বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী চীন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বড় অঙ্কের ঋণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতে যে অর্থ দিচ্ছে তার পুরোটাই অনুদান। দেশটির এ মানবিক কূটনীতিতে নতুন দিশা পাচ্ছে দেশের স্বাস্থ্যখাত।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, চীনা অনুদানের বেশির ভাগ অর্থই ব্যয় হবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে। একদিকে রংপুরে বিশেষায়িত হাসপাতাল, চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট, ধামরাইয়ে টারশিয়ারি হাসপাতাল ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে হাসপাতাল নির্মাণেও অনুদান দিচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী চীন। বাংলাদেশ শুধু জমির ব্যবস্থা করবে, চীনের অনুদানে এসব হাসপাতাল নির্মিত হবে।
অনুদান ১২শ কোটি, ৯০ শতাংশই স্বাস্থ্যখাতে
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ দশমিক ১৩ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে চীন। প্রতি ডলার সমান ১২১ টাকা ৩৮ পয়সা ধরে (১১ অক্টোবর ২০২৫) বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ এক হাজার ২১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। চীনা এ অনুদানের ৯০ শতাংশই মিলেছে স্বাস্থ্যখাতে।
‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিট’ প্রকল্প বাস্তবায়নসহ স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন প্রকল্পে এই অনুদান ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া আরও ৪৫ দশমিক ৫ কোটি ডলার অনুদান পাইপলাইনে রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এগুলো পর্যায়ক্রমে ছাড় করছে দেশটি। সব ছাড় হলে মোট চীনা অনুদান হবে ৫৫ দশমিক ৬৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। অনুদানের অধিকাংশ অর্থই স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হবে বলে জানায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এশিয়া উইংয়ের (চীন) একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অনুদান দিচ্ছে। তার মানে এই টাকা আর তারা নেবে না। নতুন করে এক হাজার বেডের একটি হাসপাতাল নির্মাণ করবে চীন। আমরা ইআরডির মাধ্যমে তাদের প্রস্তাব দিয়েছি, তারাও ইতিবাচক।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বার্ন ইউনিটও তাদের অনুদানে হচ্ছে। এছাড়া প্রতি বছর শতাধিক বাংলাদেশি নার্স-চিকিৎসককে চীন প্রশিক্ষণ দেয়, যাতে দেশে আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়। এসব প্রশিক্ষণ তাদের অনুদানে হয়।’
স্বাস্থ্যখাতে চীনা অনুদানের ফলে স্বাস্থ্যসেবা খাত নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। পাশাপাশি আরও অধিক মানুষকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া যাবে বলে দাবি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
হাসপাতালে সঠিক জনবল নিয়োগ করতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটা যেন পড়ে না থাকে। হাসপাতালের বেনিফিট নির্ভর করবে কে পরিচালনা করবে? পরিচালনা ঠিক হলে স্বাস্থ্যখাত অনেক উন্নত হবে। এতে উত্তরবঙ্গের মানুষকে ঢাকা আসতে হবে না, এমনকি ভারতেও যেতে হবে না।- ঢাবি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ড. শেখ সায়েদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘চীন নানা খাতে বাংলাদেশকে সাহায্য-সহযোগিতা করে। নতুন করে তারা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। চীন দেশের স্বাস্থ্যখাতে অনুদান দিচ্ছে। এছাড়া তারা হাজার বেডের হাসপাতালও নির্মাণ করতে চায়। চীনা অনুদানে আমাদের স্বাস্থ্যখাত আরও উন্নত হবে। দেশের মানুষকে আরও বেশি বেশি উন্নত ও আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যাবে।’
পোড়া রোগীর চিকিৎসায় ১৮০ কোটি টাকা অনুদান
