জকসু নির্বাচনের তারিখ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘অসন্তোষ’

14 hours ago 10

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২২ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ করা হবে। তবে ঘোষিত এ তারিখ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ, জকসু নির্বাচনের সময় অনেক বেশি পিছিয়েছে, যা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অন্তরায় হতে পারে।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম করে সর্বশেষ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ আন্দোলন, অনশন কর্মসূচি, উপাচার্য ভবন ঘেরাওসহ নানা দাবির প্রেক্ষিতে জকসু বিধিমালা পাস হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের উচিত শিক্ষার্থীদের বহুল প্রত্যাশিত ও প্রাণের দাবি জকসু নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনা করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে আমাদের অন্যতম দাবি ছিল জকসু নির্বাচন। এছাড়া ক্যাম্পাস গুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। সকলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু জকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সেটা দেখা যায়নি। সেটা বোঝা যায় নির্বাচনের তারিখ দেখে। কারণ যে সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তখন ক্যাম্পাসে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী থাকবেন না। সবাই শীতকালীন ছুটি কাটাতে বাড়ি চলে যাবেন। এসময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’

আইন ও ভূমি প্রশাসনের আরেক শিক্ষার্থী ফেরদৌস হাসান বলেন, ‘ডিসেম্বরের শুরুতে বেশিরভাগ বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়। এসময় সবাই চায় বাড়িতে চলে যেতে। পুরো বছর যারা টিউশন করে, তারা শুধু এই সময়টাই পুরোপুরি ছুটি পায়। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা কম হবে এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। ফলে প্রশাসনের উচিত নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আনা।’

ছাত্র নেতাদের অসন্তোষ
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রসংগঠন নির্বাচন পেছানোকে প্রহসন বলছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্বাচনের ব্যাপারে উদাসীনতা প্রতিফলিত হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচন পিছিয়ে বিশেষ গোষ্ঠীর মন রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে বলছেন ছাত্রনেতারা। ভোট গ্রহণের তারিখ পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে এগিয়ে আনার দাবিও জানান তারা।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার এবং প্রয়োজনে ভোট গ্রহণের আগে এক সপ্তাহ আগে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানাচ্ছি। এমন এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। সেই সমস্ত জায়গা থেকে সময় বাড়িয়ে বা কমিয়ে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচন করা সম্ভব।

বুধবার (৫ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণার পর পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির, আপ বাংলাদেশ, ছাত্র শক্তি এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা। এসময় শাখা শিবির সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনি তফসিলে একটি ছাত্র সংগঠনের মন রক্ষার্থে ২৬ দিন নির্বাচনের সময় পিছিয়েছে।’

শাখা আপ বাংলাদেশের সংগঠক মাসুদ রানা বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা ফিরাতে নির্বাচনের সময় পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’

শাখা ছাত্র শক্তির আহ্বায়ক মো. ফয়সাল মুরাদ বলেন, এসময় শিক্ষার্থীরা থাকে না। একটি গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধার্থে চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনের সময় পিছিয়েছে। এতে বেশি সুবিধা শিবির পেয়েছে বলেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, তফসিলে নির্বাচনের তারিখ পেছানোতে ছাত্রদলের কোনো হাত নেই। আমরা এখন প্যানেল দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর যে অভিযোগ জানানো হয়েছে তার কোনো প্রমাণ নেই, এটা ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, আমরা সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই এই তারিখ নির্ধারণ করেছি। যারা পরিবর্তনের কথা বলছে, তারা শুধু বলার জন্য বলছে। হয়তো তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে বলছে। কিন্তু কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে, তারা ওই সময়ের আগে কোনো সময় দেখাতে পারেননি। আমাদের সময় আগানোর কোনো সুযোগ নেই। ২২ ডিসেম্বরই জকসুর ভোটগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

টিএইচকিউ/এমআইএইচএস

Read Entire Article