পক্ষপাতের অভিযোগে ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ বয়কট করলেন ১৫০ লেখক

4 days ago 4

ইসরায়েল–ফিলিস্তিন যুদ্ধ ও গাজায় গণহত্যা নিয়ে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন’ প্রকাশের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ বয়কট করেছে ১৫০ জনেরও বেশি লেখক, সাংবাদিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মীরা। নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ না করায় জনপ্রিয় এই সংবাদপত্রের মতামত বিভাগে আর লিখবেন না বলে তারা অঙ্গীকার করেছেন।

এক যৌথ চিঠিতে তারা লিখেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নিউইয়র্ক টাইমস নিজেদের পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদনের দায় স্বীকার না করছে এবং গাজার যুদ্ধ নিয়ে নৈতিক ও সত্যনিষ্ঠভাবে সংবাদ পরিবেশনে অঙ্গীকারবদ্ধ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেখানে লেখা মানে এই ভুলচর্চাকে বৈধতা দেওয়া।

চিঠিতে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাশিদা তালিব, গ্রেটা থানবার্গ, চেলসি ম্যানিং, রিমা হাসান, সেলি রুনি, এলিয়া সুলেইমান, ভিয়েত থান নুয়েন এবং ডেভ জিরিনসহ আরও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও এ বয়কটের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ক্রিস হেজেস, মার্ক ল্যামন্ট হিল, নুরা এরাকাত, রাশিদ খালিদি, মোহাম্মদ এল-কুর্দ ও সুসান আবুলহাওয়া।

চিঠিতে তারা আরও লিখেছেন, আমরা ফিলিস্তিনের সাংবাদিক ও লেখকদের কাছে দায়বদ্ধ। আমাদের উচিত টাইমসের সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করা এবং তাদের ব্যর্থতার দায় স্বীকারে বাধ্য করা। যাতে এই পত্রিকা আর কখনো গণহত্যা, নির্যাতন ও বাস্তুচ্যুতি বৈধতা দিতে না পারে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা তিনটি দাবি জানিয়েছেন—

(১) নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনবিরোধী পক্ষপাতের স্বাধীন পর্যালোচনা এবং সেই অনুযায়ী নতুন সম্পাদনা নীতিমালা প্রণয়ন।

(২) ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন এমন সাংবাদিকদের ওপর রিপোর্টিং নিষেধাজ্ঞা এবং ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত বিষয়ে নতুন শব্দচয়ন নির্দেশিকা তৈরি করা।

(৩) ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ‘স্ক্রিমস উইথ আউট ওয়ার্ডস’ প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল হামাসের হামলায় অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি নারীদের যৌন নিপীড়ন করেছিল।

চিঠিতে আরও দাবি করা হয়েছে, নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় বোর্ডকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মার্কিন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান নিতে হবে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐ প্রতিবেদনের তথ্য ছিল এক অজ্ঞাত ইসরায়েলি প্যারামেডিকের সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে, যা পরে সংশ্লিষ্ট কিবুত্‌জের মুখপাত্র অস্বীকার করেন। প্রতিবেদনের সহলেখক আনাত শোয়ার্টজ–এর বিরুদ্ধেও তদন্ত হয়েছিল।

স্বাক্ষরকারীরা বলেন, এসব দাবি অসম্ভব বা অযৌক্তিক নয়। কারণ দ্য টাইমস অতীতে এইডস সংকটের সময় এবং ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের ভুল প্রতিবেদনের পর তাদের নীতিমালা পরিবর্তন করেছিল।

উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হলে তৎকালীন মার্কিন সরকার যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এ সময় একই ধরণের সংবাদ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি জনপ্রিয় পত্রিকা ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’। এ ঘটনায় ‘দ্য পোস্ট’ নামে হলিউডে একটি সিনেমাও নির্মিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমসের কাভারেজ অনুসরণ করে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শুরুর পর থেকে টাইমস ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ গোপন ও অস্বীকার করে আসছে।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই
কেএম

Read Entire Article