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অধীনে একটি ১৫০ শয্যার স্বতন্ত্র বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ চলছে। ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন ইউনিট’ নামে এ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। অনুদান হিসেবে ১৮০ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন। ২৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প গত ১০ মাসে ১৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। মেয়াদ আছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। ২০২৪ সালের মে মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে দগ্ধ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। আগুন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণসহ নানা কারণে বাড়ছে দগ্ধ রোগী। তবে চমেক হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২৬ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট রয়েছে, যা পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে বেশি দগ্ধ রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করতে হয়। এ কারণেই এগিয়ে এসেছে চীন।
আরও পড়ুন
চীনা অর্থায়নে হাসপাতাল/দেশজুড়ে হইচই, সংশ্লিষ্টরা বলছেন ‘প্রাথমিক আলোচনা’
স্বাস্থ্যখাতে চীনা বিনিয়োগ চায় সরকার: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা/বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে অর্থায়ন করবে চীন
১৮০ কোটি টাকার চীনা বিনিয়োগ পেলো দেশি স্টার্টআপ ফাস্ট পাওয়ার টেক
হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. এস খালেদ বলেন, ‘২৬ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে গড়ে ৭০ থেকে ৭৫ জন করে রোগী ভর্তি থাকে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ জন দগ্ধ রোগী হাসপাতালে আসেন। এর মধ্যে আটজনকে ভর্তি দেওয়া হলেও বাকি সাতজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। দগ্ধদের জন্য আইসিইউ সেবা বেশি প্রয়োজন। অথচ এখানে আইসিইউ নেই। নির্মাণাধীন ১৫০ শয্যার বার্ন হাসপাতাল হলে ঢাকায় রোগী পাঠাতে হবে না।’

আহত-প্রতিবন্ধী রোগীদের পুনর্বাসনে অনুদান
রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারের ধামরাইয়ে বিভিন্ন ধরনের আহত-প্রতিবন্ধী রোগীদের পুনর্বাসনে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি রিহ্যাবিলিটেশন হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে চীন। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও আহতদের পুনর্বাসনে দেশের প্রথম রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টারে ৬২টি উন্নত রোবোটিক থেরাপি ইউনিট রয়েছে, যার মধ্যে ২২টি ইউনিট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে চালিত। এখানে প্রতিদিন প্রায় তিনশ রোগীকে উন্নত ফিজিওথেরাপি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে চীন।
চট্টগ্রাম–রংপুরে হাসপাতাল নির্মাণে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা অনুদান
বেইজিংয়ের আশ্বাসের পর সরকার দুটি বড় হাসপাতাল নির্মাণের জন্য তিন হাজার ৪২৫ কোটি টাকা অনুদান চেয়ে চীনের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জমা দিয়েছে। আরেকটি প্রস্তাব প্রস্তুতির প্রক্রিয়া চলমান। একটি হাসপাতাল চট্টগ্রাম, অন্যটি রংপুর বিভাগে নির্মিত হবে।
স্বাস্থ্যখাতে সব সময় দেশে চীনের বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি চলতেই থাকে। চীনের অনেক অগ্রাধিকার খাত আছে, তার মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্যখাত। দশকের পর দশক চায়না আমাদের স্বাস্থ্যখাতে সহায়তা দিচ্ছে।- বিসিসিসিআইর সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস), পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প দুটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ১০৭ কোটি টাকা।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় হাসপাতালটি হবে ৫০০–৭০০ শয্যার। এর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন এক হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, রংপুরের ১ হাজার শয্যার হাসপাতালটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা। এই টাকার পুরোটাই অনুদান হিসেবে পাওয়ার কথা রয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্প দুটি ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রংপুর হাসপাতালের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) এরই মধ্যে চীনে পাঠানো হয়েছে। আর চট্টগ্রামের হাসপাতালটির প্রস্তাব পরিকল্পনা উপদেষ্টার অনুমোদন পাওয়ার পর বৈদেশিক অর্থায়নের জন্য ইআরডিতে জমা দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইআরডির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা হওয়ায় রংপুর হাসপাতালের পিডিপিপি ইতোমধ্যে চীনে পাঠানো হয়েছে। আগামী মাসের শুরুতে ইআরডির একটি নির্ধারিত বৈঠকের পর চট্টগ্রাম হাসপাতালের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুদান প্রস্তাব পাঠানো হবে।’
