সাহের আলী সরদারের (৩৯) জন্ম ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার বনতাই ডাঙ্গাপাড়া সানি মন্দির এলাকায়। তার বাবার নাম সোহরব সরদার। ভারতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৩৩৯৯......। সেদেশের জাতীয়পত্র অনুযায়ী সাহের আলীর জন্মতারিখ ১৯৮৬ সালের পহেলা জানুয়ারি। কিন্তু ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও গোপনে নাম ও ঠিকানা পাল্টে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়েছেন সাহের আলী সরদার।
বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম মো. আকাশ প্রামানিক। এদেশে তার জন্মনিবন্ধন সনদ নম্বর ১৯৯৮৮১....., যেখানে জন্মতারিখ উল্লেখ আছে ১৫ জানুয়ারি ১৯৯০। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রাম।
তবে অভিযোগ উঠেছে, এই ভারতীয় নাগরিক কয়েক বছর আগে আত্মীয়ের বাড়ি এসে আর ফিরে যাননি। পরে তথ্য গোপন করে বাংলাদেশি নাগরিক সেজেছেন। বিয়েও করেছে ধোপাপাড়ায়। বর্তমানে আকাশ প্রামানিক হিসেবে তিনি কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করছেন। সম্প্রতি ঘটনাটি জানাজানি হয়। তবে তার নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি জানিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্রে মা হিসেবে দেখানো আসমা বেগম। ভারতীয় নাগরিক কীভাবে বাংলাদেশি জন্মনিবন্ধন এবং এনআইডি কার্ড করেছেন তা তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন।
জানা গেছে, সাহের আলী নাম পাল্টে আকাশ প্রামানিক সেজে বাংলাদেশের জন্মনিবন্ধন পেয়েছেন ২০২০ সালের ২৩ মার্চ। আর তিনি এনআইডি পান ২০২২ সালের ২৮ জুলাই। ২০২৪ সালের ১২ জুলাই পুঠিয়ার ধোপাপাড়া গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। সাহের আলী বর্তমানে আকাশ প্রামানিক সেজে কক্সবাজারের রয়েল সি বিচ নামে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করছেন।
অভিযোগকারী আসমা বেগম বলেন, ‘প্রায় সাত বছর আগে মানবিক কারণে আশ্রয়হীন ছেলে হিসেবে সাহের আলী সরদারকে বাড়িতে আশ্রয় দিই। সে নিজেকে অসহায় বলে পরিচয় দেয়। আমি মায়া করে থাকতে দিয়েছিলাম। সে আমার বাড়িতেই থাকতো। পরে জানতে পারি, সে গোপনে আমার ও আমার স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনের তথ্য ব্যবহার করে নিজের নাম পরিবর্তন করে ‘মো. আকাশ প্রামানিক’ নামে বাংলাদেশি পরিচয়পত্র তৈরি করেছে। আমি ইউএনওকে জানিয়েছি, সে (সাহের) যেন আমার পরিচয় ব্যবহার করে আর না থাকে। সে যে দেশের নাগরিক, তাকে সে দেশে ফিরে যেতে হবে।’
অভিযোগকারী আরও বলেন, ‘সাহের আলী কাজ করে কিছু টাকা জমায় এবং পরে আলাদাভাবে বসবাস শুরু করে। এরপর নাটোরে গিয়ে নিজেকে আমার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করেছে। তার ব্যবহৃত সিমও আমার নামে তোলা ছিল। সে এদেশে বিয়েও করেছে। একমাত্র মেয়েকে আমাদের জমি লিখে দিতে চাইলে সেটাতে আপত্তি জানায় সাহের। এসময় বাংলাদেশি এনআইডি দেখিয়ে সে নিজেকে আমাদের সন্তান দাবি করে জমির ভাগ চায়। আমি চাই প্রশাসন যেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।’
অন্যদিকে অভিযুক্ত সাহের আলী সরদার ওরফে আকাশ প্রামানিক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে ভারত থেকে তারা (আসমা দম্পতি) বাংলাদেশে নিয়ে আসে এবং তারাই এসব কাগজপত্র তৈরি করে দেয়। আমি কোনো প্রতারণা করিনি। আমি এতিম ছিলাম। পরে তারা আমাকে মৌখিকভাবে দত্তক নেয়। তাদেরই উদ্যোগে আমার জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়। আমি জানতাম না এতে কোনো সমস্যা হবে। তবে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। হয়ত ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকেই তারা এমন অভিযোগ করছে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত সালমান বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে তদন্তের নির্দেশনা এসেছে। উপজেলা কৃষি অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিসার স্মৃতি রাণী সরকার বলেন, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি ভারতের নাগরিক। তিনি স্থানীয়দের পরিচয় ব্যবহার করে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি সংগ্রহ করেছেন। তদন্ত শেষ হলে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে।
তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে আকাশ প্রামানিকের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে যারা তার পরিচয়পত্র তৈরিতে সহযোগিতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফএ/এএসএম

14 hours ago
6









English (US) ·