খুলনা বেড়েছে চিংড়ির রপ্তানি

16 hours ago 7

খুলনা জেলায় চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে। বিগত বছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এ জেলা থেকে প্রায় ৪ হাজার ৬১ টন চিংড়ি বেশি রপ্তানি হয়েছে। ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে সফলতার কারণেই চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে বলে জানান মৎস্য চাষিরা।

তারা বলেন, ক্লাস্টার পদ্ধতির মতো আরও নতুন আধুনিক পদ্ধতির প্রশিক্ষণ, সরকারি উদ্যোগ এবং সহায়তা মৎস্য চাষিদের প্রয়োজন। তাহলে মৎস্য উৎপাদনও তুলনামূলক বৃদ্ধি করা সম্ভব।

খুলনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে, খুলনা জেলায় ২০২৩-২৪ সালে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৫৫৭ টন এবং গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ২০২ টন। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাগদা চিংড়ি ১২ হাজার ৫৪৩ টন এবং গলদা চিংড়ি ১৩ হাজার ৮৭৮ টন উৎপাদন হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রপ্তানি হয়েছে ১৫ হাজার ৪৫০ টন চিংড়ি এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১৯ হাজার ৫১২ টন। হিসেবে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬১ টনে।

সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রকল্প সূত্রে, খুলনার কয়রা, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, তেরোখাদা, দিঘলিয়া, বটিয়াঘাটা এবং দাকোপে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্প ছয় বছর ধরে চলেছে। ২০২৫ সালে এ প্রকল্প সমাপ্ত হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্লাস্টার পদ্ধতির কাঠামো হলো চিংড়ি পরিবহন, বাজারে সঠিক সময়ে চিংড়ি পাঠানো, চিংড়ি চাষে সমস্যা নিরসন এবং চাষ পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন করা। এ পদ্ধতিতে ২৫টি চিংড়ি ঘেরে চিংড়ি চাষ করা হয়েছে।

একজন মৎস্য চাষিকে প্রতিদিন ১০-১৫ কেজি মাছ শহরের বাজারে কিংবা কোম্পানিতে পাঠাতে হিমশিম খেতে হয়। অল্প মাছের জন্য বড় কোনো পরিবহন ভাড়া করে সঠিক সময়ে মাছ পরিবহনও কঠিন ছিল। কিন্তু ২৫টি ঘেরের মাছ সংগ্রহ করে সম্মিলিতভাবে পরিবহন ভাড়া করে সঠিক সময়ে বাজার কিংবা কোম্পানিতে পাঠানো সহজ। এতে পরিবহন খরচ সাশ্রয় করে এবং তাজা মাছের লাভজনক দাম পেয়েছে চাষিরা। এজন্য মৎস্য চাষিরা ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে তাজা চিংড়ি সরবরাহের মাধ্যমে চিংড়ি রপ্তানিতে ভূমিকা রেখেছে।

ডুমুরিয়া উপজেলার মৎস্য চাষি হামিদুল ইসলাম বলেন, চিংড়ি মাছের ঘেরের পিছনে একটা সময় অনেক টাকা ব্যয় করতাম কিন্তু লাভ করতেই কষ্ট হতো। মাছ বড় হওয়ার আগেই অনেক মাছ মারা যেত। তবে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে লাভ হচ্ছে। আমরা একসঙ্গে ২৫টি ঘের আমরা পাশাপাশি রেখে চিংড়ি চাষ করছি।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন মাছ ধরার পর ২৫টি ঘেরের মাছ একত্রিত করে আমরা পিকআপে কিংবা পরিবহনে করে শহরে পাঠাই। সঠিক সময়ে মাছ পাঠালে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। এখন পরিবহন খরচও কম হয়। তবে মৎস্য চাষের আরও নতুন আধুনিক প্রশিক্ষণ আমাদের মৎস্য চাষ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে।

দাকোপ উপজেলার মৎস্য চাষি সুবির রঞ্জন বলেন, এ অঞ্চল থেকে খুলনা শহরে মাছ পরিবহনে জটিলতা ছিল। সকালে মাছ ধরলে শহরে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যেতো। ফলে অনেক মাছ কোম্পানিগুলো নিতো না। খুচরা বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হতো। তবে ক্লস্টার পদ্ধতির কারণে এখন মাছ চাষে এবং পরিবহনে লোকসান গুনতে হয় না।

তিনি আরও বলেন, শুনলাম প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। তবে চিং চাষে আমাদের আরও আধুনিক প্রশিক্ষণ দরকার। এখনকার সময়ে প্রশিক্ষণ না থাকলে এ ধরনের বড় উদ্যোগে মাছ চাষ সম্ভব না। মাছ চাষে লাভ না হলে মাছ চাষিদের অভাবে থাকতে হবে।

বটিয়াঘাটা উপজেলার মৎস্য চাষি কামরুল বলেন, মাছ ধরার পর দ্রুত পচনরোধ করতে না পারলে মাছের দাম পাওয়া যায় না। পরিবহনে একটা ভালো সমস্যা ছিল। অল্প মাছের জন্য অনেক ব্যয়ে পরিবহন ভাড়া করাও কঠিন ছিল। তবে মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় আমাদের মৎস্য পরিবহন এবং চাষ পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন আনতে পেরেছি। কিন্তু নিম্ন অঞ্চলের চাষিদের আরও প্রশিক্ষণ দরকার। লাখ টাকার মাছ চাষ করেও এখন অনেকে লোকসানের কারণে অভাবে দিন কাটাচ্ছেন।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, খুলনা জেলায় মৎস্য রপ্তানি বেড়েছে। ক্লাস্টার পদ্ধতিতে মাছ চাষ পদ্ধতির প্রকল্পটি শেষ হলেও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা মৎস্য চাষিদের পরামর্শ দেয়ার মাধ্যমে সার্বিক সহযোগিতা করছেন। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যেও আমরা কাজ করছি।

আরিফুর রহমান/এনএইচআর/জেআইএম

Read Entire Article