‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’

4 hours ago 7

হাসাপাতালে ভর্তি করার পর ওয়ার্ডে রেখে শিশুটির মাকে আনতে যাচ্ছি বলে পালিয়ে গেছেন নানা-নানি। পরে ঘটনাচক্রে অভিভাবকহীন এই শিশুকে দত্তক নিতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, ব্যবসায়ী ও বিসিএস ক্যাডারসহ সন্তানহীন ২০০ জন যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

অপরদিকে শিশুটিকে দেখতে উৎসুক মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের নবজাতক ইউনিটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিশুটিকে ওয়ার্ডের বেড থেকে নেওয়া হয়েছে ডক্টরস রুমে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শিশু ওয়ার্ডে এক নবজাতক শিশুকে ভর্তি করেন নানা-নানি। ওয়ার্ডের নবজাতক ইউনিটের অতিরিক্ত বেড নং-৩ এ দেওয়া হয় শিশুটিকে। এ সময় চিকিৎসক শিশুটিকে দেখতে গিয়ে শিশুটির মা কে জানতে চান। 

সে সময় শিশুর সঙ্গে থাকা তার নানা-নানি পরিচয়ে এক দম্পতি জানায়, মা নিচে রয়েছেন। চিকিৎসক তাদের শিশুটির মাকে নিয়ে আসতে বললে তারা শিশুটির মাকে আনতে যাচ্ছে বলে শিশুটিকে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে আর ফিরে আসেননি। 

বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগীর স্বজনরা শিশুটিকে দেখতে ভিড় জমায়। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করে শিশুটিকে ওয়ার্ডের ৫১৭নং ডক্টরস্ রুমে নেওয়া হয়। 

এ সময় শিশুটির পাশে রেখে যাওয়া একটি ব্যাগে চিরকুট ও কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। যাতে লেখা রয়েছে— ‘আমি মুসলিম, আমি একজন হতভাগী পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম। দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন। বাচ্চার জন্ম তারিখ : ০৪-১১-২০২৫, রোজ মঙ্গলবার, এগুলো সব বাচ্চার ওষুধ, আমি মুসলমান জাতির মেয়ে।’

ডক্টরস্ রুমে শিশুটির দেখভাল করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. গোলাম আহাদ, ডা. সানাউল্লাহ ও ডা. পল্লব কুমার দাস।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. সানাউল্লাহ কালবেলাকে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার সময় একটি শিশুকে ৫ম তলায় শিশু ওয়ার্ডের নবজাতক ইউনিটের অতিরিক্ত ৩নং বেডে ভর্তি করা হয়। এ সময় নবজাতক শিশুটির সঙ্গে দুজন ছিলেন। পরিচয় জানতে চাইলে তারা জানান তারা শিশুটির নানা-নানি। শিশুটির মা কোথায় জানতে চাইলে তারা বলেন, নিচে আছে। এ সময় শিশুটির মাকে নিয়ে আসতে বললে তারা আনতে যাচ্ছি বলে আর আসেননি। বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালককে জানালে তিনি আমাদের শিশুটির দেখাশোনা করার জন্য বলেন। পরে আমরা শিশুটির স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে, উৎসুক মানুষের ভিড় এড়াতে ডক্টরস্ রুমে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করি। শিশুটি সুস্থ আছে।

শিশুটির ঠিকানার বিষয় জানতে চাইলে টিকিটে শিশুটির মায়ের নাম ইসু আরা, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর লেখা রয়েছে বলে তিনি জানান। 

তিনি আরও জানান, শিশুটির মা ও স্বজনদের অনুসন্ধান চলছে। অপরদিকে এই শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য কমপক্ষে ২০০ জন যোগাযোগ করছেন। শিশুটির স্বজন না পাওয়া গেলে শিশুটিকে কোথায় বা কার কাছে দত্তক দেওয়া হবে সে বিষয়ে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। তবে যারা দত্তক নিতে চাইছেন, তাদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা রয়েছেন। যারা শিশুটিকে নিতে চাচ্ছেন তারা সবাই নিঃসন্তান।

Read Entire Article