চাকরির ইন্টারভিউতে যে ১২টি সাধারণ ভুল আমরা করি
ইন্টারভিউর দিন সবকিছু ঠিকঠাক মনে হলো। কথা ভালো হলো, হাসিও ঠিকঠাক বিনিময় হলো। তবুও ফোনটা আর বাজল না? হতে পারে সমস্যা আপনার দক্ষতায় নয় বরং কিছু ছোট ছোট ভুলে যা আপনি নিজেই খেয়ালই করেননি। এই ভুলগুলো প্রায় সব প্রার্থীরই হয়ে থাকে, এমনকি অনেক অভিজ্ঞ পেশাজীবীরও।
আরও পড়ুন : দিনে আধা ঘণ্টা ব্যয় করে যেভাবে শিখতে পারেন ইংরেজি
আরও পড়ুন : ৩০ দিন ভাত-রুটি ছাড়লে যে পরিবর্তন আসবে
নিচে রইল এমন ১২টি সাধারণ ভুল ও সেগুলো ঠিক করার সহজ উপায়, যাতে পরের বার ‘আমরা আপনাকে নিয়োগ দিতে চাই’ কথাটা সত্যিই শোনেন আপনি।
কোম্পানি বা কাজ সম্পর্কে না জেনে ইন্টারভিউতে যাওয়া
কোনো কোম্পানি সম্পর্কে না জেনে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়া মানে পড়া না করে পরীক্ষায় বসা।
সমাধান: কোম্পানির ওয়েবসাইট ঘেঁটে ইতিহাস, মূল্যবোধ, ও পদের কাজ সম্পর্কে জানুন। চাইলে দু-একটা বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন প্রস্তুত রাখুন—এতে বোঝা যাবে আপনি সত্যিই আগ্রহী।
পোশাক বা আচরণে প্রফেশনাল না হওয়া
ভালো পোশাক, সময়মতো পৌঁছানো ও সম্মানজনক ব্যবহার—এগুলো অনেক কিছু বলে দেয়।
সমাধান: কোম্পানির সংস্কৃতি অনুযায়ী পরিপাটি পোশাক পরুন। অনলাইন ইন্টারভিউ হলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন ও সঠিক ভঙ্গিতে বসুন।
শরীরের ভাষায় নেতিবাচক সংকেত দেওয়া
চোখে চোখ না রাখা, কুঁজো হয়ে বসা বা হাত গুটিয়ে রাখা—এগুলো আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখায়।
সমাধান: আয়নার সামনে প্র্যাকটিস করুন। হাসুন, চোখে চোখ রাখুন, ও খোলা ভঙ্গিতে বসুন।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা একেবারে আগ্রহহীন থাকা
‘সব জানি’ ভাব দেখালে সেটা অহংকার মনে হয়। আবার একদম উদাসীন থাকলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সমাধান: আত্মবিশ্বাসী হন, তবে বিনয়ী থাকুন। যা জানেন না, সোজা বলে দিন—আমি শিখতে ও জানতে আগ্রহী।
লম্বা বা এলোমেলো উত্তর দেওয়া
অতিরিক্ত কথা বললে ইন্টারভিউয়ার বিরক্ত হতে পারেন।
সমাধান: উত্তর দিন STAR পদ্ধতিতে - Situation, Task, Action, Result। এতে উত্তর হবে সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট ও প্রভাবশালী।
প্রশ্ন না করা, বা ভুল প্রশ্ন করা
ইন্টারভিউ শেষে কিছুই না জিজ্ঞেস করলে মনে হতে পারে আপনি আগ্রহী নন।
সমাধান: টিম, পদের লক্ষ্য বা চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রশ্ন করুন। বেতন বা ছুটির প্রসঙ্গ তুলবেন না—ওটা তারা তুললেই আলোচনা করুন।
আগের অফিস বা বসকে দোষ দেওয়া
‘আমার আগের বস ভালো ছিলেন না’—এ কথাটাই অনেক সময় বিপদ ডেকে আনে।
সমাধান: নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে শেখার অভিজ্ঞতা হিসেবে তুলে ধরুন। যেমন: আগের চাকরিতে যোগাযোগের কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল, যা আমাকে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে শিখিয়েছে।
ব্যক্তিগত গল্পে বেশি চলে যাওয়া
ইন্টারভিউ কোনো গল্পের আসর নয়। ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বললে অপ্রফেশনাল শোনায়।
সমাধান: ব্যক্তিগত বিষয় বলবেন কেবল তখনই, যখন তা কাজের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। অন্যথায় সংক্ষিপ্ত থাকাই ভালো।
ইন্টারভিউয়ারের এনার্জির সঙ্গে তাল না রাখা
যিনি কথা বলছেন, তার টোন এক রকম—আর আপনি পুরোপুরি অন্য মেজাজে —এতে সংযোগ তৈরি হয় না।
সমাধান: তার টোন ও ভঙ্গি খেয়াল করুন এবং সামান্য মিলিয়ে নিন, তবে নিজের স্বাভাবিকতা বজায় রাখুন।
ধন্যবাদ না জানানো বা অনুসরণ না করা
ইন্টারভিউ শেষে কিছু না বলা মানে সুযোগটা হারানো।
সমাধান: একই দিন বা পরদিন ধন্যবাদ ইমেল পাঠান। কথোপকথনের কোনো বিষয় উল্লেখ করে লিখুন, যাতে বোঝা যায় আপনি মনোযোগী ছিলেন।
নোট না নেওয়া বা অতিরিক্ত জার্গন ব্যবহার করা
ইন্টারভিউতে কিছু নোট নেওয়া প্রফেশনাল ইমপ্রেশন দেয়। কিন্তু জটিল টেকনিক্যাল শব্দে ভরা উত্তর দিলে সেটি কৃত্রিম লাগে।
সমাধান: সহজ, স্বাভাবিক ভাষায় কথা বলুন। মনোযোগী হয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য নোট করুন।
বেতনের কথা বা অপ্রাসঙ্গিক আলাপ তোলা
শুরুতেই বেতনের প্রসঙ্গ তোলা মানে খাবার আসার আগেই বিল চাইতে চাওয়া।
সমাধান: ইন্টারভিউয়ার যখন বিষয়টা তুলবেন, তখনই আলোচনা করুন। হালকা কথাবার্তা রাখুন, কিন্তু সীমা মানুন।
আরও পড়ুন : শিশু বারবার ঘামছে? চিন্তার কারণ নয়, তবে সতর্ক থাকা জরুরি
আরও পড়ুন : ঘরোয়া উপায়ে দূর করুন আঁচিল
এই ভুলগুলো আপনার যোগ্যতা কমিয়ে দেয় না, তবে ইমপ্রেশন নষ্ট করতে পারে। ইন্টারভিউ মূলত উপস্থাপনার বিষয়। কীভাবে আপনি নিজেকে তুলে ধরছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো ঠিক করে নিলেই আপনি হবেন আত্মবিশ্বাসী, প্রফেশনাল, আর স্মরণীয়—ঠিক সেই প্রার্থী, যাকে কোম্পানি ‘হ্যাঁ’ বলতে দেরি করবে না।

5 hours ago
5








English (US) ·