পল্লী বিদ্যুতের সংকট সমাধানে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

5 months ago 96

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও মামলা প্রত্যাহার, এক ও অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণসহ বিদ্যমান সংকট সমাধানে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আলোচনায় বসার আলটিমেটাম দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

রোববার (১৮ মে) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আলটিমেটাম দেন তারা।

সম্মেলনে ভুক্তভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের বিদ্যমান সংকট নিরসনপূর্বক যৌক্তিক সংস্কার চাওয়ায় জুলাই স্প্রিরিট ধারণকারী বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত চার মাসে প্রায় চার সহস্রাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতি, বদলি সংযুক্তিসহ হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তারা বলেন, নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে ভঙ্গুর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ করে গ্রাহক হয়রানি এবং গ্রাহক বনাম সমিতির কর্মরত কর্মচারীদের মুখোমুখি দাঁড়া করিয়ে দেওয়া, আরইবির ব্যর্থতার দায়ভার সমিতিগুলোর ওপর চাপানো, নানান আর্থিক অনিয়ম, কর্মক্ষেত্রে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করা কর্মীর দায় না নিয়ে বরং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও জুলুম ইত্যাদি কারণে দীর্ঘকালের অসন্তোষের প্রেক্ষিতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে সমিতিগুলোতে সম্মিলিত আন্দোলনের সূত্রপাত।

তাদের অভিযোগ, যৌক্তিক দাবিতে নিয়মানুযায়ী প্রথমে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, এরপর বিদ্যুৎ সচিব এবং পরবর্তীতে তৎকালীন মন্ত্রণালয় প্রধানকে লিখিতভাবে জানানো হয়। এরপর থেকেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের ওপর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দমন নিপীড়ন শুরু হয়। ফলশ্রুতিতে কর্মকর্তা কর্মচারীরা গত ৫ মে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও গ্রাহকসেবা অক্ষুণ্ন রেখে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ, আরইবি এবং সমিতির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।

কিন্তু ২০২৪ সালের ১০ মে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তদুপরি এ সময়ের মধ্যে আরইবি কর্তৃক ‘বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন-২০১৩’ সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে গিয়ে গ্রাহক এবং সমিতিগুলোকে বিপাকে ফেলতে উক্ত আইনে আরইবি কিছু ধারা সংশোধন ও সংযোজন করে প্রস্তাব উপস্থাপন করে।

পরবর্তীতে গ্রাহক হয়রানি ও সভার সিদ্ধান্ত না মেনে আমাদের প্রতি প্রহসন, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং হয়রানির প্রতিবাদে গত বছরের ১ জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও গ্রাহক সেবা সচল রেখে পুনরায় কর্মবিরতি শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জুলাই বিদ্যুৎ বিভাগে আরইবি, পবিস এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় পুনরায় ১০ জুলাই বিদ্যুৎ বিভাগে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। তখন আমাদের বিএনপি ও জামায়াতের দোসর ও উন্নয়ন বিরোধী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পরেও বার বার আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অসহযোগিতার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। বাধ্য হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর সারা দেশে পল্লী বিদ্যুতের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রাহক সেবা চালু রেখে ৬১ জেলার জেলা প্রশাসকের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন এবং মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়। স্মারকলিপির দাবি জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫ এর অ্যাজেন্ডা হিসেবে গৃহীত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূত করার দাবিটি যৌক্তিক হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বাস্তবায়নের নিমিত্তে বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ যেকোনো মূল্যে এ সংকট নিরসন করতে বদ্ধপরিকর। চলমান সংকট সমাধানে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুক্তভোগী ডিজিএম রাহাত হোসেন, ডিজিএম আলী হাসান মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, ডিজিএম আসাদুজ্জামান ভুঁইয়া, এজিএম মনির হোসেন বক্তব্য দেন।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক রিয়াজ মোর্শেদ, যুগ্ম সমন্বয়কারী সজিব ওয়াফি, মোহাম্মদ আবু আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সংগঠক সম্রাট আজাদসহ নেতারা বক্তব্য দেন।

এনএস/এমএএইচ/

Read Entire Article