ঐকমত্য কমিশন জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে: মির্জা ফখরুল

12 hours ago 9

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দীর্ঘ ১ বছরের আলোচনার পরও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের প্রস্তাব একপেশে, জবরদস্তিমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাগুলোকে অর্থহীন ও প্রহসনমূলক করে তোলা হয়েছে। সরকারের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন আদেশ গণতন্ত্র, সংসদীয় সার্বভৌমত্ব ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।

অগোচরে পরিবর্তনের অভিযোগ
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’–এর চূড়ান্ত কপিতে কিছু দফায় অগোচরে সংশোধন আনা হয়েছে।

তার অভিযোগ, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরকারি-বেসরকারি অফিসে টানানোর বিধান বিলুপ্তির বিষয়ে প্রায় সব দল একমত হলেও তা সনদে রাখা হয়নি। একইভাবে সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদের (পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম তফসিল) বিলুপ্তির প্রস্তাবও বাদ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আমরা ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে সনদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত কপি আমাদের সামনে আনা হয়নি।

সরকারের এখতিয়ার নেই
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ নামে একটি আদেশ জারি করতে চায়, যা সরকারের এখতিয়ারের বাইরে।

তার ভাষায়, সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদাসম্পন্ন; সেটি জারি করা কেবল রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। সরকার এভাবে আদেশ জারি করলে তা অসাংবিধানিক হবে।

একপেশে গণভোট প্রস্তাব
ফখরুল বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ৪৮টি দফা গণভোটে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এতে প্রমাণ হয়, এক বছরের আলোচনার সব প্রচেষ্টা অর্থহীন ছিল—এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়, বলেন তিনি।

সংবিধান সংস্কার পরিষদ অবৈধ
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একই সঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবেন। তিনি প্রশ্ন করেন, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা শুধু জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত সীমিত। সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কোনো এখতিয়ার তাদের নেই।

তিনি আরও বলেন, এই পরিষদ যদি ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করে, তাহলে সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে—এমন ধারণা হাস্যকর ও গণতান্ত্রিক রীতির পরিপন্থী।

নির্বাচনের দিনেই গণভোট হোক
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে বিএনপি প্রস্তাব করেছে—নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা হোক।
ফখরুল বলেন, আগে গণভোট নেওয়া অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে সময়, ব্যয় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে তা যুক্তিযুক্ত।

জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বিএনপির ছাড়
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে বহু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমরা সবসময়ই সংস্কারের পক্ষে। শহীদ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, খালেদা জিয়ার ভিশন–২০৩০ এবং তারেক রহমানের ২৭ দফা—সবই প্রমাণ করে বিএনপি গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্তরিক।’

জাতির প্রত্যাশা পূরণের আহ্বান
ফখরুল বলেন, আমরা আশা করি, ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের অঙ্গীকার রক্ষায় জাতি ঐক্যবদ্ধ হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।

তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা এমন এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে চাই, যেখানে থাকবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিকে বিভক্ত করার যে কোনো পদক্ষেপ অনৈক্য সৃষ্টি করবে এবং জাতীয় জীবনে অকল্যাণ ডেকে আনবে। আমরা চাই ঐক্য, প্রতারণা নয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সালাউদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম

Read Entire Article