জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে জকসু নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে জকসুর ওয়েবসাইটে ৩৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটের মোট ১৬ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থীর খসড়া তালিকা প্রকাশ হয়। এর পরই উঠেছে নানান অসঙ্গতির অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হয়েও অনেকের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় নেই। আবার কিছু বিভাগের মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থীদের নাম যুক্ত হয়েছে খসড়া এই ভোটার তালিকায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি নির্বাচনের পরবর্তী ধাপগুলোর স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট সদস্যরা বলছেন, অভিযোগের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে আগামীকাল রোববারের মধ্যে সমাধান করা হবে।
খসড়া তালিকা প্রকাশের পর খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াসাল রাকিব স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যহত রেখেছেন। তবে এই খসড়া তালিকায় তার নাম আসেনি।
রিয়াসাল রাকিব বলেন, আমি স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী হয়েও ভোটার তালিকায় আমার নাম নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম জকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, আর এই নির্বাচনে ভোট দেওয়া সব রানিং শিক্ষার্থীর অধিকার। তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে এই তালিকা সংশোধনের আহ্বান জানাই।
একই অভিযোগ করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হুসাইন। তিনি বলেন, আমি স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ৪ নভেম্বর ফর্ম ফিলআপ করে রেজিস্ট্রেশন করেছি অনলাইনে। আমার দুইটা পরীক্ষা বাকি আছে মাস্টার্স সেকেন্ডে সেমিস্টারে। নিয়ম অনুযায়ী আমার ভোটার হওয়ার অধিকার আছে।
জকসু নির্বাচনে প্রার্থী নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোর আনজুম সাম্য অভিযোগ করে বলেন, আমি অষ্টম সেমিস্টারের রানিং শিক্ষার্থী, এমনকি মিডটার্ম পরীক্ষা দিচ্ছি। তাহলে আমাকে কেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো? নির্বাচন কমিশনকে এর জবাব দিতে হবে।
আরও পড়ুন
জকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো দল-গোষ্ঠীর চাপ নেই: উপাচার্য
জকসু নির্বাচনে ভোটার ১৬৩৬৫ জন, খসড়া তালিকা প্রকাশ
তিনি আরও বলেন, আমার ব্যাচের সবার নাম ভোটার তালিকায় আছে, শুধু আমার নাম নেই। অন্যদিকে আমি জকসু নির্বাচনের একজন প্রার্থী। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। নির্বাচন শুরুর আগেই যদি এমনটা হয়, তাহলে পুরো কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী তৌহিদ চৌধুরী বলেন, ভোটার তালিকা প্রকাশের পর দেখি সেখানে আমার নাম নেই। বিষয়টি আমি বিভাগে জানিয়েছি।
জবির আইন বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা শেষে সম্প্রতি ফল প্রকাশ হয়েছে। এরপরও খসড়া ভোটার তালিকায় তাদের নাম এসেছে। এ নিয়ে চলছে নানান আলোচনা সমালোচনা। আইন বিভাগের ওই ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ব্যাচের সবাইকে ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। অথচ আমাদের মাস্টার্সের রেজাল্ট সপ্তাহ খানেক আগে প্রকাশ হয়েছে। আমার মতে জকসু নির্বাচনে কেবল রানিং শিক্ষার্থীদেরই ভোটার তালিকায় রাখা উচিত। এতে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
ভোটার তালিকার অসঙ্গতি বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ফোন দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও অধ্যাপক ড. জুলফিকার মাহমুদকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ত্রুটির বিষয়গুলো আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এরই মধ্যে বিভাগগুলোতে নোটিশ পাঠিয়েছি। বিভাগগুলো থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রোববারের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হবে। বেশিরভাগ বিভাগের মাস্টার্স ২০২২–২৩ সেশনের শিক্ষার্থীরা যারা এখনো পাস করেননি, তাদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় আসেনি। এসব বিষয় সমাধান করা হবে।
ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার পরিকল্পনা কমিশনের
জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবিসহ তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে মতবিনিময় সভায় জবি শাখা ছাত্রদল নির্বাচন কমিশনের কাছে এই দাবি জানায়। নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জুলফিকার মাহমুদ বলেন, আমরা চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবি যুক্ত করার পরিকল্পনা করছি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এটি বাস্তবায়নের জন্য।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, জকসু নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও আনন্দপূর্ণ। নির্বাচনে সব দলের (সব ছাত্র সংগঠনের) অংশগ্রহণ থাকবে। শিক্ষার্থীরা প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই জকসু উপভোগ করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। শিক্ষার্থীদের ভোটের মাধ্যমেই জকসুতে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।
টিএইচকিউ/কেএসআর/জিকেএস

1 day ago
4









English (US) ·