রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসেনের মৃত্যুর প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কমিটি। এতে বলা হয়েছে, সুইমিংপুলে ডুবে যাওয়ার ২০ মিনিট পর উদ্ধার করা হয় সায়মার মরদেহ।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন সবার সামনে তুলে ধরেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান। এসময় তিনি বলেন, সায়মা মৃত্যুর পরদিন থেকে ২১ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার, মেডিকেল ও সুইমিংপুলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ, লিখিত বক্তব্য ও অন্যান্য বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সায়মা সেদিন সাইকেল নিয়ে সুইমিংপুলে প্রবেশ করেন। পরে সাইকেল রেখে রুমে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে সাঁতারের জন্য নামে। এসময় তার সঙ্গে আরও একজন শিক্ষার্থীও নামেন। তারা দুজন একইসঙ্গে সাঁতার শুরু করেন। তবে তার সঙ্গে যিনি ছিলেন তিনি একটু দ্রুতগামী ছিলেন। সায়মা থেকে এগিয়ে যান ওই শিক্ষার্থী।
সায়মা সাঁতার শুরু করেন বিকেল ৪টা ১২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে। প্রথম লাইনেই ওয়ালের পাশে সাঁতার কাটছিলেন তিনি। তার পাশেই আরেকজন মেয়ে সাঁতার কাটছিলেন। প্রায় এক মিনিট ঠিকভাবে সাঁতার কাটার পর সায়মা সমস্যার মুখোমুখি হন।
সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, বারবার ডুব দিচ্ছেন আর উঠছেন সায়মা হোসেন। তারপরই তিনি পানিতে তলিয়ে যান। কিন্তু কেউ সেটা খেয়াল করেননি। তার পাশে যে মেয়েটা সাঁতার কাটছিলেন, তিনি কয়েকবার এপাশ থেকে ওপাশে গেছে সাঁতার কেটে। তিনি তখনো খেয়াল করেননি বিষয়টি। সায়মা বাদেও সেখানে পাঁচজন সাঁতারু এবং তিনজন প্রশিক্ষক ছিলেন সেখানে। তাদের কারোর দৃষ্টিতেই আসেননি সায়মা ডুবে যাওয়ার দৃশ্যটি।
পাশের মেয়েটি সাঁতার কেটে ওঠার পর খেয়াল করেন, তার পাশে সাঁতার কাটতে থাকা সায়মা নেই। তারপর তিনি বিষয়টি ম্যাডামকে গিয়ে বলেন। পরে তারা ওয়াশরুমসহ সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে একজন মেয়ে সায়মাকে পানির নিচে ডুবে থাকতে দেখেন। এরপর রুনা লায়লা নামের একজন প্রশিক্ষক পানিতে ঝাঁপ দিয়ে সায়মাকে ওঠাতে চেষ্টা করেও পারেননি। এরপর উপস্থিত আরও ২-৩ জন নামলেও তারা সায়মাকে ওঠাতে পারেননি। সেখানে পানির গভীরতা প্রায় সাত ফুট ছিল। যে কারণে তাকে তোলা সম্ভব হচ্ছিল না। এরপর বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে আশপাশ থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসেন। তাদের মধ্যে একজন পানিতে নেমে তোলার ব্যবস্থা করেন।
আরও পড়ুন
সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু
রাবির সুইমিংপুলে ছাত্রীর মৃত্যু: তদন্ত প্রতিবেদন না পেয়ে বিক্ষোভ
তাৎক্ষণিকভাবে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় সায়মাকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তার পালস বিপি কিছু নেই।
এ অবস্থায় অক্সিজেন দিতে প্রায় ১০ মিনিট বিলম্ব হয়। তারপর সেখান থেকে সায়মাকে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এসময় অধ্যাপক ফরিদ বলেন, ‘আমরা তার পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তার আগে থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল এবং সে ইনহেলার নিতো। তারপরও কেন তাকে সাঁতারে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। একজন শিক্ষার্থী ডুবে যাওয়ার ২০ মিনিট পরেও কেউ কেন খেয়াল করলো না, এটার প্রশ্নও থেকে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাঁতার কাটার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন বা মেডিকেলের চিকিৎসকের কোনো অবহেলা বা গাফিলতি আমরা লক্ষ্য করিনি। তারা টের পাওয়ার পর যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করেছেন। তবে মেডিকেল সেন্টারে দক্ষ নার্স বা কর্মচারী না থাকায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। যে বিষয়টা বারবার সামনে আসছে যে, প্রশিক্ষক সাঁতার জানেন না। এটা সত্য নয়, তিনি সাঁতার পারেন। আমরা এখন পর্যন্ত এ তথ্যগুলো পেয়েছি। বাকিটা চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হবে।’
এসময় সিনেট ভবনে উপস্থিত ছিলেন উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখার আলম মাসউদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ড. সিদ্দিকুর রহমানসহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
মনির হোসেন মাহিন/এসআর/জিকেএস

9 hours ago
4









English (US) ·