তেজগাঁও বিভাগ যেন অপরাধীর অভয়ারণ্য, হরহামেশাই খুন-ধর্ষণ

2 hours ago 4

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অপরাধের চিত্র আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। হরহামেশাই ঘটছে খুন, ছিনতাই, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা। অপরাধীদের লাগাম টানতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালালেও খুব একটা সুফল মিলছে না।

পুলিশের ভাষ্য, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে অপরাধের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অপরাধ সংঘটিত করে গাঢাকা দিচ্ছেন অপরাধীরা। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন

যেসব কারণে বাড়ছে অপরাধ

মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, নির্মূল সম্ভব নয়: তেজগাঁও ডিসি

মোহাম্মদপুরে অভিযান: বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ১৩ জন গ্রেফতার

জেনেভা ক্যাম্পের ‘দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী’ চুয়া সেলিম গ্রেফতার

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজারসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ। স্থানীয় শিশু-কিশোর-যুবকদের খেলাধুলায় মুখর থাকে মাঠটি। গত ২২ অক্টোবর রাতে এই মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে ধূমপান করছিলেন স্থানীয় জুনিয়র গ্রুপের যুবক সাজিদ। বিষয়টি দেখে ফেলেন সিনিয়র গ্রুপের লিমন নামের একজন। এসময় লিমনসহ সেখানে উপস্থিত সিনিয়র গ্রুপের আরও ১০-১২ জন জুনিয়র সাজিদকে চড়-থাপ্পড় দেন। এরপরই শুরু হয় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। একপর্যায়ে সিনিয়র গ্রুপের ছুরিকাঘাতে খুন হন জুনিয়র গ্রুপের মাইন উদ্দিন মনু (২৩)।

ডিএমপির তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে তেজগাঁও বিভাগে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে মোট মামলা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৮টি। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে ২৭৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৩৭টি, মার্চে ২৭৬টি, এপ্রিলে ২৩৩টি, মে মাসে ২৬৯টি, জুনে ২০৫টি ও জুলাইয়ে ২৪৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৬ হাজার ২৩৩ জনকে।

এছাড়া মাদক কারবার নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১১ আগস্ট মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া চলে। দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় ‘বুনিয়া সোহেল’ ও ‘চুয়া সেলিম’ গ্রুপের মধ্যে। এ ঘটনায় শাহ আলম (২২) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

তেজগাঁও বিভাগ যেন অপরাধীর অভয়ারণ্য, হরহামেশাই খুন-ধর্ষণ
ঢাকা মহানগর পুলিশের লোগো/ফাইল ছবি

একই এলাকায় গত ২৩ অক্টোবর ভোর পৌনে ৪টার দিকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়ে জাহিদ হোসেন (২০) নামের এক তরুণ নিহত হন।

শুধু মাইন উদ্দিন মনু, শাহ আলম কিংবা জাহিদ হোসেন নন, সাম্প্রতিক সময়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের বিভিন্ন থানা এলাকায় অহরহ সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধ। রাজধানীর আটটি জোনের ৫০টি থানার মধ্যে পাঁচটি থানা নিয়ে গঠিত ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগ। থানাগুলো হলো—তেজগাঁও থানা, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলানগর এবং হাতিরঝিল থানা। এরমধ্যে মোহাম্মদপুর থানাধীন জেনেভা ক্যাম্প অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন
আন্দোলন সামলাতেই বেশি ব্যস্ততা, ৭ মাসে হত্যা-ডাকাতিসহ ১০৪০ মামলা

রাজধানীতে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে গ্রেফতার ১৩

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৭২

তেজগাঁওয়ের ৬ থানা এলাকায় দিনব্যাপী পুলিশের অভিযান, গ্রেফতার ৭৪

ডিএমপির পরিসংখ্যানে অপরাধের চিত্র

ডিএমপির তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে তেজগাঁও বিভাগে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে মোট মামলা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৮টি। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ২৭৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৩৭টি, মার্চে ২৭৬টি, এপ্রিলে ২৩৩টি, মে মাসে ২৬৯টি, জুনে ২০৫টি ও জুলাইয়ে ২৪৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৬ হাজার ২৩৩ জনকে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৬৮৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৮৪৭ জন, মার্চে ৭৫৬ জন, এপ্রিলে ৭৫৯ জন, মে মাসে ১ হাজার ৩১৫ জন, জুনে ৯৪৭ জন ও জুলাইয়ে ৯২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে ক্রাইমের (অপরাধের) ধরন চেঞ্জ হয়েছে। অপরাধকারীরাও ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তবে পুলিশও কৌশল পরিবর্তন করে অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পেট্রোল টিম সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছে।’
—ইমাউল হক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, শেরেবাংলা নগর থানা

