দেশের ক্যানসার প্রতিরোধ অবহেলিত, সিস্টেমে গলদ: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

1 week ago 8

‘আমরা প্রিভেনশন থেকে দূরে চলে যাচ্ছি’ উল্লেখ করে প্রিভেনশন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে সোমবার (২৭ অক্টোবর) জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আগে প্রিভেনশনের জন্য যে বাজেট ছিল, সেটা কমে যাচ্ছে। আমরা কোথায় যেন প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অবহেলা করছি। স্কুল থেকেই যদি মেয়েদের সচেতন করা যেত, তাহলে অনেক রোগ আগে থেকেই ধরা পড়ত। লজ্জা নয়, সচেতনতা বাড়ানোই এখন জরুরি। প্রিভেনশন তো লজ্জার বিষয় নয়। এটা জয় করতে হবে। প্রত্যেকের ঘরে নারী আছে, তাদের সচেতন করি মমতার সঙ্গে।

নুরজাহান বেগম বলেন, আজ নিচে যখন পেশেন্টদের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম, বুঝলাম ক্যানসার শুধু রোগীর নয়, পুরো পরিবারের দুর্যোগ। একজন স্তন ক্যানসার রোগীর চিকিৎসায় ২৬ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে—সে নিজের থেকে নয়, ধার করে এসেছে। এই ব্যথা আমাদের বোঝা উচিত।

তিনি বলেন, তামাকের কারণে অনেক ক্যানসার হয়, কিন্তু প্রতিরোধে আমরা কার্যকর হতে পারিনি। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, টোব্যাকো থেকে আমরা যে রাজস্ব পাই, তার চেয়ে চিকিৎসায় খরচ করি বেশি। তামাক বন্ধ করা সম্ভব, কিন্তু পারছি না। এজন্য সময় ও সঠিক পরিকল্পনা দরকার।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ত্রুটির দিকেও ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, একটা মেশিনের দাম ২৪ কোটি, আরেকটার ৩৮ কোটি—দুইটার কোয়ালিটি একই অথচ দামের এত পার্থক্য! কেন? কারণ আমাদের সিস্টেমে গলদ আছে। যারা প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করে, তারা আন্তর্জাতিক টেন্ডারে সরাসরি কিনতে পারে, কিন্তু সরকার পারে না—এটা কেন হবে?

তিনি আরও বলেন, আমাদের টাকার স্বল্পতা আছে, কিন্তু আজ যে সমস্যাগুলো দেখছি সেগুলো শুধু অর্থের নয়, সিস্টেমের। সিস্টেমটা না ভাঙলে আমরা এগোতে পারব না।

নুরজাহান বেগম হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও পরিবেশ নিয়েও মন্তব্য করেন। হাসপাতালকে হাসপাতালের মতো রাখতে হবে। একজন রোগীর সঙ্গে অনেক এটেন্ডেন্ট আসে—এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা, করিডরে ঘুমানো—এসব বন্ধ করতে হলে রোগীদেরও শিক্ষিত করতে হবে, বলেন তিনি।

শেষে তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি, প্রিভেনশন ও শৃঙ্খলার জায়গায় কাজ শুরু করি। এতে শুধু রোগ নয়, পুরো ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।

তিনি বলেন, আজ আপনারা ক্রেস্ট ও ফুল দিলেন। এগুলোর দরকার নেই। এই টাকা রোগীর পেছনে খরচ করতে পারি। আরও অনেক কিছু পরিবর্তনের আছে। পরিবর্তন করতে হলে সঙ্গী সাথী সে রকম লাগে। সেটা আমাদের তৈরি হয়নি। ট্রাস্ট তৈরি হয়নি। এটা তৈরি করতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, বেশির ভাগ মানুষ সেবার বাইরে থাকে ৷ স্ক্রিনিং দেরি হওয়ার কারণে চিকিৎসাও দেরি হয়। তাতে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। এদিকে আবার ১৭ কোটি মানুষের একটা মাত্র হাসপাতাল। সবার নির্ভরতা এটার ওপর। মানুষ সুদূর গ্রাম থেকে আসেন, সিরিয়াল পান না। এখানে এসে রাস্তায় শুয়ে বসে থাকেন। দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকে সেবা নেন।

তিনি বলেন, আমার বড় বোন ক্যানসারে মারা গেছেন। আমাদের পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে মনে করি, এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। অথচ আমাদের এখনই সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত। যে কোনো সময় ক্যানসারে আক্রান্তের তালিকায় আমাদেরও যোগ দিতে হতে পারে। এজন্য আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু জাফর বলেন, অসংক্রামক ব্যাধিতে ৭১ শতাংশ মানুষ মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে ক্যানসা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। দিন দিন এ সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এটার প্রতিরোধ ও প্রতিকারে আমাদের সবার সচেষ্ট হতে হবে।

পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমাদের শুধু অবকাঠামো ও মেশিনারিজ হলেই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন দক্ষ জনবল। আমরা ৩০০ বেডের হাসপাতালের জনবল দিয়ে ৫০০ বেডের কাজ চালাচ্ছি। জনবলের প্রস্তাব এরই মধ্যে পাঠিয়েছি। এটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে। আশা করি, শিগগির আমরা জনবল বাড়াতে পারবো।

তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের দেশে বিশ্ব মানের ক্যানসার চিকিৎসা হয়। কেমোথেরাপি ফ্রি দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি।

এসইউজে/এমআইএইচএস/এমএস

Read Entire Article