পরিকল্পিত এলাকায় বসবাস করাকে গুরুত্ব দেবেন যে কারণে

4 days ago 6

প্রাচীন সভ্যতা থেকে মানুষ যখন থেকে শহর তৈরি করতে শুরু করেছে, তখন থেকেই শহর কেবল বসবাসের স্থান নয়। এটি এক জীবন্ত কাঠামো—যেখানে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, পরিবহন, বিনোদন এবং নিরাপত্তা মিলেমিশে জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শহরে সবুজ খোলা জায়গা এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আছে, সেখানকার বাসিন্দাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে।

পরিকল্পিত নগরায়ণ মানে এমন একটি শহর গড়ে তোলা, যেখানে প্রতিটি মানুষ ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা পায়। নিরাপদ রাস্তা, বিশুদ্ধ পানি, পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, গণপরিবহন, হাসপাতাল এবং সবুজ এলাকা—এগুলোই জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মূল ভিত্তি। অপরিকল্পিত নগরায়ণ এর বিপরীতে যানজট, জলাবদ্ধতা, বায়ুদূষণ এবং অপর্যাপ্ত আবাসন সৃষ্টি করে, যা প্রতিদিন আমাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।

বিশ্বের উন্নত শহর যেমন সিঙ্গাপুর বা কোপেনহেগেন, সেখানে নগর পরিকল্পনা কেবল স্থাপনার জন্য নয়, নাগরিক জীবনের মানোন্নয়নের প্রতিটি উপাদানকে কেন্দ্র করে তৈরি। বর্তমানে বাংলাদেশেও শহর উন্নয়নে ‘স্মার্ট সিটি’ ধারণা গুরুত্ব পাচ্ছে।

মহেনজো দারো। এক প্রাচীন শহর, যেখানে সুশৃঙ্খল রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় দেখা যায় আধুনিক নগর পরিকল্পনার ছাপ। হাজার বছরের পুরোনো এই নগর পরিকল্পনা আজও বিস্ময় সৃষ্টি করে। ছবি/সংগৃহীতমহেনজো দারো। এক প্রাচীন শহর, যেখানে সুশৃঙ্খল রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় দেখা যায় আধুনিক নগর পরিকল্পনার ছাপ। হাজার বছরের পুরোনো এই নগর পরিকল্পনা আজও বিস্ময় সৃষ্টি করে। ছবি/সংগৃহীত

পরিকল্পিত আবাসনের সুবিধা

১. নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ
সিসি ক্যামেরা, গেটেড কমিউনিটি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে চুরি বা অপরাধের ঝুঁকি কম থাকে।

২. বিশুদ্ধ বাতাস ও সবুজ খোলা জায়গা
যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা ও গাছপালা থাকায় বাতাসে দূষণ কমে। শিশুরা খেলাধুলার জন্যও পর্যাপ্ত জায়গা পায়।

৩. সুপরিকল্পিত রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা
জলাবদ্ধতা ও যানজটের সমস্যা কমে, হাঁটা বা সাইকেল চালানোর মতো পথ থাকে, যা জীবনযাত্রাকে স্বাস্থ্যকর করে।

৪. নিয়মিত পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ
সরকারি বা বেসরকারি ডেভেলপাররা এই সেবাগুলো নির্ভরযোগ্যভাবে নিশ্চিত করে, ফলে জীবনে স্থিতি আসে।

৫. স্কুল, বাজার ও হাসপাতাল কাছাকাছি
প্রয়োজনীয় সব প্রতিষ্ঠান কাছাকাছি থাকায় সময় এবং যাতায়াতের খরচ বাঁচে।

৬. সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়
একই এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের মধ্যে যোগাযোগ সহজ হয়, যা পারস্পরিক সহায়তা ও নিরাপত্তার বোধ বৃদ্ধি করে।

৭. সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি পায়
পরিকল্পিত এলাকায় জমি বা ফ্ল্যাটের দাম সময়ের সঙ্গে বৃদ্ধি পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে ভালো বিনিয়োগে পরিণত হয়।

ইনচিয়নের সঙ্গদোতে জি-টাওয়ার থেকে তোলা দৃশ্য। সঙ্গদো হলো সিওলের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত, ইনচিয়নের একটি সদ্য উন্নয়নকৃত ব্যবসায়িক ও আবাসিক শহর। ছবি/জুনইয়ং কিম-আইস্টকইনচিয়নের সঙ্গদোতে জি-টাওয়ার থেকে তোলা দৃশ্য। সঙ্গদো হলো সিওলের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত, ইনচিয়নের একটি সদ্য উন্নয়নকৃত ব্যবসায়িক ও আবাসিক শহর। ছবি/জুনইয়ং কিম-আইস্টক

আবাসনের গুণগত মানের প্রভাব

শারীরিক স্বাস্থ্য
পরিষ্কার, নিরাপদ এবং সঠিকভাবে পরিকল্পিত বাসস্থানে থাকা সংক্রমণ, এলার্জি এবং শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমায়। অপরদিকে, অপরিকল্পিত বা সংকীর্ণ, জলাবদ্ধ ও দূষিত এলাকায় থাকা শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

মানসিক শান্তি
সবুজ এলাকা, প্রাকৃতিক আলো এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ মানসিক চাপ কমায়, উদ্বেগ ও হতাশা কমায়। অপরিকল্পিত, ঘিঞ্জি বা অব্যবস্থাপিত আবাসন মানসিক চাপ এবং হতাশা বাড়াতে পারে।

সামাজিক সম্পর্ক
বাসস্থান যদি সামাজিক বন্ধনের সুযোগ দেয়, তাহলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তার বোধ বৃদ্ধি পায়।

শিক্ষা ও কর্মজীবন
পরিবেশ যদি শিক্ষার জন্য সহায়ক হয়—নিরাপদ রাস্তা, দূষণ কম থাকা, কাছাকাছি স্কুল-কলেজ এবং অফিসে যাওয়ার নির্ভরযোগ্য পরিবেশ—তাহলে মানসিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

সৃজনশীলতা ও সামগ্রিক জীবনমান
ভালো বাসস্থানের মান মানুষের রুচি, জীবনধারা এবং সৃজনশীলতাকেও প্রভাবিত করে। সুপরিকল্পিত ও সুন্দর বাসস্থানে মানুষ সাধারণত আরও সক্রিয়, সৃজনশীল এবং সামাজিক কাজে আগ্রহী হয়।

অর্থাৎ, বসবাসের স্থান শুধু নিরাপদে থাকার জায়গা নয়, এটি আমাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক জীবনকে সুষমভাবে প্রভাবিত করে। তাই শহর বা আবাসনের মান উন্নত করা কেবল ব্যক্তিগত সুবিধা নয়, এটি সমগ্র সমাজের স্বাস্থ্য এবং উন্নয়নের জন্যও জরুরি।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনাইটেড নেশনস হ্যাবিট্যাট, দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট

এএমপি/জিকেএস

Read Entire Article