ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পরও অসংখ্য ইসরায়েলি সেনা এখনো যুদ্ধের ভয়াবহ মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। অনেকেই ঘুমহীনতা, ভয়, বিষণ্নতা ও পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) আক্রান্ত। কেউ কেউ এমনকি আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি সেনা মানসিক আঘাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা ইসরায়েলের ৮০ বছরের ইতিহাসে সব যুদ্ধ মিলিয়ে এমন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত মোট সেনার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুদ্ধের আগে প্রতি বছর গড়ে ১৩ জন সেনা আত্মহত্যা করতেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর এই সংখ্যা বেড়ে ২১ জনে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত আরও ২৭৯ জন সেনা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, যদিও তারা বেঁচে গেছেন।
এই হিসাবের বাইরে রয়েছেন তারা, যারা অবসরের পর আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।
গাজা থেকে ফেরত আসা বহু সেনা জানিয়েছেন, যুদ্ধের স্মৃতি তাদের দৈনন্দিন জীবনে তাড়া করে ফেরে। কেউ কেউ ঘুমাতে পারেন না, কেউ আবার সামান্য শব্দ শুনলেই চমকে ওঠেন। একজন সাবেক সেনা বলেন, যখন পাশে কোনো ড্রোন বা বিমান উড়ে যায়, শরীর জমে যায় আতঙ্কে। মনে হয়, আমি আবার যুদ্ধক্ষেত্রে।
এই অবস্থায় অনেক সাবেক সেনা থেরাপি নিচ্ছেন—কেউ প্রাণীর সংস্পর্শে এসে, কেউ আবার বিশেষ থেরাপি সেন্টারে। ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের ‘ব্যাক টু লাইফ’ নামের এক খামারে এমন শতাধিক সাবেক সেনা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানে আহত বা ট্রমাগ্রস্ত সেনারা প্রাণীদের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি খুঁজে নিচ্ছেন।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন বিভাগের উপমহাপরিচালক লিমোর লুরিয়া বলেন, মানসিক আঘাতের গভীরতা এখন সমাজ উপলব্ধি করছে। আগের প্রজন্ম সাহায্য নিতে ভয় পেত, কিন্তু নতুন প্রজন্ম ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
সরকার এখন সেনাদের জন্য শত শত মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রেই থেরাপি সহায়তা পাঠানো হচ্ছে, এবং মানসিক সহায়তার হটলাইন চালু করা হয়েছে।
ট্রমা থেরাপি বিশেষজ্ঞ টুলি ফ্লিন্ট মনে করেন, এই যুদ্ধের দীর্ঘ মেয়াদ ও পুনঃমোতায়েন সেনাদের শারীরিক ও মানসিক পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত করছে। যুদ্ধের পর যদি সেনাদের যথাযথ চিকিৎসা না দেওয়া হয়, তারা নিজেদের, পরিবারের ও সমাজের ওপর একধরনের বোঝা হয়ে উঠবেন।
ফ্লিন্ট আরও বলেন, অনেকে ‘নৈতিক আঘাতেও’ ভুগছেন। তারা নিজেদের প্রশ্ন করেন, ‘যা দেখেছি, যা করেছি, তারপর আমি কে?’
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, সেনাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এখনো সামাজিকভাবে কলঙ্কিত বিষয়। তাই সরকার সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম প্রচারণা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেছে।

3 hours ago
6








English (US) ·