পরের নির্বাচন থেকে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ চান আবেদনকারীরা

2 hours ago 3

সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন থেকে সৃষ্ট আপিলের রায় ঘোষণার জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

বহুল আলোচিত এই আপিলের ১০ম দিনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্য বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ রায়ের দিন ঠিক করেন।

সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের শুনানিতে আগামী নির্বাচন নয়, তার পরের নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন চেয়েছেন বিএনপি-জামায়াতসহ অপরাপর আবেদনকারীরা। শুনানিতে অংশ নেওয়া বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানিয়েছেন।

এই আপিলে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ ৫ জনের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, ইন্টারভেনার হিসেবে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী এস এম শাহরিয়ার শুনানি সম্পন্ন করেন এবং বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। ইন্টারভেনর হিসেবে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ, ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির।

বর্তমানে দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার থাকায় বিএনপি, জামায়াত ও রাষ্ট্রপক্ষসহ অন্য আবেদনকারীদের আইনজীবীরা আগামী নির্বাচনের পরের নির্বাচন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থার কার্যকারিতা চেয়েছেন শুনানিতে।

এর আগে, ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়।

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।

এ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এ আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।

ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।

আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এছাড়া, রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। পরে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন।

এফএইচ/এএমএ/জেআইএম

Read Entire Article