গত ১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর জানান, রংপুর বিভাগের নীলফামারীতে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, চট্টগ্রামে একটি জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকায় একটি পুনর্বাসন হাসপাতাল নির্মাণেও সহায়তা দেবে চীন।
চট্টগ্রাম হাসপাতাল
পিডিপিপি অনুসারে, চট্টগ্রামের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী জেনারেল হাসপাতাল হবে টারশিয়ারি লেভেলের বিশেষায়িত হাসপাতাল। এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয় ঘটানো হবে। হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ, কিডনি রোগ ও সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের পাশাপাশি আইসিইউ, এইচডিইউ, ডায়ালাইসিস ও কার্ডিয়াক কেয়ার সুবিধা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ দন্ত বিভাগ থাকবে।
হাসপাতালটিতে একটি আধুনিক বহির্বিভাগ, সার্বক্ষণিক জরুরিসেবা, সার্জিক্যাল থিয়েটার কমপ্লেক্স এবং এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও ল্যাবরেটরি সুবিধা সম্বলিত উন্নত রোগ নির্ণয় ব্যবস্থা থাকবে।
হাসপাতালের সঙ্গে একটি নার্সিং কলেজ সংযুক্ত থাকবে, যা জনবলের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করবে। সহায়ক পরিষেবা হিসেবে থাকবে সিএসএসডি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল স্বাস্থ্য রেকর্ড এবং একটি মর্গ ও ফরেনসিক ইউনিট। চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের জন্য আবাসিক সুবিধাও থাকবে। হাসপাতালটি চট্টগ্রাম শহরের ৩২ লাখ এবং পুরো জেলার ৯০ লাখের বেশি মানুষকে সেবা দেবে।
উত্তরবঙ্গের আশীর্বাদ চীনা অনুদানে হাজার বেডের হাসপাতাল
নীলফামারীর এক হাজার শয্যার হাসপাতালটি তিস্তা প্রকল্পের কাছে গড়ে তোলা হবে। গত ৭ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান জানান, চীনের অর্থায়নে উত্তরাঞ্চলে একটি মেডিকেল সিটি, দক্ষিণে একটি মহিলা হাসপাতাল ও পূর্বাঞ্চলে একটি জেরিয়াট্রিক (প্রবীণদের জন্য) হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। হাসপাতালটি উত্তরাঞ্চলের জন্য বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা দেবে, যার মধ্যে থাকবে ক্যানসার, স্নায়ুরোগ, হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং শিশু ও নবজাতকদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র।
এ হাসপাতালে ২০০টি মেশিনসহ একটি বিশেষায়িত ডায়ালাইসিস কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এছাড়া কিডনি রোগের চিকিৎসার উন্নতির জন্য সারাদেশে আরও এক হাজার ডায়ালাইসিস মেশিন বিতরণ করা হবে। হাসপাতালটিতে মডিউলার অপারেশন থিয়েটার, জরুরি অস্ত্রোপচার কক্ষ ও পিইটি-সিটি, এমআরআই এবং মলিকিউলার ল্যাবসহ একটি ডায়াগনস্টিক ব্লক থাকবে।
পরিকল্পনা নথিতে বলা হয়েছে, ঢাকার টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমানো এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের দূর-দূরান্তে ভ্রমণের খরচ কমানোর জন্য এ হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের (আইএইচই) অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালে সঠিক জনবল নিয়োগ করতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটা যেন পড়ে না থাকে। হাসপাতালের বেনিফিট নির্ভর করবে কে পরিচালনা করবে? পরিচালনা ঠিক হলে স্বাস্থ্যখাত অনেক উন্নত হবে। এতে উত্তরবঙ্গের মানুষকে ঢাকা আসতে হবে না, এমনকি ভারতেও যেতে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘যদি ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি। স্পেশালাইজড ফিজিশিয়ানদের হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। তবে ঢাকার বাইরে হাসপাতাল করলে ভালো ফিজিশিয়ান পাওয়া যায় না। ভবন করে ইক্যুইপমেন্ট দিয়ে সাজিয়ে রাখলে হবে না। কোয়ালিফায়েড প্রোভাইডার লাগবে, সেবা দিতে।’
এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘চায়নিজ অনুদানের টাকা কাঠামোগতভাবে, সুষ্ঠুভাবে খরচ করতে হবে। হাসপাতাল সার্ভিস যেন ভালো হয়। স্থাপনা চালু হতে সময় লাগবে। এই সময়ে দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। ভবন নয়, সার্ভিস উদ্বোধন করতে হবে। এগুলো না হলে শুধু ভবন দিয়ে কাজ হবে না। চীনা অনুদান প্রোপার চ্যানেলে খরচ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাত উন্নয়নে অপার সম্ভাবনা তৈরি হবে।’
স্বাস্থ্যখানে সংকটের সময় পাশে থাকে চীন
যখনই স্বাস্থ্যসহ নানান খাতে বাংলাদেশে সংকট দেখা দিয়েছে, তখনই চীন সবার আগে দৌড়ে এসেছে—দাবি বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাত উন্নত হবে, এটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। শর্টটার্ম ও মিডিয়াম টার্ম পদক্ষেপের ক্ষেত্রে চীন আমাদের সহায়তা করে আসছে। কোভিড-১৯ এ যখন দেশে হেলথ ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে, তখন চীন করোনা ফাইটিং ইক্যুইপমেন্ট হিসেবে মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ নানা ধরনের ইক্যুইপমেন্ট দিয়েছে। করোনা সংকটে চীনের বিশেষ একটা টিম বাংলাদেশ ভিজিট করে। আমাদের ক্রাইস দেখে তারা পদক্ষেপ নেয়। চীন থেকেই আমরা প্রথম কোভিড ভ্যাকসিন পাই। চীনের বেশ কিছু কোম্পানি আমাদের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করেছে। বেশ কিছু হাসপাতালেও বিনিয়োগ করছে। চীন ইউনিয়ন, থানা ও জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে অনুদান দিচ্ছে।’
স্বাস্থ্যখাতে চীনা অনুদান আশীর্বাদ দাবি করে আল মামুন মৃধা বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে সব সময় দেশে চীনের বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি চলতেই থাকে। চীনের অনেক অগ্রাধিকার খাত আছে, তার মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্যখাত। দশকের পর দশক চায়না আমাদের স্বাস্থ্যখাতে সহায়তা দিচ্ছে। তাদের বিশেষজ্ঞ দল সব সময় দেশে আসে, সেই অনুযায়ী সহায়তা দেয়। দেশে চীনা অনুদানে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এতে চিকিৎসা নিতে আমাদের নানা দেশে দৌড়াদৌড়ি করা লাগবে না। আমাদের দেশের গ্রাম থেকে শহর—সবখানে মিলবে চীনের আধুনিক সেবা।’
স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে চীনের আরও কিছু অবদান
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো নিয়মিতভাবে ওষুধের কাঁচামাল (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট–এপিআই) চীন থেকে আমদানি করে। ব্যবসায়ীরা মেডিকেল সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির একটি বড় অংশ আমদানি করেন দেশটি থেকে। প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেল শিক্ষার জন্য চীনে যান। বাংলাদেশ করোনার বেশি টিকা কেনে চীন থেকে।
বাংলাদেশ থেকে কিছু নার্স ও চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা, বিশেষত জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য চীনে প্রশিক্ষণ নিতে যান। এটি বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে স্বাস্থ্যখাতের সহযোগিতার একটি অংশ, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ, হাসপাতাল নির্মাণ এবং সরঞ্জাম সরবরাহ। চীনের বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদেরও উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর চিকিৎসা দিচ্ছেন। তারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠাতে আগ্রহী।
চলতি বছরের ৮ আগস্ট দিনব্যাপী ‘নি হাও! চীন-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উন্নয়ন প্রদর্শনী ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর বনানীর হোটেল সারিনায় বেল্ট অ্যান্ড রোড হেলথকেয়ার সেন্টারের আয়োজনে এই এক্সপোর উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। এক্সপোতে চীনের ১০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল অংশ নেয়।
প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি ও উচ্চমানের হাসপাতাল পরিষেবায় বিশ্বজুড়ে পরিচিত। আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে একটি টেকসই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, শুধু চিকিৎসা নয়, চিকিৎসা সরঞ্জাম সহায়তায়ও বাংলাদেশের পাশে রয়েছে চীন। অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিট নির্মাণ দ্রুত এগোচ্ছে।’
এমওএস/এএসএ/এমএফএ/এমএস

1 week ago
7









English (US) ·