তেজগাঁও বিভাগের বিভিন্ন থানায় করা মামলার তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে শুধু ডাকাতির ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে একটি, ফেব্রুয়ারিতে একটি, মার্চে একটি, এপ্রিলে একটি এবং জুলাই মাসে একটি। এছাড়া দস্যুতার ঘটনায় জানুয়ারি মাসে ১৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ৭টি, মার্চে ৬টি, এপ্রিলে ১০টি, মে মাসে ৯টি, জুনে ৮টি, জুলাইয়ে ১০টিসহ মোট ৬৩টি মামলা হয়েছে।

৭ মাসে খুনের ঘটনায় ৩৫ মামলা

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খুনের মামলা হয়েছে একটি, ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচটি, মার্চে দুটি, এপ্রিলে পাঁচটি, মে মাসে চারটি, জুনে ছয়টি ও জুলাইয়ে ১২টিসহ মোট ৩৫টি মামলা হয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগ যেন অপরাধীর অভয়ারণ্য, হরহামেশাই খুন-ধর্ষণ
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মাদক, অস্ত্র ও টাকাসহ গ্রেফতার ব্যক্তিরা/ছবি: সংগৃহীত

এছাড়া জানুয়ারিতে দ্রুত বিচার আইনে ১০টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫টি, মার্চ মাসে ৭টি, এপ্রিল মাসে ৮টি, মে মাসে ১১টি, জুন মাসে সাতটি ও জুলাই মাসে ছয়টিসহ সাত মাসে মোট ৬৪টি মামলা হয়েছে।

‘গত কয়েক মাসের যে পরিসংখ্যান, এটার ওপর ভিত্তি করে আমরা কিছু কিছু জায়গাকে অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এই জায়গাগুলোতে ফ্রিকোয়েন্টলি (ক্রমাগত) অপরাধ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। সেই জায়গাগুলো মার্ক (চিহ্নিত) করে আমরা ব্লক রেইড দেওয়ার চেষ্টা করি।’ —ইবনে মিজান, ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি)

জানুয়ারি মাসে দাঙ্গার ঘটনায় মামলা হয়েছে দুটি, ফেব্রুয়ারিতে ছয়টি, মার্চে একটিসহ মোট ৯টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সাত মাসে ডাকাতি, দস্যুতা, খুন, দ্রুত বিচার আইন ও দাঙ্গার ঘটনায় মোট ১৭৬টি মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন
অক্টোবরে ডিএমপির ২৩২৪ ফৌজদারি ও ৩৪৩ ট্রাফিক মামলা নিষ্পত্তি

জেনেভা ক্যাম্পে পেশাদার ছিনতাইকারীসহ ২৩ জন গ্রেফতার

জেনেভা ক্যাম্পে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে তরুণ নিহত

জেনেভা ক্যাম্পে সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের অভিযানে গ্রেফতার ১৭

ধর্ষণের অভিযোগে সাত মাসে ৪১ মামলা

ধর্ষণের ঘটনায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনটি, ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি, মার্চে আটটি, এপ্রিলে ছয়টি, মে মাসে পাঁছটি, জুনে আটটি ও জুলাই মাসে ছয়টিসহ মোট ৪১টি মামলা হয়েছে।

অন্যভাবে নির্যাতনের শিকারের ঘটনায় জানুয়ারি মাসে ১১টি, ফেব্রুয়ারিতে ১০টি, মার্চে ৮টি, এপ্রিলে ৭টি, মে মাসে তিনটি, জুন মাসে সাতটি ও জুলাই মাসে পাঁচটিসহ মোট ৫১টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ধর্ষণ ও অন্যভাবে নির্যাতনের ঘটনায় মোট ৯২টি মামলার ঘটনা ঘটেছে।

শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৫৭ মামলা

জানুয়ারি মাসে তিনটি, ফেব্রুয়ারিতে পাঁচটি, মার্চে তিনটি, এপ্রিলে ১০টি, মে মাসে ৯টি, জুন মাসে ১১টি ও জুলাই মাসে ১৬টিসহ মোট ৫৭টি মামলা হয়েছে।

