গণভোট নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের টানাটানি, নির্দেশনার অপেক্ষায় ইসি

12 hours ago 4

বাংলাদেশে সর্বশেষ গণভোট হয়েছিল ১৯৯১ সালে। এখন জুলাই জাতীয় সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে ৩৪ বছর পর ফের আলোচনায় এসেছে এ ভোটাভুটি। বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে গণভোট চায়, অন্যদিকে তাদের দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী সেই নির্বাচনের আগে চলতি নভেম্বর মাসেই গণভোট চায়।

গণভোট নিয়ে এক ধরনের টানাটানি শুরু করেছে বর্তমানে বৃহৎ দুটি দল এবং তাদের সঙ্গে থাকা দলগুলো। অথচ গণভোটে আদৌ হবে কিনা না এই বিষয়ে কিছুই জানে না নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (ইসি)। গণভোট আগে হবে নাকি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হবে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না ইসি। গণভোট নিয়ে এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে তারা। গণভোট আয়োজনের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ইসিকে কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি।

গণভোট আয়োজন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমি অতীতেও বলেছি, আজকেও বলছি, গণভোট সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনে বা ইসি সচিবালয় পর্যায়ে এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা বা আলোচনা পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গণভোটের বিষয়ে সরকার থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা কমিশন বা সচিবালয় লেভেল থেকে পাইনি। ফলে ইসি আগের অবস্থায় রয়েছে, মানে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, গণভোট কখন হবে, সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে হবে, নাকি পৃথকভাবে হবে, তা নির্ধারণ করবে সরকার। সরকার তার নির্দেশনা দিলেই প্রস্তুতি নেবে ইসি। সরকারের সিদ্ধান্ত ছাড়াই ইসির কয়েকটি সভায় গণভোটের বিষয়টি উঠে আসে। সরকার গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিলে কী কী কাজ করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আরও পড়ুন
বিএনপি ১০০ বছরেও গণভোট ঠেকাতে পারবে না: পাটওয়ারী
গণভোটের চেয়ে আলুচাষিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা বেশি জরুরি
এই মাসেই গণভোট দিন, টালবাহানা করবেন না: এটিএম আজহারুল
গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে

তখন কমিশন জানায়, গণভোটের জন্য বাড়তি অর্থ প্রয়োজন হবে। এজন্য টাকা ছাড় করতে অর্থ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গণভোটের জন্য অতিরিক্ত ভোটকক্ষের প্রয়োজন হবে, এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র এরই মধ্যে নির্ধারণ করেছে ইসি। গণভোট একসঙ্গে হলে ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া পৃথকভাবে ভোট হলে গণভোটের জন্য বাড়তি ব্যয়ও হবে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গণভোট আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। তাদের বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি হয়েছে।

ইসি বলছে, একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হলে ভোটকেন্দ্র এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাড়বে। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে হবে। আর পৃথক দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের আয়োজন করলে দুই নির্বাচনের যে ব্যয় সে অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

গত ৩১ অক্টোবর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। সভায় অন্যদের মধ্যে আরও ছিলেন শিক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগসহ ৩১টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রধানেরা।

সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন ও নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ গণভোটের বিষয়ে বক্তব্য দেন। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তারা বলেন, গণভোট নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমাদের কাজ হচ্ছে সুষ্ঠুভাবে তা সম্পন্ন করা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে নাকি পৃথক দিনে হবে তা নির্ধারণ করবে সরকার।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করলে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে যাবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র হবে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও আসা-যাওয়ার রাস্তা মেরামত করার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।

তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে উদ্দেশ করে বলেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে ব্যয়ের টাকার সংস্থান করতে হবে, যেন যথাসময়ে অর্থছাড় করা যায়।

জণগণের মতামত যাচাইয়ে গণভোটে যে প্রশ্ন থাকতে পারে

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে গণভোটে চারটির বেশি প্রশ্ন রাখার চিন্তা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাসহ যেসব মৌলিক প্রস্তাবে বড় দল বিশেষ করে বিএনপির ভিন্নমত আছে, সেগুলো নিয়ে আলাদা কয়েকটি প্রশ্ন থাকতে পারে। সব মিলিয়ে গণভোটে চার-পাঁচটি প্রশ্ন রাখতে পারে সরকার।

আগের তিন গণভোট

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেওয়ার পদ্ধতিই হলো গণভোট। এর মাধ্যমে তাদের কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চূড়ান্তভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের জন্য উপস্থাপিত হয়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত তিনবার যথাক্রমে ১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে গণভোট হয়েছে।

প্রথম গণভোট

১৯৭৭ সালের ৩০ মে প্রথমবার গণভোট হয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তার অনুসৃত নীতি ও কর্মপন্থার প্রতি জনগণের মতামত যাচাইয়ের জন্য। প্রদত্ত ভোটের ৯৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ এবং ১ দশমিক ১৩ শতাংশ ‘না’ ভোট পড়ে।

