জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে টাকা পাবো কোথায়

4 days ago 3

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি সহায়তা বাড়ানো খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। তা না হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় টাকা পাবে কোথায়, এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

শিক্ষার্থীপ্রতি সরকারের ব্যয় বৈষম্যের কথা তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে সরকারের ব্যয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের ব্যয় বছরে মাত্র ৭৬৫ টাকা। তা-ও সে টাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি পায় না।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে এক হোটেলে আয়োজিত ‌‘ইকোনমিক রিফর্ম সামিট ২০২৫’-এর ট্যাকলিং ইয়ুথ আনইমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কিল্ড মাইগ্রেশন শীর্ষক সেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। সারাদেশের প্রায় আড়াই হাজার কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছেন তারা। তাদের শিক্ষাদানে জড়িত এক লাখেরও বেশি শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত আড়াই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশই বেসরকারি। তারা সরকার থেকে শুধু এমপিওর টাকা পান, যা এক বছরে শিক্ষার্থীপ্রতি খরচ দাঁড়ায় মাত্র ৭৬৫ টাকা। এর বাইরে সরকারের কাছ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি কোনো অর্থ সহায়তা পায় না।

আরও পড়ুন
ক্ষমতা বাড়ছে প্রধান শিক্ষকের, স্লিপ ফান্ডে বরাদ্দ বেড়ে ৩ লাখ
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি ফি জমার সময় বাড়লো

তিনি বলেন, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি পরীক্ষার খাতা দেখতে একজন শিক্ষক পান ১৬০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয় মাত্র ৪৫ টাকা। নিজস্ব খরচে বিশাল আয়তনের এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ফি বাড়ালেও সমালোচনায় পড়তে হয়। বর্তমানে কিছু ফি বাড়ানো হয়েছে ও এর বড় অংশই যাবে কলেজগুলোতে ইনকোর্স এবং শিক্ষার অন্যান্য ক্ষেত্রে গুণগত মান বাড়াতে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরও বলেন, বেসরকারি কলেজের জন্য সরকারের কোনো বাজেট নেই। তারা টাকা পাবে কোথায়? সামান্য ফি বাড়ালেই কলেজ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ২০১৫ সালের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ফি বাড়ানো হয়নি। তখন এক রিম কাগজ কিনতে যে টাকা লাগতো, এখন তার দাম তিনগুণ বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষার মান বাড়াতে গবেষণা বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা যেমন নিশ্চিত করা প্রয়োজন, তেমনই খাতা দেখার সম্মানিও বাড়ানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে সরকারি সহায়তা বাড়ানো খুবই প্রয়োজন। তা না হলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় টাকা পাবে কোথায়?

অধ্যাপক আমানুল্লাহ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই বেকার থাকেন দক্ষতার অভাবে। এ পরিস্থিতির উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিতে সিলেবাস সংস্কার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে স্নাতক সম্মানে আইসিটি ও ইংরেজি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন অর্থ, যা সরকার থেকে আসা প্রয়োজন। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া গুণগত মানোন্নয়ন যেমন সম্ভব নয়, তেমনই জাতির সার্বিক উন্নতি করা সম্ভব হবে না।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডিজবসডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাসরুর। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার জিয়া হাসান, ব্রেইনের নির্বাহী পরিচালক ড. শফিকুর রহমান, বিল্ডনেশনের প্রতিষ্ঠাতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির মিডিয়া সেলের মাহমুদা হাবিবা প্রমুখ।

এএএইচ/কেএসআর/এএসএম

Read Entire Article