এসি-ওসি স্যারের নির্দেশে আবু সাঈদকে গুলি করা হয়

1 hour ago 7

রংপুর কোতোয়ালি জোন পুলিশের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আরিফুজ্জামান ও তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ রবিউল ইসলামের নির্দেশে চালানো গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন তথ্য জানিয়েছেন এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম।

বুধবার (১২ নভেম্বর) আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ১৪ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষীর জবানবন্দি দেন তিনি। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এ মামলায় প্রসিকিউশনের ১৫তম সাক্ষী হিসেবে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি বেরোবিতে দায়িত্বরত ছিলেন।

এদিন এই মামলায় প্রসিকিউশনের ১৪তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালনকারী পুলিশের এসআই মো. আশরাফুল ইসলাম।

তিনি তার জবানবন্দিতে বলেন, পুলিশের এসি আরিফুজ্জামান স্যার ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম স্যারের নির্দেশে শর্টগান ইস্যুকৃত পুলিশ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে গেটের বাহিরের দিকে যায়।

দুই হাত প্রসারিত করে দাড়িয়ে থাকা একজন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগে। পরে এই দুই সাক্ষীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এই জেরা শেষে আরও সাক্ষী উপস্থাপনের জন্য বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দিন ধার্য করা হয়।

৪৭ বছর বয়সী পুলিশের এসআই মো. আশরাফুল ইসলাম বর্তমানে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছর ১৬ জুলাই রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনস এ কর্মরত ছিলেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আনুমানিক ১টার দিকে রংপুর শহরের লালবাগ থেকে ছাত্র জনতার একটি মিছিল আসে।

তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোতয়ালী জোনের এসি মো. আরিফুজ্জামান, এডিসি ডিবি মো. শাহ নুর আলম পাটোয়ারী ও তাজহাট থানার ওসি মো. রবিউল ইসলাম উপস্থিত সকল পুলিশ সদস্যদেরকে বেরোবির ১ নং গেটের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাড় করিয়ে দেন। লালবাগ থেকে আগত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেটে প্রবেশ করতে চাইলে এসি আরিফুজ্জামান স্যার ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে বাধা প্রদান করেন। একপর্যায়ে ছাত্রদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। এরপর উপস্থিত সকল ফোর্সদেরকে এসি আরিফুজ্জামান স্যার হুইসেল ও লাঠিচার্জ এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন।

জবানবন্দিতে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, লাঠিচার্জ এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হলে ছাত্র জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেটের ভেতরে দাড়িয়ে থাকা সিভিল পোশাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কতিপয় সদস্য অবস্থান নিলে ছাত্র জনতা আরো উত্তেজিত হয়।

এরপর এসি আরিফুজ্জামান স্যার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে গ্যাসগান ইস্যুকৃত সদস্যদেরকে গ্যাস ফায়ারের নির্দেশ দেন। এসি আরিফুজ্জামান নিজেও গ্যাসগান ফায়ার করেন। গ্যাসগান ফায়ার করলে ছাত্র জনতা আবার ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

পরক্ষণে উপস্থিত সকল পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এসি আরিফুজ্জামান স্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেটের ভিতরে চলে যান। কিছু সময় পরে ছাত্র জনতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং গেট ধাক্কা ধাক্কি করে খুলে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।

তিনি বলেন, এ সময় এসি আরিফুজ্জামান স্যার, তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম ও এডিসি ভিবি শাহ নুর আলম পাটোয়ারী পুলিশ সদস্যদেরকে সামনের দিকে ডাকেন এবং শর্টগান ফায়ার করতে বলেন। এসি আরিফুজ্জামান স্যার ও ওসি রবিউল ইসলাম স্যারের নির্দেশে শর্টগান ইস্যুকৃত পুলিশ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে গেটের বাহিরের দিকে যায়। শর্টগান ফায়ার করলে রাস্তায় দুই হাত প্রসারিত করে দাড়িয়ে থাকা একজন ছাত্রের গায়ে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ ছাত্র অসুস্থ্য হয়ে সেখানে পড়লে আশেপাশে কয়েকজন ছাত্র তাকে ধরাধরি করে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। এ সময় ছাত্র জনতার ওপর পুনঃরায় এসি আরিফুজ্জামান স্যার গ্যাসগান ফায়ার করেন।

এফএইচ/এমএসএম

Read Entire Article