এক সপ্তাহ আগে জিডিতে বিচারকের স্ত্রী যে অভিযোগ করেছিলেন

2 hours ago 5

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আব্দুর রহমানের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে কুপিয়ে হত্যায় জড়িত লিমন মিয়ার বিরুদ্ধে সাতদিন আগেই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। হামলায় আহত বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসী সিলেটের জালালাবাদ থানায় এ জিডি করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজশাহী নগরীর ডাবতলায় স্পার্ক ভিউ নামের ১০তলা ভবনের পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে তাওসিফ রহমান সুমনকে কুপিয়ে হত্যা ও তার মা তাসমিন নাহার লুসিকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ঘাতক লিমন।

জিডিতে তাসমিন নাহার লুসি উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ায় লিমনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর থেকেই লিমন তার মোবাইল নম্বর নেয়। লিমনের পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় প্রায়ই তিনি তার (তাসনিম নাহার) কাছে আর্থিক সহযোগিতা নিতেন। একপর্যায়ে লিমন প্রতিনিয়ত তার কাছে সহযোগিতা চাইলে তিনি সহযোগিতা করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে লিমন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কল করে হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন।

জিডিতে তাসনিম নাহার আরও উল্লেখ করেন, সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর আনুমানিক সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে তাসনিম নাহারের মেয়ের ম্যাসেঞ্জারে কল করে তার (তাসনিম নাহার) ও তার পরিবারের লোকজনদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন লিমন। লিমন যে কোনো সময় তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করতে পারে বলে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

জালালাবাদ থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মোবাশ্বির বলেন, জিডি হওয়ার পর আদালত থেকে তদন্তের অনুমতি নিতে হয়। আমরা জিডিটি আদালতে পাঠিয়েছি। তবে এখনও তদন্তের অনুমতি পাইনি। তাই জিডির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, বিচারক আব্দুর রহমানের মেয়ে বিবাহিত। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাই সিলেটে মেয়ের কাছে ছিলেন তাসমিন নাহার লুসী। সেখানে থাকা অবস্থায় লিমন মিয়ার হুমকি পেয়ে তিনি থানায় জিডি করেছিলেন।

বিচারক আব্দুর রহমানের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার চকপাড়া গ্রামে। আর ঘাতক লিমন মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া ভবানীগঞ্জ গ্রামে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের ফলে সুমনের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত পাওয়া গেছে। লাশ হাসপাতালের মর্গে আছে। বিচারকের স্ত্রীর ডান হাত ও উরু এবং বাঁ বাহুতে গুরুতর জখম দেখা গেছে। এছাড়া তার ডান হাতের একটি রগ কেটে গেছে। চিকিৎসকদের একটি সমন্বিত দল অস্ত্রোপচার করেছেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। 

তিনি আরও বলেন, লিমন মিয়ার ডান হাতে জখম ছিল। তবে সেটি গুরুতর নয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া মুখপাত্র) মো. গাজিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমাদের কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার, লিমন (ঘাতক) তাসনিম নাহারের পূর্ব পরিচিত। লিমন ওই বাসায় ঢুকে তাসনিম নাহারের সঙ্গে কথাও বলছিলেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে লিমন তার ও পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই এ হামলা চালানো হতে পারে। তবে তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, হামলাকারী আটক ব্যক্তির নাম ইমন। সিলেটের জালালাবাদ থানায় এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জিডি করেছিলেন তাসমিন নাহার। তবে, কী কারণে এমন হামলা হয়েছে, তা জানা যায়নি। আমরা ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

Read Entire Article