয়। দাঁত অতিরিক্ত নিখুঁত, খুব সমান বা ব্লক-আকারে দেখা গেলে সেটি সন্দেহজনকপ্রকৃত ছবিতে দাঁতের মাঝেমাঝে ফাঁক, ছায়া ও আলোর ভিন্নতা থাকে।

২. হাত এবং আঙুল পরীক্ষা করুন
মানবদেহের মধ্যে হাত হলো এআই মডেলের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। ছবি দেখতে গেলে আঙুলের সংখ্যা, নখের আকৃতি বা আঙুলগুলোর সংযোগ-স্থানে বিকৃতি এইসব ত্রুটি ওঠে। অনেক এআই ছবিতে আঙুল অতিরিক্ত বাঁকা, গলে যাওয়া বা অসাামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বসানো থাকে; হাতে ধরা বস্তু মাঝে মাঝে অদ্ভুতভাবে ঢুকে বা মুছে যায়।

৩. ব্যাকগ্রাউন্ড ও গভীরতা অবহেলা করলে সন্দেহ করুন
এআই প্রায়শই ব্যাকগ্রাউন্ডকে খুব সমান, স্মুথ বা ডিটেইলহীনভাবে তৈরি করে দেয়। কোনো জায়গায় অস্বাভাবিক পারফেক্ট প্যাটার্ন বা বিভ্রম থাকলে সেটি লক্ষ করার কথা। আসল ছবিতে ফরগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে প্রকৃত গভীরতা, ব্লার ও লেয়ারিং স্বাভাবিকভাবে মেলে যদি তা অনুপস্থিত বা অযৌক্তিক হয়, তা এআই-ছবি হওয়ার ইঙ্গিত।

৪. আলো-ছায়ার সামঞ্জস্য যাচাই করুন
প্রকৃত ছবিতে আলো যেখানে পড়ে, সেখানে ছায়াও মিলবে। এআই-তৈরি ছবিতে অনেক সময় চরিত্রের মুখ বা শরীরে উজ্জ্বল আলো দেখা গেলেও ট্যাংজেনশিয়াল ছায়া মিলবে না, কিংবা বিভিন্ন বস্তু একে অপতদন্ত দিক থেকে ছায়া ফেলছে। এই ধরনের ছায়া-প্রতিবিম্বের অসামঞ্জস্য ছবি যেন কৃত্রিম এটি দ্রুত শনাক্ত করা যায়।

৫. ত্বকের টেক্সচার অতি নিখুঁত হলে সতর্ক হন
আসল মানুষের ত্বকে পোর, সূক্ষ্ম ভাঁজ বা হালকা অসমচিত্রতা থাকে; এআই তৈরিতে ত্বক প্রায়শই অতিরঞ্জিতভাবে স্মুথ, অতিরিক্ত গ্লো বা প্লাস্টিক-সদৃশ দেখায়। যদি চেহারা বেশি পরিপাটি ও অনন্যরকম রাখে বিশেষ করে মুখের ঘন নিকটবর্তী অংশে তবে সেটি সন্দেহের বাইরে নয়।

৬. ছবিতে লেখা বা লোগো পরীক্ষা করুন
বিলবোর্ড, টি-শার্ট, প্যাকেজিং বা ব্যানারে থাকা লেখা কৃত্রিম ছবিতে বিকৃত, ভুল বানান বা অচল অক্ষরে দেখা দেয় এটি এআই জেনারেশনের একটি প্রচলিত ত্রুটি। লেখার অকার্যকরতা বা অদ্ভুত লিপিবদ্ধতা দেখে সহজেই বোঝা যায় যে ছবি কৃত্রিমভাবে তৈরি বা ম্যানিপুলেট করা হয়েছে।

৭. রিভার্স ইমেজ সার্চ করুন (সূত্র যাচাই)
যে কোনো ছবিই সন্দেহজনক মনে হলে দ্রুত গুগল লেন্স, টিনআই বা বিং ইমেজ সার্চ দিয়ে রিভার্স ইমেজ খোঁজুন। আসল ছবি সাধারণত আগে কোথাও প্রকাশিত থাকে নিউজ, ব্লগ বা স্টক সাইটে কিন্তু জেনারেটেড ছবি সাধারণত নতুনভাবে তৈরির ফলে সোর্স মিলবে না; এতে সহজেই নিশ্চিত হওয়া যায়।

৮. মেটাডেটা ও এআই-ডিটেকশন টুল ব্যবহার করুন
ছবির এক্সিফ মেটাডেটা চেক করলে ক্যামেরা মডেল, শুটিং ডেটা পাওয়া যেতে পারে; এআই-জেনারেটেড ছবিতে এসব মেটাডেটা অনুপস্থিত বা জেনারেটেড বাই ধরনের তথ্য থাকতে পারে। পাশাপাশি হাইভ মোডারেশন, সেনসিটি বা অন্যান্য এআই-ডিটেক্টর টুল ব্যবহার করে ছবিটির সম্ভাব্য এআই-উৎপত্তি যাচাই করা যায় এগুলো ১০০ শতাংশ নিশ্চিত না হলেও সূচক দেয়।

৯. মুখের অভিব্যক্তি ও স্বাভাবিকতা লক্ষ্য করুন
আসল মানুষের হাসি, চোখের ভরসা, মুখের মাইক্রো-এক্সপ্রেশন খেয়াল করুন। এআই ছবি প্রায়ই স্টিফ বা একই ধাঁচের অভিব্যক্তি তৈরি করে সবাই একইভাবে হাসছে, চোখে কোন অনুভূতি নেই বা মুখের পেশীতে অস্বাভাবিক সেটিং দেখা যায়। দলজাত ছবি থাকলে সবার একসঙ্গে একই পোজে থাকা অস্বাভাবিক মনে হলে সন্দেহ করুন।

১০. সামগ্রিকভাবে লজিকাল অঙ্গবিন্যাস পরীক্ষা করুন
ছবির সন উপাদান একসঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত আলো, ছায়া, প্রতিবিম্ব, আঙ্গিক ও জিনিসের অনুপাত। যদি কোনো একক উপাদানই অন্যদের সঙ্গে মিল না খায়, যেমন চশমার প্রতিফলন অন্যদিকে, গহনা ভুলভাবে বসানো তাহলে ছবিটি ম্যানিপুলেটেড বা এআই উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।

আরও পড়ুন
সোশ্যাল মিডিয়া নজর রাখছে আপনার ব্যক্তিগত জীবনেও
এবার ছবি থেকে ভিডিও বানিয়ে দেবে জিমিনি

কেএসকে/জেআইএম

Read Entire Article