অপহরণের ঘটনায় সাত মাসে মোট ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে চারটি, মার্চে দুটি, এপ্রিলে দুটি, জুন মাসে দুটি ও জুলাই মাসে তিনটি মামলা হয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগ যেন অপরাধীর অভয়ারণ্য, হরহামেশাই খুন-ধর্ষণ
জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযান/ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় ফেব্রুয়ারিতে একটি, মার্চে দুটি, জুন মাসে একটি ও জুলাই মাসে একটিসহ মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। সিঁধেল চুরির ঘটনায় জানুয়ারি মাসে ৮টি, ফেব্রুয়ারিতে দুটি, মার্চে ৫টি, এপ্রিলে ৯টি, মে মাসে ১২টি, জুন মাসে ৭টি ও জুলাই মাসে পাঁচটি মামলা হয়েছে। অন্যান্য চুরির ঘটনায় জানুয়ারি মাসে ১৮টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৭টি, মার্চে ২১টি, এপ্রিলে ২১টি, মে মাসে ১৭টি, জুনে ১১টি ও জুলাই মাসে ১০টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এই সাত মাসে শিশু নির্যাতন, অপহরণ, পুলিশ আক্রান্ত, সিঁধেল চুরি ও অন্যন্য চুরির ঘটনায় মোট ২৩৮টি মামলার ঘটনা ঘটেছে।

‘পুলিশ কেন পারছে না? এই না পারার জায়গায় আমরা কিছু বিষয় দেখি। প্রথমত এখনো বিভিন্ন জায়গায় আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে পুলিশ নিজেরাই আক্রমণের শিকার হচ্ছে। বিভিন্নভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ, মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা ও অসম্মানজনক শব্দ উচ্চারণের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে পুলিশের মনোবল হারিয়ে যায়। এই সাত মাসে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার এটা একটি অন্যতম কারণ।’ —ড. তৌহিদুল হক, ঢাবির সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ

এছাড়া, ফেব্রুয়ারি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি মামলা হয়েছে। অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মার্চ মাসে একটি মামলা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় জানুয়ারি মাসে ৯টি, ফেব্রুয়ারিতে দুটি, মার্চে চারটি, এপ্রিলে তিনটি, মে মাসে ৯টি, জুন মাসে একটি ও জুলাই মাসে দুটি মামলা হয়েছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে সাত মাসে মামলা হয়েছে মোট ছয়টি। জখম সংক্রান্ত ঘটনায় সাত মাসে ৬৮টি মামলা হয়েছে। মুদ্রা ও স্ট্যাম্প সংক্রান্ত মামলা হয়েছে দুটি। অন্যান্য ঘটনায় জানুয়ারি মাসে ৯৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ৭৯টি, মার্চে ৮৭টি, এপ্রিলে ৬৪টি, মে মাসে ৭৫টি, জুন মাসে ৫০টি ও জুলাই মাসে ৬৯টিসহ মোট ৫২৪টি মামলা হয়েছে।

উদ্ধারজনিত কারণে মামলার তথ্যে বলা হয়, অস্ত্র আইনে ফেব্রুয়ারিতে দুটি, মার্চে ৮টি, এপ্রিলে দুটি, মে মাসে ১০টি ও জুলাই মাসে ১৩টি মামলা হয়েছে। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে সাত মাসে মামলা হয়েছে মোট ৭টি। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে একটি, মার্চে একটি, এপ্রিলে দুটি, জুন মাসে একটি ও জুলাই মাসে দুটি মামলা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হওয়া মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে ৮৫টি, ফেব্রুয়ারিতে ৭১টি, মার্চে ৯২টি, এপ্রিলে ৭৫টি, মে মাসে ৮১টি, জুন মাসে ৭৯টি ও জুলাই মাসে ৭৫টিসহ মোট ৫৫৮টি মামলা হয়েছে। চোরাচালানের ঘটনায় মামলা হয়েছে এপ্রিলে দুটি ও জুলাই মাসে একটি।

যা বলছেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাউল হক জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। পাশাপাশি সময়ে সময়ে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

ওসি ইমাউল হক বলেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে ক্রাইমের (অপরাধের) ধরন চেঞ্জ হয়েছে। অপরাধকারীরাও ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। তবে পুলিশও কৌশল পরিবর্তন করে অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পেট্রোল টিম সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছে।’

কথা হলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি কাজী মো. রফিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কন্টিনিউ (নিয়মিত) অভিযান পরিচালনা করছি। প্রথমত অপরাধ যেন না হয় এজন্য প্রিভেন্টিভ অ্যারেস্ট করছি। সব অপরাধের ঘটনা তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের আভিযানিক দলও এ নিয়ে কাজ করছে।’

অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশেষজ্ঞের মত

আইনের জোরালো প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিসংখ্যানিকভাবে অপরাধের যে সংখ্যা দেখছি তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। অপরাধের সংখ্যা যে বাড়ছে এটা পরিসংখ্যানের তথ্যে স্পষ্ট। অপরাধের সংখ্যা বাড়লে অভিযুক্তের সংখ্যাটাও বাড়বে।’

