নড়াইলে কমেছে খেজুর গাছ, গাছিরও অভাব

7 hours ago 5

আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহের এটাই সেরা সময়। রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার গ্রামীণ শীতকালীন ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা-পুলি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছের সংখ্যা কমে গেছে, গাছির অভাবও প্রকট। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে চিরচেনা শীতের রসনাবিলাসী সংস্কৃতি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও হাট-বাজারে খেজুরের পাটালি ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা। তাই স্থানীয়ভাবে খেজুর রস ও গুড় এখনো জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য হিসেবে টিকে আছে। এ ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করতে স্থানীয় সাংবাদিক মো. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী উদ্যোগ নেন। তিনি রাজশাহী থেকে তিনজন অভিজ্ঞ গাছি এনে স্থানীয়দের খেজুর গাছ কাটা ও রস সংগ্রহে উৎসাহিত করেন। এরই মধ্যে খেজুর গাছে রস আসতে শুরু করেছে। বিষয়টি জানার পর কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় গাছিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

রাজশাহী থেকে আসা গাছি আজিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চার বছর আগে লোহাগড়ার লাহুড়িয়ায় খেজুর গাছ কাটতে এসে সাংবাদিক খাইরুল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। তার সঙ্গে কথা বলে কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার মহাজন গ্রামে এসেছি। গাছের মালিকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি অনেক সহযোগিতা করেছেন। বর্তমানে নড়াগাতী থানার মহাজন উত্তরপাড়া ও কাঠাদুরা গ্রামে প্রায় ২০০ খেজুর গাছ কেটেছি। আমাদের ইচ্ছা, এলাকার মানুষকে খাঁটি খেজুর রস ও গুড় খাওয়ানো।’

গাছ মালিক নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার খেজুর গাছগুলো গাছির অভাবে কাটাতে পারতাম না। সাংবাদিক ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে গাছিদের গাছ কাটতে বলি। এতে আমরা রস ও গুড় খেতে পারবো। গাছের জন্য টাকাও পাবো।’

আরও পড়ুন
ঝিনাইদহে খেজুর রস সংগ্রহে বেড়েছে গাছিদের ব্যস্ততা
ঘাস থেকে গুড় তৈরি করে স্বাবলম্বী খাদিজা বেগম

উপজেলার কাঠাদুরা গ্রামের মেহেদি হাসান তুষার জাগো নিউজকে বলেন, ‘একসময় কালিয়া খেজুর রসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখন গাছ যেমন কমে গেছে; তেমনই গাছিও নেই। সাংবাদিক খাইরুল ভাইয়ের উদ্যোগে আশার আলো দেখছি।’

স্থানীয় সাংবাদিক মো. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিলীন হয়ে যাওয়া গ্রামের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমার এই উদ্যোগ।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘খেজুর রস ও গুড় গ্রামীণ ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাংবাদিকের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে স্থানীয় গাছিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে তারা আবারও এ পেশায় আগ্রহী হন।’

তিনি বলেন, ‘শীতের মৌসুমেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হবে। উদ্যোগটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে কালিয়া উপজেলায় আবারও শীতের সকাল ভরবে খেজুর রস ও পিঠা-পুলির ঘ্রাণে। এতে শুধু ঐতিহ্যই নয়; স্থানীয় অর্থনীতিও হবে চাঙা। গ্রামীণ জীবিকায় আসবে নতুন সম্ভাবনা।’

কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রামীণ ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতির শেকড়। আধুনিকতার ভিড়ে এসব ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। উদ্যোগের মাধ্যমে খেজুর রস, মৃৎশিল্পসহ হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো আবারও জীবন্ত করে তুলতে হবে। যাতে নতুন প্রজন্ম সংস্কৃতির এ গর্বকে জানতে ও ধারণ করতে পারে।’

হাফিজুল নিলু/এসইউ/এমএস

Read Entire Article