চার ডাক্তার দিয়ে চলছে ২ লাখ মানুষের হাসপাতাল!

2 weeks ago 9

নানা সংকটে জর্জরিত বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক ও জনবল সংকট, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতির কারণে এখানে স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের প্রায়ই ফিরতে হচ্ছে হতাশা নিয়ে।

সরজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ধারণ ক্ষমতা ৫০ শয্যা হলেও প্রতিদিন ভর্তি থাকে একশ থেকে দেড়শ রোগী। অতিরিক্ত চাপে বেড না পেয়ে ফ্লোরেই চলছে চিকিৎসা। অনেক সময় ফ্লোরেও জায়গা মিলছে না। হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দেয়ালে বড়ো বড়ো ফাটল। বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই কার্যক্রম চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তীব্র জনবল সংকটেও ভুগছে প্রতিষ্ঠানটি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ১৯৭৬ সালে নির্মিত শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট ভবনটি। পরে ২০১১ সালে আরও ১৯ শয্যায় উন্নতি করে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালটিতে চিকিৎসকসহ প্রথম শ্রেণির ২৬টি পদের ১৮টি শূন্য পদ রয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির ৮১ পদের মধ্যে ৩২টি, চতুর্থ শ্রেণির ২০ পদের মধ্যে ৭টি পদ শূন্য রয়েছে।

চার ডাক্তার দিয়ে চলছে ২ লাখ মানুষের হাসপাতাল!

সহকারী সার্জনের পদ রয়েছে ৫ জনের, আছে মাত্র ২ জন। জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১১ পদের বিপরীতে নেই একজনও। নেই কোনো আবাসিক মেডিকেল অফিসার। মেডিকেল অফিসার (হোমিওপ্যাথিক) পদটিতে একজন কাগজে কলমে থাকলেও তিনি প্রেষণে রয়েছেন মঠবাড়িয়া। এছাড়া মেডিকেল ফিজিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল ল্যাব টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল, ফার্মাসিস্ট, কম্পিউটার অপারেটর ও প্রধান সহকারী পদগুলোও শূন্য রয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব আসমা বেগম দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ডাক্তার দেখালেও ফিরেছেন হতাশা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার মেলা রোগ, শুনিছি একেক রোগের একেক ডাক্তার, কিন্তু এহেনে একজন ডাক্তারই সব দেখাইছে। পরে ওষুধ নিতে যেয়ে শুনি হাসপাতালের ফার্মেসিতে তেমন কোনো ওষুধ নেই। বেশিরভাগ বাইরে দিয়ে কিনতে হবে। কিনবো কীভাবে? আমার কাছে তো টাকা নাই’।

আরও পড়ুন
৬ মাস বন্ধ এক্সরে, মাঝেমধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন চেক করেন আরএমও
লোডশেডিংয়ে থেমে থাকে অপারেশন, ৯ বছরেও চালু হয়নি আইসিইউ
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ সংকট, ব্যাহত চিকিৎসাসেবা
চিকিৎসকের অভাবে সিজার বন্ধ ফুলছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

চার ডাক্তার দিয়ে চলছে ২ লাখ মানুষের হাসপাতাল!

শুধু আসমা বেগমই নয়, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগী ও তাদের স্বজনদের বক্তব্য একই। ১২ জন রোগী ও স্বজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

তাদের একজন তপতী সাধক। তিনি বলেন, মানুষ হাসপাতালে আসে কেন, সুস্থ হতে! কিন্তু এখানের পরিবেশ এমন যে আপনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। ডাক্তার নেই, ওষুধ থাকে না, পরিবেশ নোংরা, বিল্ডিং কখন জানি ভেঙে মাথায় পড়ে। নার্সদের ব্যবহারও ভালো নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রিয় গোপাল বিশ্বাস বলেন, শরণখোলায় প্রায় দুই লাখ জনসংখ্যা রয়েছে। এর বিপরীতে এই হাসপাতালটিতে রয়েছে মাত্র চারজন ডাক্তার। জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীর চাপ বেশি অন্যদিকে জনবল সংকট। এজন্য কিছু কিছু সময় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

চার ডাক্তার দিয়ে চলছে ২ লাখ মানুষের হাসপাতাল!

তিনি বলেন, ভবনটি অনেক পুরাতন। একটু বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে পানি চুয়ে চুয়ে বিভিন্ন চিকিৎসার সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে। তারপরেও অল্প জনবলে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সংকটের বিষয়ে জানানো হয়েছে। সেবা নিশ্চিতে নতুন ভবন ও জনবল প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

নাহিদ ফরাজী/কেএইচকে/এএসএম

Read Entire Article