গত সাত মাসে পুরো ঢাকা শহরে যে অপরাধ ঘটেছে সেগুলো আসলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না কেন? প্রশ্ন করলে ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশ কেন পারছে না? এই না পারার জায়গায় আমরা কিছু বিষয় দেখি। প্রথমত এখনো বিভিন্ন জায়গায় আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে পুলিশ নিজেরাই আক্রমণের শিকার হচ্ছে। বিভিন্নভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ, মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা ও অসম্মানজনক শব্দ উচ্চারণের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে পুলিশের মনোবল হারিয়ে যায়। এই সাত মাসে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার এটা একটি অন্যতম কারণ।’

‘অপরাধ বেড়ে যাওয়ার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে পুলিশের মধ্যে সমন্বয়হীনতা। সমন্বয়হীনতাটা এমন যে, মাঠের অপরাধ পরিস্থিতির সঙ্গে মিল রেখে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করার জন্য যে ধরনের সিদ্ধান্ত বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার পুলিশ সেটি গ্রহণ করতে পারছে না। কারণ মাঠের পুলিশের সঙ্গে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের পুলিশের সমন্বয়হীনতা আছে। এখানে যথেষ্ট আস্থার সংকটও আছে।’

তৌহিদুল হক বলেন, মাঠের পুলিশরাই সাধারণত উচ্চপর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করে। কিন্তু মাঠের পুলিশ যখন কোনো আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে বিপদে পড়ে, আক্রমণের শিকার হয় তখন পুলিশ কর্তৃপক্ষ এটিকে ব্যক্তির দায় হিসেবে দেখে। অনেক সময় ভুক্তভোগীকে বদলি করে দেয়। কখনো মামলা গ্রহণ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও তার দায় নিতে চায় না। এ প্রসঙ্গগুলো অতীতে লক্ষ্য করেছি, এখনো সেটা আছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল বলেন, থানায় গিয়ে দেখা যাবে অনেকগুলো টহল টিম মাঠে আছে, মাঠে গিয়ে দেখা যাবে আসলে টহল টিমগুলো মাঠে নেই। এই যে টহল কার্যক্রমে অনীহা, এর পেছনে আবার কিছু বাস্তবতা আছে। তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ নেই, টহলের ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রণোদনা থাকা দরকার সেগুলো নিয়মিতভাবে তারা পান না। আবার অপরাধীদের আক্রমণে টহলে থাকা পুলিশ সদস্য আহত বা নিহত হয়েছেন এমন উদাহরণও আছে। এক্ষেত্রে পুলিশের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করে পুলিশের হারানো মনোবল পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ড. তৌহিদুল।

যা বলছেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত কয়েক মাসের যে পরিসংখ্যান, এটার ওপর ভিত্তি করে আমরা কিছু কিছু জায়গা অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এই জায়গাগুলোতে ফ্রিকোয়েন্টলি (ক্রমাগত) অপরাধ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। সেই জায়গাগুরো মার্ক (চিহ্নিত) করে আমরা ব্লক রেইড দেওয়ার চেষ্টা করি।’

অপরাধপ্রবণ এলাকায় পুলিশি টহল ও বাইক পেট্রোল জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে ইবনে মিজান বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু জায়গায় পিকেট ডিউটিও রাখা হয়েছে। এই বছরের শুরুর দিকে যখন আমি এখানে (তেজগাঁও জোনের ডিসি হয়ে) আসি তখন দিনে-দুপুরে চাপাতি নিয়ে লোকজন মহড়া দিত। নানা অপরাধের ঘটনা ঘটতো। বর্তমানে সেই ঘটনাগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ হয়েছে।’

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা কিছু টাইম বের করছি যে, কোন সময় অপরাধ বেশি হয়। যেমন ভোর ও সন্ধ্যার দিকে অপরাধ বেশি হতো। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভোরে ও সন্ধ্যার দিকে আমরা টহল জোরদার করেছি। সেইসঙ্গে আমাদের বিট অফিসাররা সাধারণ জনগণকে সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি জেনেভা ক্যাম্পে মাঝেমধ্যেই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার ও বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্রসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির আসামি গ্রেফতার করেছি। ফলে সেখানে অপরাধের যে প্রকোপ সেটা কমে গেছে।’

জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। অপরাধ দমন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, মাদকবিরোধী অভিযান, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

কেআর/এমএমকে/এমএমএআর/এমএফএ/জেআইএম

Read Entire Article