পলাতক ওসমান পরিবার, খেলায় এগিয়ে বিএনপি

2 weeks ago 7

শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। আসনটিতে নেতৃত্ব দিয়েছে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। তবে বেশিরভাগ সময় আসনটি ছিল নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের দখলে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে এ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন প্রয়াত নাসিম ওসমান ও তার ভাই সেলিম ওসমান। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওসমান পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা পালিয়ে গেছেন। ফলে এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। যিনি বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাবেন তার বিজয় মোটামুটি নিশ্চিত বলা চলে।

১৯৮৬ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নাসিম ওসমান জয়লাভ করেন। এরপর তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপির আবুল কালাম জয় পান। এরপর ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আবুল কালাম ও ১৯৯৬ সালের জুনে আওয়ামী লীগের এস এম আকরাম জয় পান। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে আবুল কালাম জয়ী জন। এরপর ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে নাসিম ওসমান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল তার মৃত্যু হলে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে তারই ভাই সেলিম ওসমান জয়ী হন। এছাড়া ২০১৮ ও ২০২৪ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সেলিম ওসমান জয়ী হন।

এবারের নির্বাচনে আসনটিতে সরব হয়েছেন ব্যবসায়ী ও মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান। বিএনপির মনোনয়নের জন্য স্থানীয় বিএনপিসহ কেন্দ্রীয় পর্যায়েও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন তিনি। সবশেষ গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে ফুল দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। তার এই যোগদান বিএনপির রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে। কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়ে যোগদান করার ইতিহাস বিএনপিতে খুব কমই রয়েছে।

কিন্তু মাসুদুজ্জামানের এ তৎপরতাকে মেনে নিতে নারাজ মনোনয়নপ্রত্যাশী স্থানীয় পর্যায়ের বিএনপি নেতারা। তারা সবাই মিলে মাসুদুজ্জামানের মনোনয়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছেন। আরেক ব্যবসায়ী নেতা প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর বাবুলও সক্রিয় হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তার বেশ তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি এবারের সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

আরও পড়ুন-
গাজীর আসনে বিএনপিতে প্রার্থীজট, সুসংগঠিত জামায়াত
আড়াইহাজারে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি
হারানো আসন ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি, মাঠে আছে জামায়াত-এনসিপি

এদিকে বিএনপির বাইরে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলগুলোর একক প্রার্থী মাঠে সরব রয়েছেন। তারা এলাকায় নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করাসহ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক আহমেদুর রহমান তনুও এ আসনে আলোচনায় রয়েছেন।

মডেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ ব্যবসা অধ্যুষিত এলাকা। আমি সবসময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছিলাম। ব্যবসায়ীরাও আমাকে চাচ্ছেন, পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও আমাকে চাচ্ছেন। সবার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক আছে। নারায়ণগঞ্জের সন্তান হিসেবে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রতি আমার দায়বদ্ধতা আছে।’

অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমি প্রস্তুত। সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রতিটি এলাকায় আমি গিয়েছি। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সবার চাওয়া আমি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করি। আমাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের আগ্রহ রয়েছে। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

এ আসনের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ দুটি আসন থেকেই নেতাকর্মীরা চাপ দিচ্ছেন। দল আমাকে যেখানে মনোনয়ন দেবে সেখানেই আমি কাজ করবো। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক, উৎসবমুখর হোক। এজন্য বাংলাদেশে যত রাজনৈতিক দল আছে, সবারই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। দল ছাড়াও যদি কোনো ব্যবসায়ী-শিল্পপতি আগ্রহী হন, তাহলে তারাও অংশগ্রহণ করুক। আমরা সংসদীয় এলাকায় যাওয়া-আসা করছি, তাতে মনে হচ্ছে মানুষ অনেক বছর পর অনেক দল ও অনেক মার্কা দেখছে।’

খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এবিএম সিরাজুল মামুন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ হলো ইসলামের জন্য উর্বর ভূমি। খেলাফত মজলিস ইসলামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি আসনে একজন প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছে। জনগণেরও এটাই প্রত্যাশা। আমরা প্রচারণায় গিয়ে ছাত্র-তরুণ ও সর্বস্তরের জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা যুগ্ম সমন্বয়ক আহমেদুর রহমান তনু বলেন, ‘আমাকে নিয়ে মানুষের নীরব সমর্থন রয়েছে। আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।’

আসনটিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি হলেন দলটির নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডা. আল-আমিন রাকিব। তাদের বাইরে মাকসুদ হোসেন নামে একজন স্বতন্ত্রভাবে আলোচনায় রয়েছেন। যিনি সবশেষ উপজেলা নির্বাচনে ওসমান পরিবারের সমর্থনের বাইরে গিয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি এবার সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য এলাকায় সরব রয়েছেন।

এফএ/এমএমএআর/এমএফএ/এমএস

Read Entire Article