জার্মানিতে প্রতি দুজনের একজন জীবন নিয়ে ‘সন্তুষ্ট’

15 hours ago 7

জার্মানির ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন রিসার্চের এক গবেষণায় দেখে গেছে, জার্মানিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে নিজেদের জীবনমান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কোনো কোনো অঞ্চল থেকে আসা অভিবাসীরা নিজেদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও কেউ কেউ আবার ততটা সন্তুষ্ট নয়।

সর্বশেষ ‘২০২৫ হ্যাপিনেস অ্যাটলাস’ প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানিতে বসবাসরত মানুষেরা তাদের জীবন নিয়ে কয়েক বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি সন্তুষ্ট।

গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানিতে প্রতি দুই জনের মধ্যে একজন নিজেদের জীবন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। পশ্চিম জার্মানির চেয়ে পূর্ব জার্মানির মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। শহর হিসেবে বন্দর নগরী হামবুর্গ সবচেয়ে সুখী, জরিপে এমনটাই উঠে এসেছে।

এদিকে, বিআইবি ডট মনিটর ওয়েল-বিয়িং নামে ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন রিসার্চের করা গবেষণায়ও অনেকটা একই রকম ফলাফল উঠে এসেছে।

গবেষণাটিতে জার্মানির ২০ থেকে ৫২ বছরের ৩০ হাজার বাসিন্দার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। জার্মানির প্রায় আট কোটি ৩০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রক চতুর্থাংশই হয় অভিবাসীদের সন্তান অথবা গত ৫০ বছরের মধ্যে অভিবাসী হয়ে জার্মানিতে এসেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানিতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীরা জীবমান নিয়ে সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন অভিবাসী নয় এমন জনগোষ্ঠী৷ তাছাড়া, অভিবাসী পরিবারের প্রথম প্রজন্মও জীবনমান নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

গবেষণার ফলাফল বিষয়ে বিআইবি ডট মনিটর ওয়েল-বিয়িং-এর প্রধান কাথারিনা স্পিস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘জীবনমানের সন্তুষ্টির বিষয়ে আমরা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছেছি। বর্তমান অবস্থায় এটি করোনা মহামারি পূর্ববর্তী পরিস্থিতিতে ফিরে গেছে।’

স্পিস বলেন, অভিবাসী পরিবারের বংশধরেরা অন্যদের মতো এতেটা সন্তুষ্ট না হওয়ার কারণ হতে পারে যে, তাদের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না এবং সমাজে তাদের একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক মতো কার্যকর হচ্ছে না।

নানামুখী প্রতিক্রিয়া
গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের প্রতি চারজনে অন্তত একজন জানিয়েছেন, তারা জার্মানিতে জীবনমান নিয়ে সন্তুষ্ট। জার্মানিতে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো এবং সেইসাথে পোল্যান্ড থেকে অভিবাসী কর্মী আসার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই তালিকায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশগুলোর অভিবাসীরাও রয়েছেন।

অবশ্য, এর বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে। গবেষণার ফলাফল বলছে, এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে জার্মানিতে আসা অভিবাসীদের প্রতি তিনজনে একজন জানিয়েছেন, তারা তাদের জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট। গবেষকদের অনুমান, বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কারণে তাদের মধ্যে এমন মনোভাব তৈরি হয়েছে।

এদিকে, ২০১৫-১৬ সালে জার্মানিতে আসা অভিবাসীদের মধ্যে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। উল্লেখ্য, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে ওই সময়ে প্রায় দশ লাখ অভিবাসী জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

গবেষণা বলছে, জার্মানিতে অবস্থানরত সিরীয়দেরে প্রতি তিনজনে একজন নিজেদের জীবন নিয়ে খুব সন্তুষ্ট। আর ইরাক এবং ইরিত্রিয়ার অভিবাসীদের প্রতি তিনজনে একজন নিজেদের অবস্থান নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।

এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, সিরিয়ার শরণার্থীরা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষা সুবিধা, বিশেষ করে পারিবারিক পুনর্মিলনের সুবিধা পেয়েছিলেন।

এদিকে, রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনীয়দের মধ্যে জীবনমান নিয়ে সন্তুষ্টি ২০২৪ সালের তুলনায় বেড়েছে, যদিও এই মাত্রা খুব বেশি নয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ইউক্রেনীয়দের অর্ধেক জানিয়েছেন, তারা তাদের জীবন নিয়ে খুব বেশি সন্তুষ্ট নয়।

মূল চালিকাশক্তি জার্মান ভাষা
গবেষণায় অভিবাসীদের জার্মান ভাষার দক্ষতার সঙ্গে জীবন মানের সন্তুষ্টির একটি সম্পর্ক বেরিয়ে এসেছে। গবেষণার ফলাফল বলছে, অভিবাসীরা নিজেদের বাসায় যত কম জার্মান বলছে, তারা ততটাই জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট। অর্থাৎ সমাজে একীভূত হওয়ার ক্ষেত্রে জার্মান ভাষা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে স্পিস বলেন, শুধু জার্মানিতেই নয়, অভিবাসীরা একটি দেশে যত বেশি সময় ধরে থাকছেন, তারা তত বেশি শ্রমবাজারে প্রবেশের এবং ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে একটি দেশে থাকার সাথে সাথে জীবনমান নিয়ে সন্তুষ্টিও বাড়তে থাকে।

বিদেশে জার্মানদের সন্তুষ্টি
গবেষণাটিতে জার্মান অভিবাসীদের জীবনমান নিয়েও বেশ কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গবেষণাটি বলছে, স্পেন, ইতালি, পর্তুগাল এবং গ্রিসে অবস্থানরত জার্মানরা নিজেদের জীবন নিয়ে অনেক বেশি সন্তুষ্ট।

স্পিসের মতে, এমন মনোভাবের একটি বড় কারণ হলো, ওই দেশগুলোর আবহাওয়া। সেইসাথে জীবনযাত্রার কম খরচও এর একটি কারণ বলে মন্তব্য করেন এই গবেষক।

সূত্রঃ ইনফোমাইগ্রেন্টস

এমআরএম/জেআইএম

Read Entire Article