পানগুছির পাড়ে এক মনোরম সন্ধ্যা

2 weeks ago 19

বিলকিস নাহার মিতু

ভ্রমণপিয়াসী মানুষদের একটাই সমস্যা, তাদের শুধু ঘুরতে মন চায়। মন খারাপেও মন চায়। আবার মন ভালোতেও মন চায়। তাই রওয়ানা দিলাম খুলনা থেকে মোরেলগঞ্জ নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে। এবার একটু নিজের পরিবারের সাথে ঘোরাঘুরি দরকার। চলে গেলাম বোনের বাড়ি। শরৎকাল চলছে। ভাগ্নিরা বলছে, ‘খালামনি চলো কাশবন আছে সেখানে যাবো।’

যেদিন ওদের বাড়ি গেলাম; সেদিন রাত হয়ে গেছে। তাই আর ঘুরতে যাওয়া হলো না। সারারাত গল্প করে কাটিয়ে পরদিন বিকেলবেলা সবাই মিলে বের হলাম কাশবনের উদ্দেশ্যে। মনে মনে ভাবলাম, একটু ছবি তুলবো, ভিডিও করবো, আরও কত ইচ্ছে। ভাগ্নিরা পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আশেপাশে কাশবনের ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। মনোক্ষুণ্ন হয়ে বললাম, ‘চলো নদীর পাড়ে যাই।’ চলে গেলাম চির পরিচিত পানগুছির পাড়ে। ছোটবেলা থেকেই আমার অন্যরকম টান এখানে। বহু বছরের পুরোনো বটগাছের তলায় যে কত বসেছি, খেলেছি। সেই স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।

পানগুছির পাড়ে এক মনোরম সন্ধ্যা

যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তাম; তখন একবার শুশুক মেলা হয়েছিল। জীবনের প্রথম বই উপহার পেয়েছিলাম এই শুশুক মেলা থেকে। প্রথম বিদেশি লোকও এই মেলায় দেখেছিলাম। মেলাটা নদীর মাঝে বড় এক নৌকার মধ্যে হয়েছিল। এর মধ্যে ঝোলানো ছিল নানা রকমের আর্টিফিশিয়াল শুশুক। নৌকার দড়ি বটগাছের সাথে বাঁধা থাকতো। আরও কত স্মৃতি মনে পড়ে গেল। নদীর পাড়ে যেতে যেতে মাগরিব হয়ে গেল।

আরও পড়ুন
ভোলার নির্জন চরে এক প্রহর
ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে কাশফুলের রাজ্য

আগে এখানে থানার সামনে খেয়াঘাট আর বটগাছটা ছাড়া কিছুই চোখে পড়তো না। এখন বেশ কয়েকটি ফুচকা, চটপটির দোকান বসেছে। কর্নারে বটগাছটা ঘিরে এক লোক খেলনার দোকান দিয়েছে। তার পাশের টেবিলে জায়গা ফাঁকা দেখে আমরা বসে পড়লাম। আপু ফুচকা অর্ডার দিলেন।

চারদিক অন্ধকার। আকাশে তখন একফালি চাঁদ আলো দিচ্ছে। নদীর স্রোতের কলকল শব্দ, একটা-দুইটা খেয়া আসছে-যাচ্ছে। আবার জাহাজ যাওয়ার সময় ঢেউ তীরে আছড়ে পরে এ এক অন্য অনুভূতি। মুখে ফুচকার স্বাদ, চোখে প্রকৃতির রঙ্গলীলা। সঙ্গে পরিবার, যেন পৃথিবীর সব সুখ এখানেই।

পানগুছির পাড়ে এক মনোরম সন্ধ্যা

ধীরে ধীরে ফুচকা খাচ্ছি আর নদীর দিকে তাকাতেই দেখা গেল নদীর ওপারের দোকানগুলোতে জ্বালানো বাতির প্রতিচ্ছবি নদীর পানিতে টলটল করছে। আগে সন্ধ্যা হলে নদীর পাড়ে শুধু ছেলেদের আড্ডা দেখতাম। এখন পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সমেত সবাই আসেন। এটা-ওটা খান, উপভোগ করেন। বেশ ভালোই লেগেছে সবকিছু। তবে খাবারের উচ্ছিষ্টগুলো নদীতে ফেলা হয়। নদীর পাড়টা ধীরে ধীরে নোংরা হয়ে যাচ্ছে। যেটা পছন্দ হলো না আমার।

ছোট ভাগ্নে তাইফ বায়না ধরেছে। পাশের খেলনার দোকান থেকে হাঁস বেলুন কিনবে। কেনা শেষ। সে ফুচকা খাওয়া শেষ করে গেল খেলনা ফেরত দিতে। তার এখন বাবল চাই। কী আর করা? তাই কিনে দিতে হলো। এরপর কিছু খাবার কিনে নদীর পাড় ধরে হাঁটা শুরু করলাম বাসার দিকে। চাঁদটাও আমাদের সঙ্গী হলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।

এসইউ/এমএস

Read Entire Article