রাজশাহীতে ৯ দিনব্যাপী বিভাগীয় বইমেলা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর চাহিদা মাথায় রেখে রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে জমকালো আয়োজনেই শুরু হয় এই মেলা। তবে মেলা উদ্বোধনের আগে থেকেই মাঠে কাঁদা ও পানি জমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
তাদের অভিযোগ, মেলার পরিবেশ ও স্থান নির্ধারণের বিষয়টি সঠিক নির্বাচনের অভাবেই এমন সমস্যার তৈরি হয়েছে। তবে আয়োজকদের দাবি, সময় ও স্থান নির্বাচন সঠিক হয়েছে। প্রাকৃতিক কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, বইমেলার প্রধান গেট থেকে অনুষ্ঠানস্থল পর্যন্ত কাঁদা-পানি জমে আছে। প্রবেশদ্বার থেকে অনুষ্ঠানের স্টেজে যেতেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ লাইনে। সাময়িক সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে একটি-দুইটি করে ইট বিছানো হয়েছে। আর সেই ইট পেরিয়েই লাইন ধরে যাচ্ছেন আগত দর্শনার্থীরা। অনুষ্ঠানের জন্য তৈরিকৃত মঞ্চের সামনের সারিবদ্ধ চেয়ারের নিচেও জমে আছে কাঁদা-পানি।
আবার স্টলের সামনের মাঠি পানি-কাঁদায় জমে থাকায় বিপাকে পড়েছেন বিক্রেতারা। অনেক স্টলের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়ায় বিক্রেতারা বই সরাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। নিরুপায় হয়ে ইট বিছিয়ে পথ তৈরি করেছেন বিক্রেতারাই। তবুও এক স্টল থেকে অন্য স্টলে যেতে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ক্রেতা-পাঠকদের। ফলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বিক্রির দেখা মিলছে না বিক্রেতাদের।
আয়োজকরা জানান, ৩১ অক্টোবর বিকেলে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়। মেলায় ১১টি সরকারি দপ্তর এবং ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৮১টি স্টলে তাদের প্রকাশিত পুস্তকের প্রদর্শনী ও বিক্রয় করছে। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের আয়োজনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসন এই মেলার বাস্তবায়ন করছে।
শনিবার সন্ধ্যায় শিশুরাজ্য প্রকাশনের বিক্রেতা ওলিউর রহমান আশরাফ বলেন, বৃষ্টির কারণে কাঁদা-পানি জমে আছে, বিক্রির পরিস্থিতি খারাপ। এদিকে মানুষ অল্প আসছে, গেটের কাছে এসেই চলে যাচ্ছে, যা আসছে প্যান্ডেলের অনুষ্ঠানে আসছে। শুরুর দিনে একজনও আসেনি, দ্বিতীয় দিনে কয়েকজন আসছে। কোনো রকমে ৩ থেকে ৪টা বই বিক্রি করেছি।
লোকসানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রথম রাতে বৃষ্টির কারণে কিছু বই ভিজে গেছে। প্রায় ৮ হাজার টাকার মতো লোকসান হয়েছে।
ঢাকা কমিকস প্রকাশনীর বিক্রেতা কাউসার বলেন, আমাদের বেশ কিছু বই বিক্রি হয়েছে। তবে সার্বিক মেলার যে পরিস্থিতি, বিশেষ করে বৃষ্টির কারণে সমস্যার তৈরি হয়েছে। আমাদের এখানে কাস্টমার কম। এছাড়াও মেলার অব্যবস্থাপনা দেখতে পারছি, পুরো স্টলটাই পানিতে ভিজে আছে। যেখানে দাড়িয়ে বিক্রি করছি সেখানেও গোড়ালি পর্যন্ত পানি। এই অবস্থার কারণে আমাদের এখানে কাস্টমার কম।
শিলা প্রকাশনীর বিক্রেতা এম নজরুল ইসলাম বলেন, লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এমন একটা পরিবেশ চায়। পরিবেশ ভালোই আছে, একমাত্র বৃষ্টি ও কর্দমাক্তের কারণেই পাঠক জায়গা মতো আসতে পারছে না। তাই বেচাকেনার একটু ভাটা। আবহাওয়াটা একটু ভালো হলেই পাঠক বাড়বে, বেচাকেনাও বাড়বে, আমাদের প্রত্যাশাটাও পূরণ হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা দেখতেই পারছেন, মাঠে এখনও অনেক পানি-কাঁদা। আয়োজকরা এটা বুঝতে পেরে তারা দ্রুত ইট আনার ব্যবস্থা নেয়। আমরা সবাই মিলে একটা পরিবেশ করছি। এখনও যে সময় আছে আশা করছি ইনশাআল্লাহ ভালো বিক্রি হবে।
জানতে চাইলে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইনামুল হক বলেন, আমরা আসলে খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। গতবছরও এই জায়গায় আমরা বইমেলা করেছিলাম। গতবারের তুলনায় প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি পড়েছিল, তবে একটু সমস্যা হচ্ছে বৃষ্টির জন্য মাঠে পুরোপুরি শুকায়নি। তারপরও দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় আমরা দেখতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, এখানে অনেক ক্রেতা আছে। শুধু বই দেখছে এমন না, প্রতিটি স্টলেই কিছু না কিছু বই বিক্রি হচ্ছে। আমরা প্রতিদিনই একটা রিপোর্ট রাখছি, কোন স্টলে কতটি বই বিক্রি হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, যে পরিমাণ পাঠক দেখছি, ভালো একটা বইমেলা বা ব্যবসাবান্ধব বইমেলা আমরা রাজশাহীতে পাবো।
সাখাওয়াত হোসেন/এনএইচআর/জিকেএস

7 hours ago
4









English (US) ·