ঢাকা জেলার সব শেষ উত্তরের উপজেলা ধামরাই। জাতীয় সংসদীয় আসন ঢাকা-২০। এরইমধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দলের সম্ভব্য প্রার্থীরা। জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন নিজ নিজ যোগ্যতা।
ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে এরইমধ্যে সক্রিয় রয়েছেন চার নেতা। প্রচারণায় আছেন জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতারাও।
গত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে এই আসনে পাঁচবার বিএনপি, পাঁচবার আওয়ামী লীগ ও দুইবার জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়। তবে আওয়ামী লীগের পাঁচবারের মধ্যে তিনবারের নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
ধামরাইয়ের নির্বাচনী ইতিহাস থেকে দেখা যায়, প্রথম থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ঢাকার ধামরাই উপজেলা ছিল ঢাকা-১৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত। সেই সময় ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের তাজউদ্দীন আহমদ, ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দেওয়ান মোহাম্মদ ইদ্রিস, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় ও ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির খান মোহাম্মদ ইসরাফিল, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ, ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির ব্যারিস্টার মো. জিয়াউর রহমান খান।
আরও পড়ুন-
গাজীর আসনে বিএনপিতে প্রার্থীজট, সুসংগঠিত জামায়াত
আড়াইহাজারে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি
২০০৮ সালে আসন বিন্যাসের পর ধামরাই হয় ঢাকা-২০ আসন। সেই বছর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বেনজীর আহমদ। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের এম এ মালেক। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ ও ২০২৪ এর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বেনজীর আহমদ।
এবার নিজেদের হারানো ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া বিএনপির নেতারা। এরইমধ্যে ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি ও ঢাকা জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ আলোচনায় এসেছেন। নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচার চালাচ্ছেন তারা। নেতাকর্মীদের নিয়ে করছেন পথসভা, গণসংযোগ ও মতবিনিময়। যদিও নেতাদের ভাষ্য, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই একযোগে কাজ করবেন সবাই।
আরও পড়ুন-
হারানো আসন ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি, মাঠে আছে জামায়াত-এনসিপি
পলাতক শামীম ওসমানের আসনে আলোচনায় যারা
শুধু বিএনপি নয়, নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন জামায়াত, এনসিপি ও এবি পার্টির প্রার্থীরাও। তারাও গণসংযোগ, সভা ও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের কাছে পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের কোনো দল ও বামপন্থি কোনো দলের তৎপরতা দেখা যায়নি।
নির্বাচন ও মনোনয়ন নিয়ে কথা হয় বিএনপির ওই চার নেতার সঙ্গে। ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। গণরায়কে শ্রদ্ধা করে। গত ১৭ বছর যে আন্দোলন করেছি, বহু শহীদ, গুম হয়েছে। লাখ লাখ মামলায় হয়রানি হতে হয়েছে। একটাই উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। বিএনপি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, নির্বাচন আদায়ে রাজপথে নামতেও প্রস্তুত। ধামরাইয়ে বিএনপির একটা বিশাল ভোটব্যাংক আছে। এখানে আমরা আশা করি, ধামরাইয়ের জনগণ বিএনপির পক্ষে সর্বোচ্চ ভোট দেবে যদি মনোনয়ন সঠিক থাকে। এবং রেশিও অনুযায়ী সেটি হবে সর্বোচ্চ ভোট।’
ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ বলেন, ‘আমি ছোট থেকে ছাত্রদল করেছি, ৩০-৩২ বছরের বেশি হয়ে গেছে এই সংগঠনের সঙ্গে। আমার রক্তে-মাংসে আত্মার সঙ্গে সংগঠনের সম্পর্ক, শহীদ জিয়ার আদর্শের সঙ্গে সম্পর্ক। ধামরাইয়ের জনগণের সঙ্গে, আন্দোলনের সঙ্গে আমি যেভাবে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। এখানে ধানের শীষ জয়যুক্ত করতে যত ধরনের কাজ করতে হয়, করবো। এখানে আমার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কোনো মূল্য নাই। ধামরাইয়ের জনগণ যেটা সবসময় ধারণ করে, তা হলো বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে আমরা সবাই আছি।’
আরও পড়ুন-
পলাতক ওসমান পরিবার, খেলায় এগিয়ে বিএনপি
কারাগারে লতিফ সিদ্দিকী, ভোটের মাঠে বিএনপি-জামায়াত
ঢাকা জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, ‘১৭ বছর মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেনি। এবার যদি সঠিকভাবে নির্বাচন হয়, মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, সেই চেষ্টা থাকবে। ধামরাইয়ের মানুষ বিএনপির পক্ষে থাকবে।’
ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি বলেন, ‘বিএনপি অধ্যুষিত ধামরাই এমনিতেই জাতীয়তাবাদের ঘাঁটি। এই অঞ্চলে অতীতেও জাতীয়তাবাদের ধারক-বাহক ছিল। মানুষ ধানের শীষের প্রতি দুর্বল। দলের সমর্থন অনেক বেশি। ৫ আগস্টের পর মানুষের ভালোবাসা আরো বেড়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনের জন্য শতভাগ প্রস্তুতি আমাদের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে। দল যদি আমাকে মনোনীত করে, এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে ধানের শীষ প্রতীক বিজয়ী হবে।’
ঢাকা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুর রউফ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমরা আশাবাদী। প্রত্যেকে আমরা যদি ঠিকমতো কাজ করতে পারি, তাহলে একটা ভালো ফলাফল পাবো। এদেশের মানুষ ইসলামের পক্ষে রায় দিয়ে একটি ইসলামী সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে এগিয়ে দিবে।’
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসাদুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন নতুন এক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হচ্ছে, যার কর্ণধার জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা ধামরাই উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামে-গঞ্জে, বাজারে-হাঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছি। প্রয়োজনীয় যে সংস্কার, সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করছি। বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, যাতে আগামী নির্বাচনের আগে হাসিনা শাসনামলের ফ্যাসিস্টের বিচার হয় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যাপারে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যাতে আমরা আদায় করতে পারি। আমরা একটা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আমরা চাই ধামরাইয়ের মানুষ স্বপ্ন দেখুক, আগামীতে ধামরাইয়ের মানুষ জনগণের নেতা হয়ে উঠবে এমন কাউকেই বেছে নেবে।’
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং দলটির জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘এবি পার্টির প্রচার চার-পাঁচ মাস ধরেই চলছে। প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। আমরা প্রতিদিনই প্রচার চালাচ্ছি। আগামী কয়েক মাসও চলবে। এরপর আমরা কমিটি গঠনের দিকেও যাবো। মানুষ এখন তৃতীয় একটা পথ খোঁজার জন্য অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছে। জনগণের কাছে যখন যাচ্ছি, নতুন নতুন মানুষ যোগ দিতে আগ্রহ জানাচ্ছে। আগামী দিনে ধামরাই থেকে ব্যাপক একটা সাড়া আশা করছি।’
এফএ/এমএমএআর/এমএস

2 weeks ago
16









English (US) ·