নেফারতিতির সঙ্গে

7 hours ago 3

[‘‘And the Heiress, Great in the Palace, Fair of Face,
Adorned with the Double Plumes,
Mistress of Happiness,
Endowed with Favors, at hearing whose
Voice the King rejoices,
The Chief Wife of the King, his beloved,
The Lady of the Two Lands,
Neferneferuaten-Nefertiti,
May she live for Ever and Always’’]

এবং মুখোমুখি সেই উপচে পড়া প্রাণ—সেই উদ্বেলিত বাসনা!
একদিকে তুতেনখামুন, আরেকদিকে নেফারতিতি; কিন্তু আমি যে
নেফারতিতিকে চেয়েছি, গ্রেট ফারাও আখেনাতেনের রাজরানি,
একদিন নিজেই ফারাও হয়ে রাজত্ব করেছেন দুইহাতে, তিনি তো
পাথর ছিলেন না! কোথায় পটে আঁকা চোখকে হার মানানো
সেই জাদুকরী চোখ যেখানে খেলা করতো জোছনারাতের নীলনদ
আর চোখাচোখির চোখগুলো হারিয়ে ফেলতো কূল ও কিনারা?
কোথায় সেই মোহন স্তনের ওঠানামা যা দেখে রাজপ্রাসাদের
লোকজন গ্রীষ্মের পারদ হয়ে উঠতো ভূমধ্যসাগরে স্নান করে
আসা শীতের বাতাসেও? আর কোথায় সেই হংসিনী গলা থেকে
উঠে আসা মোহময়ী কণ্ঠস্বর যা শোনামাত্র লোহিতসাগরের হাওয়ায়
দোলায়িত নীলনদ হয়ে উঠতেন যুবকসম্রাট যেমনটি হয়েছেন
পরবর্তীকালের শ্রোতারা গান শুনে উম্মে কুলসুমের! আমি খুঁজেছি
ফারাও-যুগের নুরজাহানকে যার জোছনাময়ী ব্যক্তিত্বের কাছে
হেরে গিয়েছিলেন সম্রাটের আর সব নারী, সম্রাট নিজেও!

হে লেডি অব দ্য টু ল্যান্ড, তোমার নাকি মৃত্যু নেই; তাই তো
তোমাকে খুঁজে ফেরা। তোমার সৌন্দর্যের যতখানি দেখেছিলেন
বিদ্রোহীসম্রাট, তারচেয়েও বেশি ভাস্করসম্রাট থুতমোস; লুক্সোর
থেকে প্রত্নচোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে তোমাকে, চোরের বউয়ের
গয়নার মতন তুমি এখন ভিনদেশি জাদুঘরে দ্যুতি ছড়াচ্ছো,
ডিএসএলআরের ক্লিক হয়ে তোমার ওপর পড়ছে রোজ লক্ষ
চোখের বিস্ময় নজরপাত: ‘ওয়াও!’ কিন্তু সেটা আজকের ফটোশপকে
হার মানানো কেবল তোমার আবক্ষ মূর্তি—সৌন্দর্যে অনুপম
আর তোমাকে জীবিত সবটুকু দেখার নেশায় আমার মিসর সফর।

হে রানি, হে সুন্দরতম মুখের অধীশ্বরী, মিসরের যেখানেই গেছি,
সবখানেই দেখেছি তোমার সেই অনন্য আবক্ষমূর্তির রেপ্লিকা;
ধূর্ত দোকানির হাতে দিয়ে ইজিপশিয়ান পাউন্ড, মুগ্ধ পর্যটকগণ
নিয়ে যায় নিজ নিজ দেশে যেভাবে মক্কা থেকে পুণ্য কিনে নিয়ে
যায় তীর্থযাত্রীরা! আলেকজান্দ্রিয়া সী বিচে ঢেউয়ের নাচন
দেখতে দেখতে আমিও কিনেছি দুইবার; পাথর চোখের মধ্যে
গ্রীষ্মের ভূমধ্যসাগর, উদ্বেলিত মন খুঁজেছে আলেকজান্দ্রিয়া বাতিঘর;
আলেকজান্দ্রিয়া বাতিঘর থেকে গেছি আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি—
যা তোমার পুরুষ্ট ঠোঁটের মতন প্রসিদ্ধ, যেখানে ঘুমিয়ে আছে
ভাষার সমুদ্র শব্দের জোয়ার হয়ে ওঠার প্রস্তুত প্রতীক্ষায়; সেখানেও
তোমার নাম কিন্তু তুমি সেখানে নেই; সেখানে অবশ্য ক্লিওপেট্রাকে
চেনে কেউ কেউ। লাইব্রেরির পাঠ চুকিয়ে আমাদের গাড়ি চলেছে
পিরামিডের বাড়ি; আহা খুফু! জীবনটাকে কত ভালোবাসতে
তুমি! পাষাণে নির্মিত পিরামিড ভুল বাসনার শুদ্ধতম শিল্প;
দুরন্ত জীবনের সোনার কাঠি স্পর্শে মৃত্যুর অমরত্ব লাভ! আর
তোমার নৌকার গায়ে লেগে আছে নীলনদের শতসহস্র ঢেউ;
তোমার নৌকার ছই ছুঁয়ে ঘুমিয়ে আছে সহস্র হাওয়ার ঝাপটা;
মনে হয় একটু ধাক্কা দিলেই খুলে যাবে স্রোত, শুরু হবে ঢেউ!
যুবতীরানির বক্ষের মতো হয়ে উঠবে পাল! নেফারতিতি, হে বিউটি
অব নাইল, তুমি কি কখনো এই নৌকায় যাত্রী হয়েছিলে
চাঁদনীতে ঝলমল নীলনদের জলে? বারতিনেক এই নৌকায়
ছইয়ে উঁকি দিয়ে খুঁজেছি। পাইনি কো। তবু জয় হয়েছে জেদের;
আর জেদ হয়েছে ইঞ্জিনের অকটেন; নেফারতিতি, সেই অকটেনে
ভর করে ছুটে গেছি সুয়েজ খাল যা তোমার জননাঙ্গের মতো
সজল ও উর্বর; সুয়েজের নীলকালো পর্দায় চোখ মেলে দেখেছি—
নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রানি নেফারতিতি ডুব দিয়ে বসে আছে ভূমধ্য-
সাগরে, চোখদুটি খোলা, তার চোখের মণি ছুঁয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে নেমে
আসছে স্রাতে। জল এত সুন্দর হয়—স্রোতে এত মায়াবী হয়, ষড়ঋতুর
লীলামঞ্চ সহস্র নদীর দেশের লোক হয়েও একথা জানতাম না আগে।

