চার্জ ফুরিয়ে গেলে ফোনটা চার্জে লাগিয়েই স্ক্রল করছেন? একটু লম্বা কোনো ভিডিও দেখতে শুরু করে কিছুক্ষণ পরেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন? চুপচাপ এক মিনিটও বসে থাকা যাচ্ছেনা বলে কি টয়লেটেও মোবাইল ফোনটা নিয়ে যাচ্ছেন?
একটানা একটা সিনেমা দেখতে কি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন? সামনে টেলিভিশন আর হাতে মোবাইলে ফেসবুক বা গেম নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন?
উত্তরগুলো হ্যাঁ হওয়ার মানে হলো – প্রতি মুহূর্তে আপনার মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখতে নতুন নতুন উদ্দীপনার দরকার পড়ছে। বিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকেই বলছেন ‘পপকর্ন ব্রেইন’।
এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন মার্কিন গবেষক ডেভিড লেভি, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের অধ্যাপক। ২০১১ সালে তিনি ব্যাখ্যা করেন — অতিরিক্ত ডিজিটাল উদ্দীপনার কারণে মস্তিষ্কের চিন্তাধারা দ্রুত এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে লাফিয়ে যায়, ঠিক যেমন গরম তেলে পপকর্ন ফোটে। ফলে মনোযোগ কমে, ধৈর্য হারায় এবং বাস্তব জীবনের ধীরগতির অভিজ্ঞতা বিরক্তিকর মনে হয়।
মস্তিষ্কের চিন্তাধারা দ্রুত এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে, ঠিক যেমন গরম তেলে পপকর্ন। ছবি/এআই
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়া, ছোট ছোট ভিডিও, অনলাইন গেম বা দ্রুত তথ্যভিত্তিক কনটেন্টের জগতে থাকার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক এক ধরনের ‘দ্রুত উত্তেজনা নির্ভর’ চিন্তার অভ্যাস তৈরি করেছে। এর প্রভাব পড়ছে আমাদের মনোযোগ, আবেগ এবং সম্পর্কের ওপরও।
পপকর্ন ব্রেইনের লক্ষণ
১. মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা: পড়াশোনা বা কাজের সময় মন বারবার অন্যদিকে চলে যায়।
২. স্ক্রিন ছাড়া অস্থিরতা: ফোন বা ইন্টারনেট ছাড়লেই মনের মধ্যে শূন্যতা ও উদ্বেগ কাজ করে।
৩. তথ্য ক্লান্তি: অতিরিক্ত তথ্যগ্রহণে মাথা ভার ও মানসিক ক্লান্তি অনুভব হয়।
৪. বাস্তব জীবনে আগ্রহ কমে যাওয়া: অফলাইন আড্ডা, বই পড়া বা চিন্তায় মন বসে না।
৫. ঘুমের ব্যাঘাত ও অস্থিরতা: রাতে ঘন ঘন ফোন দেখা বা নোটিফিকেশনে ঘুম নষ্ট হওয়া।
দ্রুত তথ্যভিত্তিক কনটেন্টের জগতে থাকার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক তথ্যে ওভারলোড হয়ে যাচ্ছে। ছবি/এআই
বাঁচার উপায়
১. ডিজিটাল ডিটক্স করুন: প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা মোবাইল বা ইন্টারনেট ছাড়া থাকুন।
২. মাল্টিটাস্কিং কমান: একসঙ্গে অনেক কাজ না করে একটিতে মন দিন।
৩. স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করুন: প্রয়োজন ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন না।
৪. মনকে ধীরে চলতে দিন: বই পড়া, হাঁটা বা কোনো শখে সময় দিন।
৫. মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন: এটি মস্তিষ্কের প্রশান্তি ফিরিয়ে আনে।
৬. বাস্তব সম্পর্ককে প্রাধান্য দিন: সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস বাড়ান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পপকর্ন ব্রেইন কোনো মানসিক রোগ নয়, বরং এটি আমাদের মস্তিষ্কের অভিযোজন সংকেত — যখন আমরা অতিরিক্ত দ্রুতগতির উদ্দীপনায় অভ্যস্ত হয়ে যাই। সচেতনভাবে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করলেই মনকে শান্ত ও মনোযোগী অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফরমেশন রিসার্চ, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন ইনফরমেশন স্কুল, সাইকোলজি টুডে, রিপাবলিক হেলথ
এএমপি/এএসএম

2 days ago
4









English (US) ·