ধানের শীষ প্রতীক চান ৪ বিএনপি নেতা

4 hours ago 6

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-২ আসনে কাকে দেওয়া হবে ধানের শীষের টিকিট সেটি এখনও নির্ধারণ করেনি বিএনপি। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনের সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। দিন যতই যাচ্ছে ততই উৎকণ্ঠা বাড়ছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গাতে চলছে আলোচনা।

এদিকে এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তাদের নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে গিয়ে সভা, সমাবেশ, গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়ে কুশল বিনিময় করছেন। সবাই যার যার অবস্থান বোঝানোর জন্য দিন-রাত সাধারণ মানুষজনদের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন।

মাদারীপুর-২ আসনে প্রথম দিকে বেশ কয়েকজনকে মনোনয়ন প্রত্যাশার জন্য দেখা গেলেও শেষ সময়ে মাঠে আছেন চারজন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এ চারজন হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি হেলেন জেরিন খান, মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহান্দার আলী জাহান, জেলা বিএনপির সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মিল্টন বৈদ্য ও মাদারীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব ও মাদারীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর-২ আসন হচ্ছে মাদারীপুর সদরের ১০টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও রাজৈর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে। আসনটি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নেতাকর্মীরা কেউ কারাগারে, কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আবার অনেকেই গাঢাকা দিয়েছেন। তাই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

আরও পড়ুন
ভোটের লড়াইয়ে দুই ‘ভূঁইয়া’, তৎপরতা নেই এনসিপির
প্রচারণায় এগিয়ে বিএনপির গউছ, মাঠে আছেন অন্যরাও
৪ ভাগে বিভক্ত বিএনপি, নির্ভার জামায়াত

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে একজন হলেন জাহান্দার আলী জাহান। তিনি মাদারীপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব। ১৯৭৯ সাল থেকে ৯৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের কলেজ কমিটি, পৌরসভা কমিটি, থানা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮১-৮২ বর্ষে মাদারীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র-ছাত্রী সংসদের জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি দুইবার জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশী জাহান্দার আলী জাহান বলেন, ‘৪৬ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে আছি। ছাত্রদল দিয়ে রাজনীতি শুরু করি। পরে বিএনপি করছি। একাধিক বার জেল খেটেছি, নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তবুও রাজনীতি ছাড়িনি। তৃনমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সব সময় ছিলাম, এখনও আছি। তাই আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দিবেন। আর মনোনয়ন পেলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো ইনশাল্লাহ। তবে দল সেটা সিদ্ধান্ত নিবেন, তাই মেনে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবো।

বিএনপির আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হচ্ছেন ঢাকার ইডেন কলেজের সাবেক ভিপি, মাদারীপুরের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান। তিনি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগসহ সভা-সমাবেশ করে চলছেন।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এ নেত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশের মানুষ তাদের মূল্যবান ভোট প্রয়োগ করতে পারেনি। বাংলাদেশের জনগণ হচ্ছে বাংলাদেশের মালিক। এ মালিকানা প্রমাণ করার প্রথম ধাপ হচ্ছে তাদের মূল্যবান ভোট প্রয়োগ। দীর্ঘ ১৭ বছর বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আগামী নির্বাচনে সৎযোগ্য যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন করবে সে সমস্ত নেতাদের আমরা ভোট দিয়ে জাতীয় সংসদে পাঠানোর জন্য কাজ করব। মাদারীপুর-২ আসনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের পাশে থাকতে চাই।’

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য ফ্রন্টের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক মেধাবী ছাত্র মিল্টন বৈদ্য। তিনি ২০১৪ সালে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হয়ে রাজৈর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেন। এরপর ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনীত এমপি প্রার্থী হয়ে মাদারীপুর-২ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে কেন্দ্রে ও মাদারীপুরের মাঠে ছিলেন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী মিল্টন বৈদ্য নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ, সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং করছেন।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মিল্টন বৈদ্য বলেন, ‘আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দিবেন। কারণ আমি বিএনপির দুর্দিনে একজন কর্মী হিসাবে ও তারেক রহমানের একজন কর্মী হিসাবে মাঠে ছিলেন। গণসংযোগে তৃণমূল পর্যায়ে অনেক সাড়া পেয়েছি। তাই দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো।’

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন মাসুদ পারভেজ। তিনি জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল মাদারীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মাদারীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং একজন আইনজীবী। তিনি স্কুল জীবন থেকে শুরু করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মাদারীপুর জেলা শাখার সাবেক ১ নম্বর সদস্য, পাঠাগার সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, ছাত্রদল মাদারীপুর সদর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি, মাদারীপুর সরকারি কলেজের ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন।

অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর-২ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে গণসংযোগ, সভা ও সমাবেশ করে আসছি। তাই দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে আশা করছি।’

মাদারীপুর শহরের পুরানবাজার এলাকার চায়ের দোকানদার নুরুল হক বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা এখানে মানুষজন চা খেতে এসে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা কথা বলেন। এখন সবার একই কথা মাদারীপুর-২ আসনে কে পাবেন বিএনপির মনোনয়ন। এ নিয়েই গভীর রাত পর্যন্ত চলে নানা আলোচনা।

মাদারীপুর শহরের থানতলী এলাকার বাসিন্দা সেলিম হোসেন বলেন, ‘যেখানে যাই সেখানে শুনতে পাই নির্বাচনের কথা। কারণ মাদারীপুর-১ ও মাদারীপুর-৩ আসনের বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও মাদারীপুর-২ আসনে এখনও দেওয়া হয়নি। যদিও মাদারীপুর-১ আসনের মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে। তবুও সবার মুখে মুখে এখন একটাই কথা মাদারীপুর-২ আসন থেকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। মাদারীপুরবাসী এখন অপেক্ষায় আছে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দেখার জন্য।

ইতোমধ্যে মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী দিলেও একদিন পর তা স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। অপরদিকে মাদারীপুর-৩ আসনে আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু এখনও মাদারীপুর জেলা শহর মাদারীপুর-২ আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি।

আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article