নারী সংস্কারবিষয়ক কমিশনকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে কমিশনের জমা দেওয়া রিপোর্ট বাতিল করে কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ওয়ান ইনিশিয়েটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্তৃক আয়োজিত ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বিতর্ক ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ দাবি জানান বক্তারা।
সভায় বক্তারা, যৌন পেশাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ সকল ধর্মের বিরোধী বলে অভিহিত করেন। তারা নারী কমিশনের প্রস্তাবিত রিপোর্টের বিভিন্ন অসংগতি এবং বিতর্কিত অধ্যায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
এ বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব। সভাপতির বক্তব্যে ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, নারী কমিশনের প্রস্তাবিত প্রতিবেদন নারী-পুরুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ। পতিতাবৃত্তির কুপ্রভাব নিয়ে বহুমুখী বিশ্লেষণ করে তিনি, এই জাতি বিনাশী প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন শুধু ধর্মের ওপর আঘাত আনেনি বরং নারীর মর্যাদাও ক্ষুণ্ন করেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. এইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, কমিশনের এসব সুপারিশ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান তৈরি হয়েছে। অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীকে সমান অধিকার, উত্তরাধিকার আইনে সমান অধিকার এবং শ্রম আইনে যৌনকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা একবারে অযৌক্তিক। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। তাই এই সুপারিশ বাতিল করে নতুনভাবে নারী সংস্কার কমিশন গঠন করতে তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, প্রতিবেদনে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার নামে মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান পারিবারিক আইনের সংস্কার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব আইনের পরিবর্তে অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীর জন্য বিয়ে, তালাক ও সন্তানের ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশের পাশাপাশি সব সম্প্রদায়ের জন্য আইনটিকে ঐচ্ছিক রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে সম্পদে নারীর ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে কমিশন। যেটা নারীর অধিকারের নামে নারীর উপর উল্টো চাপ সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন, পতিতাবৃত্তিকে শ্রমিকের স্বীকৃতির সুপারিশ করা হয়েছে, যা একজন নারীকে পৈশাচিক পুরুষের কাছে আরো নগণ্য করে তুলবে। নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে। জিনাহ, ব্যভিচার, অনাচার বৃদ্ধি পাবে। সমাজে শান্তির পরিবর্তে অশান্তি বিরাজ করবে। অনতিবিলম্বে নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে নতুনভাবে একটি কমিশন গঠন করতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুল মান্নানের পরিচালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী আরা খানম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, আইপাস বাংলাদেশের সিনিয়র অ্যাডভাইজর ডা. শামিলা নাহার, অ্যাডভোকেট সাবিকুন নাহার মুন্নি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক আরিফুর রহমান অপু, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীমা তাসনীম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহীন আরা আনোয়ারী, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের মহাসচিব ড. খলিলুর রহমান মাদানী, আয়নাঘরে দীর্ঘদিন নির্যাতিত লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক, সম্মিলিত নারী প্রয়াসের অ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি হাসিনা মমতাজ মারিয়া। পাশাপাশি মাসজিদুল জুমা কমপ্লেক্সের খতিব মাওলানা আবদুল হাই মো. সাইফুল্লাহ, মানারাত ইন্টারন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম আবদুল হান্নান, বুয়েটের ন্যানো ম্যাটেরিয়ালস এবং সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফকরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 5 months ago
                        124
                        5 months ago
                        124
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·