হে ভুবনমোহিনী, সন্ধ্যায় নীলের জল যখন তীরবর্তী আলোয় ঝলমল
করে উঠেছে, নিচ আকাশে ঝুঁকে এসেছে চাঁদ, অভিজ্ঞ জলে ভেসেছে
অন পেমেন্ট মারকিব, আরবি গানের উচ্ছলতায় দোলা জেগেছে
শরীরে ও মনে, মনে পড়েছে তোমার কথা; মনে হয়েছে কত নৌভ্রমণই
না করেছো তুমি সম্রাট আখেনাতেনের সাথে! জলের কলকল শব্দে
শুনেছি অতীতের গুঞ্জন, ফেলে আসা হাসির রেকর্ড। তুমি তো জানো,
আমি এ যুগের মানুষ, আমাকে যেতে হয়েছে শহরের এখানে ওখানে,
নামিদামি শপিং মলে; আমরা গিয়েছি আরব বসন্তের সূচনাবিন্দু তাহরির
স্কোয়ারে, যেখানে লম্বা আশাভঙ্গের গোল বেদনা নীরব হয়ে বসে আছে
আকাশে উড়তে থাকা নিঃসঙ্গ পতাকার নিচে যেভাবে চুপ হয়ে যায়
রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে বাতিল হওয়া বিজয়সূচক গোলের উল্লাস; এবং
আরও কত স্থানে পা ফেলা! কোথাও তোমার সাথে কথা হয়নি কো মুখোমুখি।

অথবা এমনও হতে পারে—দেখা হয়েছে কায়রোর কোনো শপিং মলে
স্মার্ট সুন্দরীদের মাঝে অথবা আল আজহারের বিকেলের রোদরঙা
যুবতীদের ভিড়ে দেখেছি তোমাকে; সালাউদ্দিনের ডেরায় শেষবিকেলের
রোদরঙা যে যুবতীর সাথে ‘হাই’ বিনিময় হয়েছিল, সে কি তুমি ছিলে?
হোটেলে ফিরে এসে ভাটির শরীরে উজানের উত্তেজনা অনুভব
করেছি; জোয়ারের মনে ফ্লাশব্যাক হয়ে ফিরে এসেছে পূর্ণিমা-তিথি;
প্রিয়ামিশায় ফাইভ স্টার রাত শুনেছে এক আশ্চর্য সঙ্গমের শীৎকার
ঘরময় উম্মে কুলসুমের গানের মতো যা ছড়িয়েছিল অনিঃশেষ রেশ।

ব্যর্থতায় শ্রান্ত মন নিয়ে দেশে ফিরে এসে আজ ক্যানন ডিএসএলআর
এর মজুদ খুলতেই বিস্ফারিত চোখ, বিস্মিত মন: আহা, আমার প্রতিটি
যুগলছবির সাথে তুমি, এমনকি স্যামসাং জে ফাইভে তোলা আমার
সেলফিতে গলা জড়িয়ে তুমি; তোমার পুরুষ্ট রক্তিম অধরে আমার
আড়াই যুগের ধারাবাহিক চুম্বনের এমবোস সিল! আজ সেই তুমি কি
আমাকে নতুন ভাবনার কবিতা লেখাও যে একদিন আখেনাতেনের
শাসনকালকে ভরে দিয়েছিলে শিল্প-ভাস্কর্য-বিশ্বাসের নবজাগরণে?
লুডবিগ বোর্কাতের মনে বিস্ময় জাগানো দুটি মোহনীয় চোখ
আমার চোখের সাথে চেয়ে আছে বিকেলের রোদে সোনা হয়ে ওঠা
পিরামিডের চূড়ায়। আচ্ছা, তোমাকে কি দেখেছিলেন আমাদের
সঙ্গে থাকা দুই নারী শোভা আর জোহরা? তাহলে কি জোহরার
রহস্যময়ী চাহনি সহজাত অভ্যাসের পুনরাবৃত্তি ছিল না কো মোটেও?

নেফারতিতি, হে মিসট্রেস অব হ্যাপিনেস, তুমি কি তবে বহু জনমের
অধিকার লাভ করেছো, ঘুমুতে যাওয়ার আগে যার স্বপ্ন নিয়ে
পাথরের বুকে প্রাসাদ রচতেন দি ভ্যালি অব কিং-এ ঘুমুতে যাওয়া
তুথমোসিস-রামেসেসের দল? অবয়বহীন চার হাজার বছর
নীলনদে ভেসে ভেসে তুমি কি পুনর্জন্মের মাটি খুঁজে পেয়েছো
রূপবান-মধুবালার গাঙ্গেয় অববাহিকায়? কী লাভ সত্যের মুলা খুঁজে?
অতএব ঘটনা যা-ই হউক, অথবা রহস্য, তোমাকে স্যালুট হে সম্রাজ্ঞী!

এসইউ/এএসএম

Read Entire Article