আরও পড়ুন
গণভোট সংবিধানে নেই, কথায় কথায় রাস্তায় নামবেন না: আমীর খসরু
যতই চালাকি করা হোক না কেন, আগে গণভোট তারপর জাতীয় নির্বাচন: তাহের
গণভোট না হলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: গাজী আতাউর
১০-১৫টি আসনের আশ্বাস পেলে কেউ কেউ গণভোটের দাবি থেকে সরে যাবে: নুর

দ্বিতীয় গণভোট

দ্বিতীয়বার ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ গণভোট হয়। বিষয় ছিল রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অনুসৃত নীতি ও কর্মপন্থার প্রতি আস্থা এবং স্থগিত সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত তার রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকা। মূলত সামরিক শাসকের বৈধতা দেওয়ার জন্য এ গণভোট হয়। প্রদত্ত ভোটের ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ আর সাড়ে ৫ শতাংশ ‘না’ ভোট পড়ে।

তৃতীয় গণভোট

১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ১৪২ (১ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তৃতীয়বারের মতো গণভোট হয়। জনগণের সামনে প্রশ্ন ছিল- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান (দ্বাদশ সংশোধন) বিল, ১৯৯১-এ রাষ্ট্রপতির সম্মতি দেওয়া উচিত কি না? এ প্রশ্নের মাধ্যমে মূলত জনগণের কাছে ভবিষ্যতে দেশে কোন ধরনের সরকার পদ্ধতি হবে তা উপস্থাপিত হয়। এতে ‘হ্যাঁ’ ভোট ৮৪ শতাংশ ও ‘না’ ভোট ছিল ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।

প্রয়োজন আইন সংশোধন

সংসদবিষয়ক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট দেওয়াই হচ্ছে এখন সবচেয়ে সহজ উপায়।

অধ্যাপক নিজাম বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করতে পারবেন না। গণভোট করতে গিয়ে তো সংবিধান সংশোধন করছেন না। জনগণের কাছে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবনা রাখছেন। জনগণ এ প্রস্তাবনা গ্রহণ করলে তাহলে পরবর্তী সংসদে হবে। জনরায় হিসেবে গণভোট হবে। অতএব, এর মধ্যে কোনো বাধা নেই।’

গণভোটের বিধান ফেরানোর রায় এ বছর এসেছে। সরকার চাইলে জনমত যাচাইয়ের জন্য গণভোট করতে পারে। মানুষ সায় দিলে নতুন সংসদ এলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সংশোধনীগুলো আনা হবে।

নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘স্পেসিফিক চারটি আর্টিকেলের বিষয়ে গণভোটের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনগত কোনো বাধা নেই। গণভোট করতে পারবেন। হাইকোর্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত মামলার রায়ে গণভোট ফেরানোর কথা রয়েছে। গণভোট করতে হলে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন করতে হবে। ইলেকশন কমিশনকে বলতে হবে গণভোট করেন।’

অধ্যাপক নিজাম সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করার পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, কেন দুই মাসের মাথায় কোটি কোটি টাকা খরচ করা হবে, এত ব্যয় করার মানে হয় না।

গণভোট নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের টানাটানি, নির্দেশনার অপেক্ষায় ইসি

সংকট থেকে উত্তরণে গণভোট একটি ভালো উদ্যোগ জানিয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, এটি করতে ১৯৯১ সালের গণভোট আইন ও গণভোট বিধি রয়েছে; তা সংশোধন করলেই হয়ে যাবে।

পৃথিবীর অনেক দেশেই সাধারণ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট হয়ে থাকে জানিয়ে অধ্যাপক নিজাম বলেন, ‘একসঙ্গে হলে মানুষের কনফিউজ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সাধারণ মানুষ ইউপি নির্বাচনে তিনটি ব্যালটে ভোট দিতে অভ্যস্ত; এখানে দুটি ব্যালট হবে। গণভোট করতে কোনো বাধা দেখছি না আর। প্রয়োজন হলে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ করলেই হবে; সংবিধান সংশোধন করতে হবে না এজন্য।’

সর্বশেষ অভিজ্ঞতা

ইসির সাবেক কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ ১৯৯১ সালে গণভোট আয়োজনে যুক্ত ছিলেন। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় ফেরা নিয়ে এ গণভোট হয়। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট হয়। তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক ছিলেন। গণভোটে মানুষের আগ্রহ থাকে খুব কম। উপস্থিতি খুবই কম থাকে, যদিও ফলাফল একটু অন্যরকম আসে। ওই সময়ের খবরের কাগজ দেখেন, উপস্থিতি কম ছিল। তবে গণভোটের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলাসহ নানা ধরনের কিছু তো হয় না। ফলে যে ফলাফল আসে তাই ফাইনাল।

তিনি জানান, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে গণভোট হয়েছিল। গণভোট আইন, বিধি মেনে নির্বাচনটি করা হয়। এমন ভোট সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে করতে গেলে ভালো হয়। জাতীয় নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রে যে ব্যালট বাক্স লাগবে, তার সমান ব্যালট বাক্স লাগবে গণভোটে।

