নবজাতকের পাশে চিরকুট ‘আমি এক হতভাগি, বাচ্চাটাকে কেউ নিয়ে যাবেন’

3 hours ago 12

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এক নবজাতককে ভর্তি করেন নানা-নানি পরিচয় দেওয়া এক দম্পতি। কিন্তু চিকিৎসক শিশুটির মা-কে নিয়ে আসতে বললে শিশুটিকে ওয়ার্ডের বেডে রেখেই উধাও হন তারা। এসময় শিশুটির পাশে রেখে যাওয়া ব্যাগে একটি চিরকুট, যাতে লেখা ছিল- ‘আমি একজন হতভাগি, পরিস্থিতির শিকার। বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের নবজাতক ইউনিটে এই ঘটনা ঘটে।

তবে এই ঘটনা জানাজানির পর অভিভাবকহীন এই শিশুকে দত্তক নিতে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, ব্যবসায়ী ও বিসিএস ক্যাডারসহ সন্তানহীন ২০০ জন যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

হানাপাতাল সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে শিশুটিকে পঞ্চম তলার শিশু ওয়ার্ডের নবজাতক ইউনিটের অতিরিক্ত ৩ নং বেডে ভর্তি করা হয়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুর মা-কে দেখতে চাইলে সঙ্গে থাকা দম্পতি নিজেদের নানা-নানি পরিচয় দেন এবং মা নিচে আছেন বলে জানান। চিকিৎসক মা-কে নিয়ে আসতে বললে তারা ‘আনতে যাচ্ছি’ বলে শিশুটিকে ফেলে রেখে উধাও হয়ে যান এবং আর ফিরে আসেননি।

পরে শিশুটির পাশে রেখে যাওয়া একটি ব্যাগে কিছু ওষুধ এবং একটি চিরকুট পাওয়া যায়। চিরকুটে লেখা ছিল: ‘আমি মুসলিম। আমি একজন হতভাগি পরিস্থিতির শিকার। বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন। বাচ্চার জন্ম তারিখ: ০৪-১১-২০২৫, রোজ মঙ্গলবার। এগুলো সব বাচ্চার ওষুধ, আমি মুসলমান জাতির মেয়ে। তবে ভর্তি টিকিটে শিশুটির মায়ের নাম ‘ইসু আরা’, ঠিকানা ‘ফুলবাড়ী, দিনাজপুর’ লিখা রয়েছে।

চিরকুট

বর্তমানে শিশুটিতে হাসপাতালের ডক্টরস্ রুমে রাখা হয়েছে।তাকে দেখভাল করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. গোলাম আহাদ, ডা. সানাউল্লাহ ও ডা. পল্লব কুমার দাস।

বিষয়টি নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. সানাউল্লাহ বলেন, এ ঘটনার পর বিষয়টি আমরা হাসাপাতালের পরিচালককে জানাই। তিনি আমাদেরকে শিশুটির দেখাশোনা করার জন্য বলেন। পরে আমরা শিশুটির স্বাস্থ্যে কথা বিবেচনায় নিয়ে উৎসুক মানুষের ভিড় এড়াতে ডক্টরস্ রুমে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। শিশুটি সুস্থ আছে।

শিশুটির ঠিকানার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিকিটে শিশুটির মায়ের নাম ইসু আরা, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর লিখা রয়েছে। শিশুটির মা ও স্বজনদের অনুসন্ধান চলছে।

তিনি আরও জানান, শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য কমপক্ষে ২০০ জন যোগাযোগ করছেন। শিশুটির স্বজন না পাওয়া গেলে তাকে কোথায় বা কার কাছে দত্তক দেওয়া হবে সে বিষয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে যারা দত্তক নিতে চাইছেন, তাদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। যারা শিশুটিকে নিতে চান, তারা সবাই নিঃসন্তান।


এমদাদুল হক মিলন/কেএইচকে

Read Entire Article