ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এমআইএসটির সহযোগিতা চায় বেপজা

17 hours ago 5
  • শতাধিক কাভার্ডভ্যানকে অস্থায়ী গুদাম বানিয়েছে কারখানাটি
  • লে-অফ ঘোষিত কারখানা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা চলছে নিয়মিত

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) পুড়ে যাওয়া আদমস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের ঝুঁকিপূর্ণ সেই ভবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সহযোগিতা চেয়েছে বেপজা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া কাপড়সহ নানান কাঁচামালের নিরাপত্তা নিয়েও বিপাকে পড়েছে কারখানাটি।

এরইমধ্যে ভাড়ায় নেওয়া শতাধিক কাভার্ডভ্যানকে অস্থায়ী গুদাম বানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি অগ্নিদুর্ঘটনার পর কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত চালু রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে কাভার্ডভ্যানকে অস্থায়ী গুদাম বানানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এমআইএসটির সহযোগিতা চায় বেপজা

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের চারটি প্লটে আদমস (অ্যাডামস) ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলসসহ একই মালিকের দুটি কারখানা রয়েছে। অন্যটি হলো আলম হামেদি টেক্সটাইল লিমিটেড। তবে আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনটি আদমস ক্যাপের। ভবনটি বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত হতো। চারটি ফ্লোরে গুদাম ছিল। সেখানে চিকিৎসকদের গাউন তৈরি হতো।

গত ১৬ অক্টোবর দুপুরে অগ্নিকাণ্ডে কারখানার ৮ তলা ভবনের পুরোটাই পুড়ে যায়। প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর ১৭ অক্টোবর সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুরোপুরি নির্বাপণ করা সম্ভব হয়নি। এখনো ভবনটি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

আরও পড়ুন
চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানায় ভয়াবহ আগুন
১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে ইপিজেডের আগুন, দুই তদন্ত কমিটি গঠন
এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে সিইপিজেডের পুড়ে যাওয়া সেই কারখানা থেকে
নিরাপদে ১০৫০ শ্রমিক, আশপাশের ভবন রক্ষার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া ভবনটি কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভবনটির সবগুলো কাচের জানালা ও দরজা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কারখানার পাশে ১ নম্বর সেক্টরের কয়েকটি সড়কে সারি সারি দাঁড়িয়ে অসংখ্য কাভার্ডভ্যান। ভবনটির চারদিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, এই ভবনে প্রবেশ নিষেধ’ লেখা লাল ব্যানার লাগানো রয়েছে।

কারখানার মূল প্রবেশ পথে দুটি নোটিশ টাঙানো রয়েছে। একটিতে বেপজা কর্তৃক ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার কথা উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে ২২ অক্টোবর তারিখের একটি নোটিশে কারখানাটি ২৫ অক্টোবর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৫ দিনের জন্য কারখানাটি লে-অফ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। লে-অফ চলার সময়ে শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের কারখানায় উপস্থিত বা দৈনিক হাজিরা দেওয়ার প্রয়োজন নাই বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি লে-অফ চলাকালীন শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ অনুযায়ী বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এমআইএসটির সহযোগিতা চায় বেপজাচট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে আদমস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের মালামাল পাশে থাকা কাভার্ড ভ্যানে রাখা হয়েছে, ছবি: জাগো নিউজ

সরেজমিনে কথা হয় কারখানার বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী ও কাভার্ডভ্যান চালকের সঙ্গে। নিরাপত্তা কর্মীদের পোশাকে নেমপ্লেট ছিল না। তারা নিজেদের নাম বলতে রাজি নন।

কথা হলে তারা জানান, ১৬ অক্টোবর দুপুরে ভবনের সাততলার গুদামে আগুনের সূত্রপাত। ওই গুদামে কাঁচামাল, প্যাকিং ম্যাটারিয়ালসসহ কেমিক্যাল পণ্য ছিল। সবগুলোই দাহ্য পণ্য। যে কারণে আগুন দ্রুত সাততলা থেকে আটতলা, পরে পুরো ভবনে ছড়িয়েছিল। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আগুন পুরোপুরি নেভানো হয়নি। যে কারণে এখনো ভবন থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

