নিরাপত্তা শঙ্কায় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

1 day ago 9

কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা একটি রাজনৈতিক দলের ডাকা ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। গত দুদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আগুন দেওয়া হয়। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও উদ্বিগ্ন।

এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা শঙ্কায় বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১২ ও ১৩ নভেম্বর) সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সশরীরের পরিবর্তে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে।

দুইদিন পর আবার সশরীরে ক্লাস নেওয়া হতে পারে বলেও শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের দেওয়া নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিরাপত্তা শঙ্কার পরিবর্তে ‘অনিবার্য কারণ’ উল্লেখ করেছে।

সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো—নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ), শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি), ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। ড্যাফোডিলে ১২ ও ১৩ নভেম্বর অনলাইনে ক্লাস হবে।

এর মধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) অনলাইনে ক্লাস নেবে। আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বুধ ও বৃহস্পতিবার; দুদিন অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার নোটিশ দিয়েছে।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনিবার্য কারণবশত আমাদের ১২ ও ১৩ নভেম্বর সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ দুইদিন অনলাইনে ক্লাস হবে।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে জানান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সই করা একটি নোটিশে শুধু বৃহস্পতিবার অনলাইন ক্লাস হবে বলে জানানো হয়েছে। ওইদিন সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।

শান্ত-মারিয়াম, এআইইউবি, ইস্টার্ন, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও একই তথ্য জানা গেছে।

হঠাৎ অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাই মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, মূলত কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ডাকা ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে নিরাপত্তা শঙ্কায় সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য অনলাইন ক্লাস চালু রাখা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অনেক শিক্ষার্থী

জুলাই আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন। অনেকে আহত হয়ে এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ডাকা লকডাউনে এভাবে সশরীরে ক্লাস বন্ধ করায় তারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেজন্য তারা বাধ্য হয়ে অনলাইন ক্লাস করছেন।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মানতে অনেকে বাধ্য। সেজন্য কেউ কিছু বলছেন না। তবে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। যারা আন্দোলন করে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের দেশছাড়া করলো, তাদের এখন বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের ভয়ে ঘরে বসে ক্লাস করতে হবে। এটা হাস্যকর এবং বিরক্তিকর।’

কিছুই জানে না ইউজিসি
হঠাৎ সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে অনলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কিছুই জানে না বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তিনি ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ দেখভাল করেন।

জানতে চাইলে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, অনলাইন ক্লাস চালুর বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শও করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পলিটিক্যালি মোটিভেটেড (রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত) হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয় না বলেই আমাদের ধারণা ছিল। যদি এমনটা (অনলাইন ক্লাস) হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

এএএইচ/এমআরএম/এএসএম

Read Entire Article