নির্বাচনের আগে ৪ হাজার এএসআই নিয়োগ যে পদ্ধতিতে

4 days ago 2

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশে চার হাজার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই, নিরস্ত্র) নিয়োগ দেবে সরকার। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে। নির্বাচনের আগে পুলিশ বাহিনীতে জনবল বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সরকার এই নিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে।

এই নিয়োগ নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচনী সহিংসতা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার জন্যই সরকারের এই উদ্যোগ বলে মত তাদের।

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, অতি দ্রুত এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে বিধি সংশোধন করতে হবে। কারণ এর আগে কনস্টেবল ও এসআই পদে সরাসরি নিয়োগ হলেও এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ হয়নি। পরিপত্র জারির পর দ্রুত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-৩ শাখা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত বিভিন্ন ইউনিটের বিপরীতে চার হাজার এএসআই (নিরস্ত্র) গ্রেড-১৪ পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজন করা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সম্পন্ন হতে পারে এ নিয়োগ কার্যক্রম।

বড় পরিসরে এই নিয়োগে সম্মতি দিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন
নির্বাচনের আগে ৪ হাজার এএসআই নিয়োগ, প্রজ্ঞাপন জারি
পুলিশে পদোন্নতি-বদলির তদবির, কঠোর বার্তা উপদেষ্টার
১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন মিরসরাইয়ের ১০ তরুণ

চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত বিভিন্ন ইউনিটের বিপরীতে চার হাজার এএসআই (নিরস্ত্র) (গ্রেড-১৪) পদে রাজস্বখাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনে বর্ণিত শর্তে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।

তবে চিঠিতে বেশকিছু শর্ত দেওয়া হয়। শর্তগুলো হলো—অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ থেকে যাচাইকৃত বেতনস্কেল অনুসরণ করতে হবে; প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে; এএসআই (নিরস্ত্র) (গ্রেড-১৪) চার হাজার পদ সৃজনের প্রস্তাব প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানোর আগে চার হাজার কনস্টেবল পদ বিলুপ্তিকরণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতিসহ যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে, পদগুলো সৃজনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, চার হাজার এএসআইয়ের মধ্যে দুই হাজার সরাসরি নিয়োগ হতে পারে এবং বাকি দুই হাজার কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি দিয়ে এএসআই করা হতে পারে।

গত ২৮ আগস্ট জেলাভিত্তিক নিয়োগযোগ্য শূন্যপদের তালিকা প্রকাশ করে পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকায় শূন্যপদের সংখ্যা বলা হয়েছে দুই হাজার। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ, জুন–২০২৫: জেলাভিত্তিক নিয়োগযোগ্য শূন্যপদের পরিসংখ্যান শিরোনামের চিঠিতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ ঢাকা জেলায় ১৬৭টি। এর পরেই বেশি শূন্যপদ চট্টগ্রামে ১০৬টি।

আরও পড়ুন
যে কৌশলে উত্তীর্ণ হতে পারেন পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষায়
নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী ভাবা যাবে না: পুলিশকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ হচ্ছে যোগ্যতার ভিত্তিতে, আর্থিক লেনদেনে নয়

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম আরও একধাপ গতিশীল হবে এবং নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সুসংগঠিত হবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর জনগণের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ আরও উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ৫০ শতাংশ নিয়োগ হবে সরাসরি আর ৫০ শতাংশ নিয়োগ হবে পদোন্নতির মাধ্যমে। বিধিতে কিছু সংশোধনের প্রয়োজন ছিল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেটি করে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে নিয়োগের পথটা একটু সুগম হলো।

নির্বাচনকে সামনে রেখে এই নিয়োগ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ‘অবশ্যই, প্রধান উপদেষ্টা কিছুদিন আগে বেশকিছু ফোর্সের নিয়োগের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। সেগুলোর কাজই করা হচ্ছে।’

নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআরএম) আবু নাসের মোহাম্মদ খালেদ জাগো নিউজকে বলেন, নিয়োগের আগে বিধি সংশোধন হবে। পরিপত্র জারি হবে, এরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ৫০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ এবং ৫০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে। সরাসরি এএসআই নিয়োগে পুলিশের ইতিহাসে এবারই প্রথম। এসআই নিয়োগ যে পদ্ধতিতে হয়েছিল সেই নিয়মেই হবে এএসআই নিয়োগ।

জানা গেছে, এএসআই নিয়োগে প্রার্থীদের শারীরিক মাপ ও সহনশীলতা পরীক্ষা, লিখিত ও মনস্তত্ত্ব পরীক্ষা, কম্পিউটার দক্ষতা পরীক্ষা, বুদ্ধিমত্তা ও মৌখিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন হতে পারে।

টিটি/ইএ/এমএমএআর/এমএস

Read Entire Article