তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৫৪টি বিষয়ের পরিবর্তনসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে চার বিশিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কারিশমা জাহান ও রিদুয়ানুল করিম। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ারের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন। মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির, এবং রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
এর আগে ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশকিছু বিষয়ে পরিবর্তন করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়।
রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।
অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
এই সংশোধনী বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। গত বছরের ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে।
পরে এই রুল সমর্থন করে সহায়তাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে যুক্ত হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম, বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা। তাদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
এ ছাড়া নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও রিট করেন।
রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের দিন ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ অন্য আবেদনকারীর আইনজীবী ড. শরীফ ভুঁইয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার বিধান বাতিল হলো; সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ এবং সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য সংক্রান্ত ৭ ক এবং ৭ খ বাতিল হলো; মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের বিধান নিয়ে হাইকোর্টের ক্ষমতা কমানো বিষয়ক ৪৪ (২) বাতিল করা হলো;
এছাড়া ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান বাতিল করাকে বাতিল করা হয়েছে। ফলে সংবিধানের প্রস্তাবনা ও কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনে আজকে রায়ে গণভোটের বিধান ফিরে আসছে। রায়টিকে ঐতিহাসিক বলে এ আইনজীবী বলেন, ৭ক এবং খ, ৪৪ (২) ও ১৪২ অনুচ্ছেদ বিষয় রায়ের ফলে বাস্তবায়িত হয়ে গেলো।
পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধেই সুজন সম্পাদকসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তি লিভ টু আপিল করেন। অন্য তিন ব্যক্তি হলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। মোফাজ্জল হোসেন আরেকটি লিভ টু আপিল করেন। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও একটি লিভ টু আপিল করেন।
বদিউল আলম মজুমদারের আইনজীবীর দাবি পুরো সংশোধনী বাতিল করতে হবে। সেটির ওপর বুধবার শুনানি শুরু হয়। প্রথম দিনে শুনানি করেন বদিউল আলম মজুমদার সহ চারজনের আইনজীবী ড. শরীফ ভুঁইয়া।
এফএইচ/এমএএইচ/এমএস

1 hour ago
3








English (US) ·