নগর-ভিখারি
এতদূর থেকে এত কাছে এসে যেভাবে ফিরে গেলে অনেক দূরত্বে আরও
পৃথিবীর সব শূন্যতা একদিনে দখল নিল আমার সমগ্র। আর
আমি পথে পড়ে একা। ভিন্ন এক গ্রহে তোমার নিজস্ব বাড়ি এতটাই
সুরক্ষিত যে, আমি কি সেখানে গিয়ে অসভ্যের মতো যখন তখন
উঁকি দিতে পারি!
যেটুকু একক বুঝি, পারাপারে যে-বৈঠাখানি নদীবুক ফালাফালা করে,
জলের গোপন টান তাকেই জড়িয়ে ধরে আরও তীব্র মাতাল উচ্ছ্বাসে।
তবু ভয়, সব ফেরিঘাট যদি, সব যাতায়াত বন্ধ হঠাৎ জোয়ারের
তীব্র জলোচ্ছ্বাসে!
মায়ামধ্যরাতে তবু তুমি পথে, ঘন ছায়াময়, আলোআঁধারিতে আঁকা।
সেসময় তোমাকে পাহারা দেয় নগর-ভিখারি এক, নগ্নপ্রায়, একা।
****
আর্তনাদ
কে কার আত্মার আর্তনাদ শোনে দীর্ঘ নিঃশ্বাসের আখ্যাপত্রে আঁকাজোখা
তরঙ্গ প্রবাহে, যেখানে ঈশ্বরও ঠিকানা বদলায় নিজেকে বাঁচাতে
ঘনঘন। কোন ইচ্ছার দাসত্ব মানে না সে, কোন
প্রাতিষ্ঠানিক আবেগের কাছে অন্তত। ধর্মযাজকেরা স্বীকার করে না
প্রভুর যন্ত্রণা কোন এক মানুষেরই যন্ত্রণা ছিল ক্রশবিদ্ধকালে।
কে কার আত্মার আর্তনাদ শোনাতে পারে আত্মঘাতী হওয়ার সময়
প্রেমের হদিস যদি কোথাও মেলে না আর কবিতার সমুদ্রবিকেলে।
জলপরী, জলেই বিহার করো, যে-পাগল ভ্রমণ ভেবেছে ভালোবাসা
যাঁর চোখে ওই বোধ অনুবাদে ঈশ্বরীকে দেখা, নিরাশার নৈকট্যে যে
বিপদ সীমানা, নজরে পড়ে না তখন, মৃত্যুসুখ অসীম বোধহয়।
প্রতিদিন অর্থহীন ঝটিকা সফরে সাদা পাতাজুড়ে যত প্রেমালাপ
অর্ধেক মিথ্যে তার অর্ধেক কাল্পনিক। এই ভাষ্য যদি জলেতে মরুতে,
সহজ মরণে প্রতিটি মুহূর্ত তখন ঠেলে দেয় তাঁকে চিরপ্রণম্য
আগুনের প্রাচুর্য কুড়োতে।
****
পথপর্ব
এখনো খানিক বাকি। পৌঁছতে যেটুকু সময়।
আনন্দপ্রহরে জেগে বসে দীর্ঘক্ষণ যদি তুমিও একাকী,
বাকিটা না-হয় আমরা দুজন কল্পজোরে হাঁটি।
আমিও বিরহ বুঝি, সীমাহীন দূরত্ব বুঝি ভূমি ও আকাশে কতটা।
বটবৃক্ষ পারে। মানুষ পারে না হাজার বছর ধরে একাকী থাকায়।
দৃষ্টির দখলে আকাশ যেটুকু, কোন প্রান্তে তার কার কার বসবাস
এই তথ্য পেতে কুলিকের হাতে আঁকা গুপ্ত চিত্রখানি বহু কষ্টে আমি
সংগ্রহ করেছি বটে, এত আঁকিবুঁকি এত অর্থবহ তা, প্রকৃত উদ্ধারে
আরও কতদিন নিদ্রাহীন রাত্রিযাপন সম্ভবত মৃত্যু তার আগাগোড়া
সবটুকু জানে।
****
চক্রান্ত
এক আগুনের ফুলকিতে জ্বলে ওঠে আরেক আগুন তীব্রতায় যা ছাড়িয়ে যায়
ব্রহ্মাণ্ড-জ্বলন। আর্তনাদকালে পৃথিবীর সব ভাষা একভাষা একধ্বনিময়।
যত ঘরবাড়ি, বাসযোগ্য যত জমি যুদ্ধকালীন প্রতিদিন পোড়ে, সংখ্যা-তথ্য বলে
শুধু এই রাজ্যেই গরিবের ঝুপড়ি পোড়ে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সংবৎসর।
যুদ্ধ শুরু হ’লে আগে থেকে আঁচ করা যায় কোথায় কোথায় আছড়ে পড়তে পারে
আগুনের বোমা। ঝুপড়ি পোড়ানোর চক্রান্ত কি হতভাগ্যরা কোনদিন আগেভাগে
এতটুকু টের পায় কেউ? বরং আগুন জ্বলতে দেখে লক্ষ্মীপেঁচা উড়ে গিয়ে বসে
নীলনকশা করা গগনচুম্বী এক কাল্পনিক বাসে। শুধু গরিবের অশ্রু আর
ঘোলা গঙ্গার জলে বেয়াদব চিহ্ন সব ধুয়েমুছে সাফ পোড়া বস্তির আশেপাশে।
এসইউ/এএসএম

2 days ago
9









English (US) ·