পারমাণবিক সক্ষমতার দিকে নজর মিয়ানমারের
রাশিয়ার সহযোগিতায় পরমাণু কর্মসূচির দিকেই এখন দৃষ্টি দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। একদিকে দেশজুড়ে যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বাড়ছে, অন্যদিকে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ‘পারমাণবিক উন্নয়ন’কে জাতীয় অগ্রগতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি জানায়, গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক ফোরাম ২০২৫-এ অংশ নেন মিন অং হ্লাইং।
সেখানে তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার সহায়তায় মিয়ানমার ‘পরমাণু উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ অর্জন করেছে। এ সহযোগিতা মূলত রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে করা চুক্তির অংশ।
এর আগে, গত ১৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকার ‘ ন্যাশনাল কমিটি ফর দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব নিউক্লিয়ার এনার্জি’ গঠন করে। এই কমিটিতে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা রয়েছেন।
রোসাটমের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মিয়ানমারে ইতোমধ্যে একটি ‘নিউক্লিয়ার ইনফরমেশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশটিতে ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। দেশটির সামরিক প্রশাসন দাবি করছে, এই প্রকল্প সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য নেওয়া হচ্ছে।
তবে, ইতিহাস অন্য কথা বলে। মিয়ানমারের জুন্টা সরকার এর আগেও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে গোপন পরমাণু সহযোগিতার চেষ্টা করেছিল। নিজ জনগণের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক দমননীতি ও যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই ‘শান্তিপূর্ণ’ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং রাশিয়ার পাশাপাশি চীন ও ভারতের সঙ্গেও পারমাণবিক প্রযুক্তি সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন।
তার দাবি, এ সহযোগিতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক হবে।
তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মিয়ানমারের সামরিক শাসক নিজের শাসন টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে পরমাণু কর্মসূচিকে ব্যবহার করবেন।
১৯৬২ সাল থেকে শুরু হওয়া সামরিক শাসনের দীর্ঘ ইতিহাসে মিয়ানমার বহুবার ‘উন্নয়ন’ ও ‘আধুনিকীকরণ’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশটি দারিদ্র্য, গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার ফাঁদেই আটকে আছে। এবার ‘পরমাণু উন্নয়ন’-এর নাটক সেই পুরোনো প্রচারণারই নতুন সংস্করণ বলে মনে করছেন অনেকে।
বর্তমানে সংঘাত, অর্থনৈতিক পতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চাপে মিয়ানমার যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তখন সামরিক সরকারের এই পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেশটিকে আরও বিপজ্জনক অজানার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

2 hours ago
4









English (US) ·