বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দর এদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর। স্বাভাবিকভাবেই এই বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, অতীতে বহু দুস্য জাতি এই বন্দর দখল করে আমাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিল। বহুকাল থেকেই এই বন্দরকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। বন্দর উন্নয়নের নামে কোনো ধরনের প্রকাশ্য দরপত্র ছাড়াই আন্তর্জাতিক শক্তির কাছে এই বন্দর ইজারা দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। এই বন্দর শুধু দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি নয় বরং এ বন্দরের সঙ্গে এদেশের ও জাতির নিরাপত্তা জড়িত। সুতরাং এই বন্দর নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র আমরা বরদাস্ত করবো না।
শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) আন্তর্জাতিক দরপত্র ছাড়া বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে লুৎফর রহমান এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরীর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন নগর ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ নুরুন্নবী, ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মজুমদার, পাঠাগার সম্পাদক ইঞ্জি. সাইফুল ইসলাম, বন্দর ইসলামি শ্রমিক সংঘের সভাপতি মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক মুহাম্মদ ইয়াছিন, বন্দর থানা সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম আদনানসহ বিভিন্ন থানা ও সেক্টরের নেতারা।
এস এম লুৎফর রহমান বলেন, উন্নয়নের ধোঁয়া তুলে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। তারা আমাদের বলতে চায় আমরা নাকি উন্নয়ন চাই না। আমরা উন্নয়ন চাই তবে সেই উন্নয়ন কোনোভাবেই এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে নয়। এ বন্দরকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার একটি বিদেশি শক্তির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। সেই স্বৈরাচারের দোসররা শেখ হাসিনার অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার জন্য তড়িঘড়ি করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বন্দর করার জন্য জাতির সামনে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দিতে হবে।
তিনি বলেন, এই বন্দরে হাজারো শ্রমিক নিয়োজিত। বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে এই শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার ন্যায্য অধিকার হরণ করেছে। আমরা অবিলম্বে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এই বন্দর একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। বন্দরকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান করার নেপথ্য থেকে কাজ করে শ্রমিকরা। অথচ, কথায় কথায় শ্রমিকদের ওপর জুলুমের স্টিমরোলার চালানো হয়। শ্রমিকরা তাদের অধিকারের কথা যেন না বলতে পারেন সেজন্য তাদের সভা সমাবেশের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের সব ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। শ্রমিকদের রক্ত ঘামে বন্দর পরিচালিত হয়। তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। তাদের দাস ভাবলে হবে না। শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। আপনারা দেশের স্বার্থে কাজ করুন। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আপনাদের সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু কোনো দেশবিরোধী তৎপরতা এই সংগঠন কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
মানববন্ধনে শ্রমিক নেতারা নিম্নোক্ত দাবিগুলো জানান-
১. বন্দরের কর্মরত শ্রমিকদের আইডি কার্ড থেকে মালিকের নাম প্রত্যাহার করতে হবে।
২. কন্টেইনার ডেলিভারি শ্রমিকের মজুরি GCB এর সমান CCT, NCT-তে দিতে হবে।
৩. এপ্রেইজ কন্টেইনার শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি প্রাপ্যতা অনুযায়ী দিতে হবে।
৪. লেসিং আনলেসিং শ্রমিকদের ডক শ্রমিকদের মতো কন্টেইনার ওঠানামা বোনাস দিতে হবে।
৫. শ্রমিকদের অবসরকালীন ভাতা এককালীন ৬০ লাখ টাকা দিতে হবে।
৬. পোর্ট ডিউটি, ঝুঁকিভাতা, গৃহ নির্মাণ ঋণ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এমআরএএইচ/এএমএ/জিকেএস

4 days ago
6








English (US) ·