দিল্লি বিস্ফোরণ নিয়ে পাকিস্তানকে দোষারোপে ভারত এবার যথেষ্ট সতর্ক। গত মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে চারদিনের সংঘর্ষের পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে ভারতে যে কোনো সন্ত্রাসী হামলাকে তার সরকার ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে গণ্য করবে। কিন্তু গত সোমবার (১০ নভেম্বর) দিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত হওয়ার পরও ভারত এবার সেই আগ্রাসী অবস্থান থেকে দূরে রয়েছে।
কী ঘটেছিল?
লালকেল্লার পাশের জনবহুল এলাকায় গত সোমবার বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৩ জন নিহত ও এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ভারত সরকার এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে তদন্ত করছে। তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তবে বিস্ফোরণের দুইদিন পরও নয়াদিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে একে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলেনি, কিংবা পাকিস্তানকে দায়ী করেনি।
সতর্ক প্রতিক্রিয়া কেন?
অতীতে যেকোনো হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানকে দায়ী করতো ভারত। কিন্তু এবার অবস্থাটা ভিন্ন। আল–জাজিরাকে ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের সূত্র মিলেছে কাশ্মীর পর্যন্ত এবং পাকিস্তানভিত্তিক জেইএমের সঙ্গে সম্ভাব্য যোগাযোগের ইঙ্গিতও মিলেছে। তবু সরকার এখনো পাকিস্তানের নাম নিচ্ছে না।
আরও পড়ুন>>
দিল্লি বিস্ফোরণ নিয়ে যেসব প্রশ্নের জবাব নেই
বিস্ফোরণে রক্তাক্ত দিল্লি/ সাবেক রাজার জন্মদিন উদযাপনে ভুটান গেলেন মোদী
ভারত-পাকিস্তানের রাজধানীতে ২ দিনে ২ বিস্ফোরণ: দক্ষিণ এশিয়ায় ফের অস্থিরতা
বিশ্লেষকদের মতে, গত মে মাসে মোদীর ঘোষিত ‘সন্ত্রাস মানেই যুদ্ধ’ নীতির কারণে দিল্লি এবার রাজনৈতিকভাবে একপ্রকার নিজের ফাঁদে পড়েছে। যদি পাকিস্তানকে দায়ী করে, তাহলে জনমনে সামরিক প্রতিক্রিয়ার দাবি উঠবে, যা এখন ভারত চায় না।
দক্ষিণ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের নির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, সরকার রাজনৈতিক লাভের আশায় এমন নীতি ঘোষণা করেছিল, এখন তারই ফল ভোগ করছে। এটি কোনো বাস্তবনীতি নয়, কেবল রাজনৈতিক স্লোগান।
তদন্তের অগ্রগতি কতদূর?
বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় কাশ্মীরি পুলিশের অভিযানে ‘আন্তঃরাজ্য ও আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী চক্র’ ভাঙার দাবি করা হয়। জেইএম ও আনসার গাজওয়াত–উল–হিন্দ (এজিইউএইচ) নামে দুই নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র পাওয়া গেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
অভিযানে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ, সার্কিট ও রিমোটসহ বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে। দুই কাশ্মীরি চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে, আরেক চিকিৎসক উমর নাবি পালিয়ে গেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। নাবিই বিস্ফোরণস্থলের গাড়িটি চালাচ্ছিলেন কি না, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষা চলছে।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে, হামলার পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠনের সহায়তা থাকলেও মূল হামলাকারীরা স্থানীয় ও স্ব–উদ্দীপ্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুদ্ধ নয়, পরিমিত প্রতিক্রিয়া
ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ভারত সরকার যদি এখন এটিকে সন্ত্রাসী হামলা ঘোষণা করে, তাহলে কৌশলগত ও রাজনৈতিকভাবে ভারতের ওপর পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বিশাল চাপ তৈরি হবে।
কাশ্মীরি বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেন, পাহেলগাম হামলার পরের যুদ্ধ থেকে ভারত শিক্ষা নিয়েছে। এখন তারা বুঝেছে, যুদ্ধ সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আন্তর্জাতিক চাপ ও মার্কিন প্রভাব
পাহেলগাম হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রমাণ না দেখাতে পারায় ভারত আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছিল। ফলে এবার তারা আরও সতর্ক।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার মধ্যস্থতায় ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি হয়েছে। ফলে এখনই নতুন সংঘাত শুরু করলে তা ট্রাম্প–ঘোষিত ‘কূটনৈতিক সাফল্য’-এর ব্যত্যয় ঘটাবে, যা দিল্লি বা ইসলামাবাদ কেউই চায় না।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
দিল্লি বিস্ফোরণের একদিন পরেই ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সঙ্গে সঙ্গে ভারতকে দোষারোপ করে বলেন, ‘এগুলো দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উদাহরণ।’
তবে ভারত সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভারতের অবস্থান
নয়া দিল্লিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষক হর্ষ পন্ত বলেন, ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল কখনোই যুদ্ধ নয়, বরং উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া। পাকিস্তানের সঙ্গে লাগাতার সংঘাত ভারতের অর্থনীতি ও কৌশলগত অবস্থান—দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/

5 hours ago
6









English (US) ·