সাবেক এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যে গণভোট করলাম সেটা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকারে যাওয়ার বিষয়ে। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট হলো। সেখানে কোনো প্রার্থী নেই, ভোটার স্লিপ দেওয়া হয় না; ভোটারদের সম্মানের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এজন্য ভোটাদের আগ্রহ, উপস্থিতি ছিল খুব কম। এবার রাজনৈতিক দল সহায়তা করলে হয়তো উপস্থিতি বাড়তে পারে।’

আরও পড়ুন
নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ এখন আর নেই: ফখরুল
জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি না বিএনপি: হামিদুর রহমান
গণভোট নিয়ে দলগুলোকে আলোচনায় বসার আহ্বান সরকারের
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অবিলম্বে গণভোট আয়োজনের দাবি জাকসুর

দরকার প্রচার

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম জানান, গণভোট আর সংসদ নির্বাচন দুটি দুই জিনিস, আলাদা ব্যালট পেপার হবে। এজন্য নির্বাচন কমিশনকে দুই রকমের ব্যালট পেপার প্রস্তুত ও ব্যালট বাক্স আলাদা করতে হবে।

তিনি বলেন, সবশেষ ১৯৯১ সালে দেশের মানুষ গণভোট দিয়েছে। এরপর ভুলে গেছে এ জিনিস। গণভোট নিয়ে সাধারণের ধারণা, জ্ঞানে একটা শূন্যতা রয়েছে এত বছরের। কাজেই গণভোট কী, কেন এটা নিয়ে ব্যাপক প্রচার, সিভিক এডুকেশন দরকার পড়বে। প্রচার না করলে যতটুকু জ্ঞান দরকার ভোট প্রয়োগ করতে, তা আর হবে না।

এ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ জানান, ব্যালট পেপার ছাপা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং ভোটারদের এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা- এসবই কমবেশি চ্যালেঞ্জিং কাজ। খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত হলে তাহলে ইসির জন্য বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে না। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনটি ব্যালট পেপারে ভোট করা ও ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাতে এবার গণভোট হলে ভোটারদের বোঝাতে সমস্যা হবে না।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের এ সদস্য বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হলে, গণভোটে সবাই এখন রাজি। কোন সময় হবে সেটা নিয়ে ভিন্নমত আছে। খুব গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঐকমত্য; দলগুলো ঐকমত্য হলে এ সময়ে গণভোট করবো; তাহলে আর কোনো চ্যালেঞ্জ থাকে না।’

গণভোটের পূর্বাপর

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, এটি মূলত জনমত যাচাইয়ের একটি পদ্ধতি, যা বহু বছর আগে থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে গণভোটের বিধানটি আগামী সংসদে উত্থাপন করে পাস করানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের আদি অর্থাৎ ৭২-এর সংবিধানে গণভোটের বিধান ছিল না। ১৯৭৯ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনী সংবিধানে যুক্ত করেন। এর মাধ্যমে সংবিধান-সংশোধন সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদে (১ক) দফা যুক্ত করা হয়, যাতে বলা হয়: ‘(১) দফায় যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও এই সংবিধানের প্রস্তাবনা অথবা ৮, ৪৮, ৫৬, ৫৮, ৮০ বা ৯০ক অনুচ্ছেদ অথবা এই অনুচ্ছেদের কোনো বিধানাবলির সংশোধনের ব্যবস্থা রহিয়াছে এরূপ কোনো বিল উপরিউক্ত উপায়ে গৃহীত হইবার পর সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হইলে উপস্থাপনার সাত দিনের মধ্যে তিনি বিলটিতে সম্মতিদান করিবেন কি করিবেন না এই প্রশ্নটি গণ-ভোটে প্রেরণের ব্যবস্থা করিবেন।’

এছাড়া পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোট সম্পর্কিত (১খ), (১গ) এবং (১ঘ) যুক্ত করা হয়। পরে ১৯৯১ সালে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী গৃহীত হয়, যার মাধ্যমে ১৪২ অনুচ্ছেদের (১ক) সংশোধন করে ৫৮, ৮০ ও ৯০ক অনুচ্ছেদ সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়। অর্থাৎ সংবিধানের প্রস্তাবনা, অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮ বা ৫৬ সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোট অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলক করা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৪২ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়। তবে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী মামলায় ১৪২ ধারাটি বাতিল ঘোষণা করে আদালত গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনেন। তবে আদালতের রায়ে গণভোটের বিধানটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল হওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা, জেনারেল ক্লজেস অ্যাক্ট ১৮৯৭-এর ৬ ধারা অনুযায়ী কোনো আইনকে পুনর্জীবিত করতে হলে সংসদে আইনটি পাস করানোর দরকার হবে বলে জানায় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

এমওএস/এমএমএআর/এএসএম

Read Entire Article