মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার সকাল ১০টা ৬ মিনিটে কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে মালয়েশিয়া ত্যাগ করেছেন। ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলন ও সংশ্লিষ্ট বৈঠকে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়ে তার দুই দিনের এই সফর শেষ হলো। এটি ছিল ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় প্রথম আগমন।
বিমানবন্দরে ট্রাম্পকে বিদায় জানান মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইল। এর আগে কুয়ালালামপুরে হোটেলে প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম, সাইফুদ্দিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এডগার্ড ডি. কাগানসহ মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিরা ট্রাম্পকে বিদায় জানান।
সফরের অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘কুয়ালালামপুর শান্তিচুক্তি’, যা আসিয়ান ২০২৫ সালের চেয়ারম্যান হিসেবে মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটানোর পথে এক ঐতিহাসিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
চুক্তির আওতায় গঠিত ‘আসিয়ান পর্যবেক্ষক দল’ ভবিষ্যতে সীমান্ত শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে।
ট্রাম্প এ চুক্তিতে আনোয়ারের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি সাহসী ও ঐতিহাসিক নেতা, যিনি সংলাপের মাধ্যমে দুই দেশকে এক টেবিলে আনতে পেরেছেন।’
এছাড়া আনোয়ার ও ট্রাম্পের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তারা ‘মালয়েশিয়া–যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক বাণিজ্যচুক্তি’ ও ‘সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্ব’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এই চুক্তিগুলোর লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি, জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ খাতে সহযোগিতা জোরদার করা। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আনোয়ারের রসিক মন্তব্য—‘এটা নিশ্চয়ই হোয়াইট হাউসের কলম’—উপস্থিত সবাইকে হাস্যরসে ভরিয়ে তোলে।
ট্রাম্প পরে ১৩তম আসিয়ান–যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেন, যেখানে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতি ওয়াশিংটনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এটি ‘আমেরিকার স্বর্ণযুগের অংশীদারত্ব’ হিসেবে অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা স্পষ্ট—আমরা শতভাগ আপনার পাশে আছি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দৃঢ় অংশীদার ও বন্ধু হয়ে থাকতে চাই।’
মালয়েশিয়ার নেতৃত্ব ও অগ্রগতির প্রশংসা করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মাত্র এক দিন এখানে থেকেছি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাকে সব কিছুই দেখিয়েছেন—একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’
এশিয়া সফরের প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যচুক্তিগুলো আঞ্চলিক অর্থনীতিতে বড় সুবিধা এনে দেবে।
তিনি আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নত উৎপাদন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির আগ্রহও ব্যক্ত করেন।
তার ভাষায়, ‘বিশ্ব অর্থনীতি ও সরবরাহ শৃঙ্খলে আসিয়ান এখন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।’ ট্রাম্প মালয়েশিয়া সফর শেষ করে পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে জাপান যাচ্ছেন, এরপর তিনি যাবেন দক্ষিণ কোরিয়া, যেখানে অনুষ্ঠিত হবে ২০২৫ সালের এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন ফোরাম।
এমআরএম/এএসএম

2 weeks ago
6









English (US) ·