আরও পড়ুন
বিমানবন্দরের আশপাশের ফায়ার স্টেশনে ‘ফোম টেন্ডার’ রাখার সুপারিশ
শাহজালালে আগুন: কারণ খুঁজতে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে প্রস্তাব সরকারের
এসব অগ্নিকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত: ফখরুল
চট্টগ্রামে ইপিজেডে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন দাবি

এক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, আগুন লাগার পর ভবন থেকে সব শ্রমিক বেরিয়ে যান। তবে ভবনের সাততলায় আগুন জ্বলার সময়ে নিচের ফ্লোরগুলো থেকে অনেক পণ্য উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে ওইদিন বিকেলে শিপমেন্ট হতো এমন কার্টনভর্তি তোয়ালে উদ্ধার করে পাশের একটি কারখানার গুদামে রাখা হয়েছিল। পাশাপাশি ওইদিন বন্দর থেকে আমদানির কাঁচামাল কারখানায় এলেও তা আনলোড করা সম্ভব হয়নি। দুদিন পর রপ্তানির জন্য কার্টন করা মালামাল বাদেও কারখানার অনেক যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, সুতা কাভার্ডভ্যান ভাড়া করে এনে তাতে রাখা হয়।

মঞ্জুর আলম নামে এক চালকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার পরদিন থেকে একশর বেশি কাভার্ডভ্যান এনে সেগুলোতে কারখানার অনেক মালামাল রাখা হয়েছে। গাড়িগুলো গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে গাড়িপ্রতি দৈনিক আড়াই হাজার টাকার বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।’

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এমআইএসটির সহযোগিতা চায় বেপজাচট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে পুড়ে যাওয়া আদমস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের ভবন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে, ছবি: জাগো নিউজ

এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির বিষয়ে পরবর্তী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুস সোবহান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে পুরো ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এখানে লোকজন যাতে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য ভবনটির বাইরে লাল ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কারখানার মালিকদের বলেছি, বুয়েট, চুয়েট কিংবা এমআইএসটির মাধ্যমে ভবনটি পরীক্ষা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। পরীক্ষায় ব্যবহারের উপযোগী থাকলে দ্রুত ভবন মেরামত করা কিংবা ব্যবহার উপযোগী না হলে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নিরাপদভাবে ভবনটি ভেঙে ফেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন
দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার
একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে জাতি গভীর শঙ্কায়: রিজভী
নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেলে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে সরকার
ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান এফবিসিসিআইয়ের
চট্টগ্রাম ইপিজেডে আগুন/নিরাপদে ১০৫০ শ্রমিক, আশপাশের ভবন রক্ষার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস

কারখানার পণ্য কাভার্ডভ্যানে রাখার বিষয়ে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ওখানে একই মালিকের আরও একটি কারখানা রয়েছে, যেটির ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কাভার্ডভ্যানে রাখা মালামালগুলো ওই ভবনের গোডাউনে নেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’

তবে কারখানা লে-অফকালীন শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিইপিজেডের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভবনটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এমআইএসটিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেবেন।’

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এমআইএসটির সহযোগিতা চায় বেপজাচট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে পুড়ে যাওয়া আদমস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের ভবন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে, ছবি: জাগো নিউজ

এ ব্যাপারে গত শুক্রবার বিকেলে কথা হয় আদমস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স ইনচার্জ মো. আবদুল্লাহর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

কারখানার মালামাল কাভার্ডভ্যানে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মালামাল কাভার্ডভ্যানে রাখা হয়নি। তথ্যটি সঠিক নয়।’

এমডিআইএইচ/এমএমএআর/এমএফএ/এএসএম

Read Entire Article