চলতি মৌসুমে পান চাষে ভালো ফলন হলেও বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় পান বিক্রি করে তারা যে দাম পাচ্ছেন, তা চরমভাবে হতাশাজনক। একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং কৃষিপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর বরগুনার ছয় উপজেলায় ৪১১ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে বাম্পার। কিন্তু বাজারে পানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। এছাড়াও গত বছর ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৮৪ হেক্টর জমির পানের বরজ। এ সময় পান উৎপাদন ব্যাহত হয় ৭৩৬ টন, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা।
চাষিদের অভিযোগ, সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে কিন্তু পান বিক্রি হচ্ছে লোকসানে। এতে ধারদেনা করে আবাদ করা চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকের মতে, এভাবে দাম না পেলে আগামী মৌসুমে অনেকে পান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
সরজমিনে বরগুনা সদরের হেউলিবুনিয়া গ্রামে দেখা যায়, বরজে পাটকাঠির সাথে ঝুলে আছে চিরসবুজ পান। বরজে কাজ করছেন কৃষকসহ পরিবারের সবাই। বাম্পার ফলনে পানের চাষির আনন্দ থাকার কথা থাকলেও এখন চোখে মুখে হতাশা। দাম কম আর কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে শ্রমিক নিতে পারেন না তারা। সবশেষ ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত বরজগুলো ঠিকঠাক করার পরে এখন দাম নেই। এদিকে এনজিওর থেকে নেয়া ঋ এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুর্দশার কথা জানিয়ে হরেন সাধু নামের ষাটোর্ধ্ব এক পান চাষি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এই ব্যবসা বংশপরম্পরায় করে আসছি। এই এই পান থেকেই আমাদের সংসার চলে। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে পানের ন্যায্য দাম না থাকায় বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ এনে এখন আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এত বছর ধরে আয় হয়েছিল সবশেষ। আশায় ছিলাম পানের দাম বাড়বে, কিন্তু তা বাড়েনি। সরকারের কাছে আবেদন সরকার যেন আমাদেরকে সহযোগিতা করে।’
আরও পড়ুন
পান চাষে মন্দা, চাষিদের মন খারাপ
ঝিনাইদহের পান রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে
ভারতীয় পান আমদানিতে লোকসানের মুখে চাষিরা
টিপু সুলতান নামের আরেক চাষি বলেন, ‘এ অঞ্চলে কিছুদিন পর পর ঘূর্ণিঝড় হয়। এ সময় আমাদের বড়জ নষ্ট হয়ে যায়। এরপরে আবারও আমরা আশায় বুক বেঁধে ঠিক করি। সব ফসলেরই সরকার ভর্তুকি দেয় কিন্তু পান চাষিদের জন্য কোনো সহযোগিতাই আমরা কখনো পাই না। শুনেছি পান বিদেশে রপ্তানি করা যায়, আমাদের পান আমরা নিজ জেলায় বিক্রি করে দাম পাই না।’
হেউলিবুনিয়া এলাকার পান চাষি মো. রহিম বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পান চাষে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। কিন্তু এখন বাজারে সেই পান বিক্রি করেও অর্ধেক টাকাও তুলতে পারছি না। পাওনাদাররা চাপ দিচ্ছে, এখন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাত হচ্ছে আমাদের। বাপ দাদার এ পেশা এখন ছাড়তে হবে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

কুমড়াখালী এলাকার আর এক পান চাষি মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা আধুনিকভাবে পান চাষ করছি। কিন্তু আমাদের উৎপাদন খরচের তুলনায় আমরা ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। আমি এ বিষয়ে কৃষি অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছি, তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন মানসম্মত পান উৎপাদন হলে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। আমি সে চেষ্টা এখন করে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রথীন্দ্র নাথ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বছর বরগুনায় ৩ হাজার ৬০৪টি বরজে পানের আবাদ হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা চাষিদের আধুনিক পান চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এছাড়া আপনারা জানবেন পান খুব সংবেদনশীল একটি কৃষি পণ্য তাই প্রতিটি এলাকাতে আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। এছাড়া উৎপাদিত পান দেশের বাজারে যাতে ন্যায্য মূল্য পায় সেদিকেও আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিচ্ছি।’
নুরুল আহাদ অনিক/আরএইচ/এমএস

 6 hours ago
                        6
                        6 hours ago
                        6
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·