জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াত কিংবা এনসিপির মতো দলগুলো যখন নির্বাচনি মাঠে ব্যস্ত, তখন ভোটে অংশ নেওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় জাতীয় পার্টি। তবে অনিশ্চয়তা থাকলেও এরই মধ্যে ভেতরে ভেতরে প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দলটি। তারা বলছে, শেষ পর্যন্ত যদি ভোটে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ মেলে, তাহলে জোরেশোরে মাঠে নামবে তারা।
দলটির ইচ্ছা- এককভাবে নির্বাচনের চাইতে জোটগতভাবে ভোটে অংশ নেওয়া। সে ক্ষেত্রে বিএনপি কিংবা জামায়াত যে কোনো একটি দলের সঙ্গে জোটে যেতেও আগ্রহী দলটি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিরও যেমন আসন সংখ্যা বাড়বে, তেমনি যে দলের সঙ্গে জোট হবে তাদেরও আসন ও ভোট বাড়বে।’
দলটি মনে করছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে এখনো যে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে সেটি হয়তো তফসিল ঘোষণার পর কেটে যাবে। তখনই জোটের বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেবে দলটি।
জাতীয় পার্টির নির্বাচনি প্রস্তুতি কী?
ডিসেম্বরেই ঘোষণা করার কথা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এই নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত বিভিন্ন আসনে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। এই দল দুটির প্রার্থীদের প্রচারণায় জমে উঠেছে মাঠের রাজনীতি।অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টিও দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। শিগগির দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার কথা জানিয়েছে তারা।
গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের মতো কার্যক্রম নিষিদ্ধ বা নিবন্ধন স্থগিত না হলেও রাজনীতির মাঠে গত ১৪ মাস ধরে অনেকটাই কোণঠাসা জাতীয় পার্টি। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একটি মাত্র বৈঠকে অংশ নিলেও পরে ঐকমত্য কমিশন কিংবা সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি দলটি।
সরকার যেহেতু দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেনি কিংবা নির্বাচন কমিশনও দলটির নিবন্ধন বাতিল করেনি সে কারণে এরই মধ্যে নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু করেছে।
দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে ৩০০ আসনেই প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। কোনো কোনো আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তও করা হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার বলেন, প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পার্টির চেয়ারম্যান অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের একটা ছক করা আছে কোন আসন থেকে কে ভোট করতে পারেন। এ নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি আছে। প্রার্থী ঘোষণা করতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না।
আপাতত ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুত রাখা হলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলে সব আসনে প্রার্থী না দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের নেতারা।
শামীম হায়দার বলেন, প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনেরই প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। সেটি এটা পর্যায়ে পৌঁছালে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কতগুলোতে ভোট করবো আমরা।
টার্গেট জোটবদ্ধ নির্বাচন?
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে কখনো জোটবদ্ধ, কখনো বা আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছিল জাতীয় পার্টি।
এসব ভোটে কখনো বিরোধী দলের ভূমিকায়, আবার কখনো সরকারে থেকেই বিরোধী দল ছিল জাতীয় পার্টি। যে কারণে ২০২৪ সালের পাঁচই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টিও দেশের রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টিও যে অনিশ্চিত সেটিও মানছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ কিংবা প্রেস রিলিজে জাতীয় পার্টিকে রাজনীতি ও নির্বাচনে সুযোগ দেওয়ার দাবিও জানাতে দেখা গেছে দলের নেতাদের।
জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে দলটির আগ্রহ একক নির্বাচন না করে জোটগত ভোটে অংশ নেওয়া।
সম্প্রতি যখন জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তখন জোটবদ্ধ ভোট করার আগ্রহের কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।
সেটি কেমন? এই প্রশ্নে তার উত্তর, ‘আমরা বুঝতে পারি অনেকে (রাজনৈতিক দল) আমাদের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী। আমরাও অনেকের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী।
তার ব্যাখ্যা, এই মুহূর্তে জাতীয় পার্টি মনে করছে তারা যদি একক নির্বাচনের চাইতে জোটগতভাবে করে তাহলে তাদের আসন সংখ্যা যেমন বাড়তে পারে, তেমনি যে দলের সঙ্গে জোট করবে তাদের আসনও বাড়তে পারে।
তাহলে শেষ পর্যন্ত কোন দলের সঙ্গে জোটে আগ্রহ জাতীয় পার্টির? এর একটু ব্যাখ্যা দিয়ে শামীম হায়দার বলেন, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি- জামায়াতের সঙ্গে জাতীয় পার্টির এক ধরনের জোট গঠনে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটি তখন হয়নি।
তবে এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী বলেও জাতীয় পার্টির মহাসচিব জানিয়েছেন। তিনি এটিও জানিয়েছেন যে, সেটি কতখানি বাস্তব তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। তবে শেষ পর্যন্ত তা নির্ভর করবে তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিবেশ কেমন থাকে তার ওপর।
কোন্দলের সুযোগ নিচ্ছে ইসি?
দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি দলটি সবচেয়ে বেশি বার ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে গেছে। বিভিন্ন নামে জাতীয় পার্টির নতুন নতুন দল তৈরি হলেও মূল অংশ ছিল প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে।
গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর চলতি বছরের ৯ অাগস্ট আরেক দফায় ভাঙে জাতীয় পার্টি। দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ চেয়ারম্যানপন্থিদের বাদ দিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করেছে জাতীয় পার্টির একটি অংশ।
জিএম কাদের অংশকে বাদ দিয়ে ঢাকায় কাউন্সিল করে ওই অংশ আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে এই অংশের চেয়ারম্যান করা হয়।
দলের শীর্ষ ও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত ওই অংশ কাউন্সিলের পরই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদেরকে মূল জাতীয় পার্টি দাবি করে তাদের অধীনে দলীয় লাঙল প্রতীক দেওয়ার দাবি জানায়। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিষয়টি সেই প্রশ্নেও আটকে আছে।
এই অংশের নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আইন বিধি-বিধান ফলো করে কাউন্সিল করে ইসির কাছে সব তথ্য জমা দিয়েছি। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে আমরাই মূল জাতীয় পার্টি। ‘লাঙ্গল’ প্রতীকও থাকবে আমাদের কাছে।’
যে কারণে, আগামী নির্বাচনে মি. মাহমুদের এই অংশই চাচ্ছে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে।
একদিকে মাঠের রাজনীতিতে কোণঠাসা, অন্যদিকে দলীয় এই কোন্দলের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন।
সূত্র: বিবিস বাংলা
এমআইএইচএস/জেআইএম

2 hours ago
3









English (US) ·