এ্যানির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের সাবেক সভাপতি রেজাউল

1 day ago 6

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদরের একাংশ) আসনে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। তবে পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামীও। সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। দুই দলের নেতাকর্মীরা অনেকটা প্রতিযোগিতা করে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রাখছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা এলাকাছাড়া। কর্মী-সমর্থকরাও নিষ্ক্রিয়। নামেমাত্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ।

জেলার রায়পুর উপজেলা ও সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসন গঠিত। আর সদর উপজেলার বাকি ১২টি ইউনিয়ন ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভা নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর-৩ আসন। হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী এই আসনে মোট ভোটার ছয় লাখ ৭১ হাজার ৪৯ জন।

লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বিএনপি থেকে দুইবার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপি থেকে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করা না হলেও তিনিই মনোনয়ন পাবেন, এ নিয়ে নিশ্চিত তার সমর্থকেরা। এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিম। ফলে এ্যানি ও রেজাউল করিমের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

তবে এ দুই প্রার্থীর কাছে ভোটারদের প্রত্যাশা, যিনিই নির্বাচিত হোক না কেন, তিনি যেন সদরের পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাস রোধে কঠোর হস্তে কাজ করেন। রাজনৈতিক মদদে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকাগুলোতে লাগামহীন সন্ত্রাস, খুনোখুনি ও অস্ত্রবাজি চলছে। এ অবস্থায় সন্ত্রাসমুক্ত স্বাভাবিক পরিবেশ চান ভোটাররা।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। আর ২০০৯-১০ সালে ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন রেজাউল করিম। তারা এখন জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করছেন। নির্বাচন ঘিরে তারা প্রতি সপ্তাহে এলাকায় আসছেন, নেতাকার্মীদের কাছে যাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের কাছে টানতে চেষ্টার ত্রুটি নেই দুজনের।

আরও পড়ুন:
বিএনপির দিকে তাকিয়ে এলডিপির শাহাদাত, আলোচনায় উপদেষ্টা মাহফুজ
ভোটের লড়াইয়ে দুই ‘ভূঁইয়া’, তৎপরতা নেই এনসিপির
বিএনপি-জামায়াত-এনসিপিতে হেভিওয়েট প্রার্থী, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি
পলাতক ওসমান পরিবার, খেলায় এগিয়ে বিএনপি
হারানো আসন ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি, মাঠে আছে জামায়াত-এনসিপি

ভোটাররা বলছেন, অনেকটা প্রতিযোগিতা নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সভা-সমাবেশ করছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এতে নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা রয়েছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতেও প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকছে।

অতীতে নির্বাচিত যারা

১৯৮৪ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা গঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে এমপি হন মোহাম্মদ উল্লাহ। এরপর ১৯৮৮ সালে সম্মিলিত বিরোধী দল থেকে এমপি হন আবদুচ ছাত্তার মাস্টার। ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে খায়রুল এনাম, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে একই দলের নুরুল আমিন ভূঁইয়া ও জুনের নির্বাচনে খায়রুল এনাম জয়ী হন। ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে এমপি হন শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন এ কে এম শাহজাহান কামাল। ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শাহজাহান কামালের মৃত্যু হলে নির্বাচন কমিশন আসনটি শূন্য ঘোষণা করে। পরে উপ-নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনেও নির্বাচিত হন পিংকু।

এদিকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির হয়ে মাঠে রয়েছেন অনারারি ক্যাপ্টেন (অব.) মুহাম্মদ ইব্রাহিম। গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী জেলা সভাপতি নুর মোহম্মদ। জাতীয় পার্টির রাকিব হোসেনও মাঠে রয়েছেন। মোটামুটি তৎপর রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এসসিপি)। তবে এবি পার্টির কার্যক্রম চোখে পড়েনি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘আমরা গ্রামে গ্রামে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের নিয়ে নিয়মিত উঠান বৈঠক করছি। তারেক রহমানের ৩১ দফা তুলে ধরছি। বিএনপির প্রতি মানুষের ভালোবাসা অতীতেও ছিল, এখনো আছে। জনগণ ভোট দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনবে।’

জামায়াতের প্রার্থী রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, মাদক, দুঃশাসন থেকে মানুষ পরিবর্তন চায়। ডাকসুসহ বিশ্ববিদ্যালগুলোর নির্বাচনে তরুণ প্রজন্ম যে রায় দিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনও সেটি হবে। আমরা মানবিক, উন্নত, আধুনিক লক্ষ্মীপুর গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণদের সংগঠিত করা দল গণঅধিকার পরিষদ। মানুষের ভোটাধিকার ও কল্যাণের জন্য দলটি তৃণমূল পর্যায়েও কাজ করছে বলে জানান গণঅধিকার পরিষদের লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুর মোহাম্মদ।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাহমুদুর হাসান বলেন, ‘সদর আসনে আমাদের ইউনিয়ন ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা শেষের পথে। আমাদের মনোনীত প্রার্থী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরবেন। এরপর আমরা গণসংযোগ শুরু করবো।’

কেকে/এসআর/এমএমএআর/এমএস

Read Entire Article