পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া ঢেলে সাজানোর আহ্বান টিআইবির

9 hours ago 7

প্রস্তাবিত স্বাধীন পুলিশ কমিশনের বাস্তব স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিতে সরকার প্রণীত ‘পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ খসড়া ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, বর্তমান খসড়ার বিভিন্ন ধারা কমিশনকে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সংস্থায় পরিণত করতে পারে। পাশাপাশি এটি সাবেক আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের আনুগত্যের পরিসর বাড়াতে পারে।

বুধবার (৫ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত খসড়ায় কমিশন গঠন, জনবল নিয়োগ, আর্থিক স্বাধীনতাসহ বেশকিছু ধারা কমিশনের স্বাধীনতার পরিপন্থি। সাত সদস্যের প্রস্তাবিত কমিশনে একজন অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও দুইজন পুলিশ সদস্য রাখার প্রস্তাব এটিকে সাবেকদের আনুগত্যকেন্দ্রিক কাঠামোয় রূপ দিতে পারে।

তিনি বলেন, কমিশনের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে সাবেক বা বর্তমান আমলা-পুলিশ কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে এতে বিচার, আইন, মানবাধিকার ও সুশাসন সংশ্লিষ্ট নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও গবেষকদের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের বিধান রাখতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বিধান বাতিল করতে হবে এবং এই ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে কমিশনের হাতে থাকতে হবে। প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের পরিবর্তে কমিশনের সুপারিশ ও অনুমোদনের বিধান রাখতে হবে, যা সর্বোচ্চ দশ শতাংশের বেশি হবে না। সরকার কোনো কর্মচারীকে প্রেষণে পাঠানোর প্রস্তাব দিলে কমিশনের দ্বিমত থাকলে সেটি প্রাধান্য পাবে- এমন ধারা যুক্ত করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন
র‌্যাব নিয়ে যা সুপারিশ করলো পুলিশ সংস্কার কমিশন 
বিচারপতি খুরশীদ আলমকে অপসারণ 

তিনি আরও বলেন, কমিশনের সচিবসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা কমিশনের হাতে থাকতে হবে। সচিবের পদমর্যাদা ও বেতন-ভাতা সরকারের সচিবের সমান হতে হবে এবং তিনি কমিশনের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও নন-ভোটিং সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

বাছাই কমিটির গঠন প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন নাগরিক কীভাবে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন, তা স্পষ্ট করতে হবে। পাশাপাশি, বাছাই কমিটির সুপারিশকৃত সব প্রার্থীর তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশের বিধান রাখতে হবে।

টিআইবি আরও প্রস্তাব করে যে, কমিশনের হাতে এমন ক্ষমতা থাকতে হবে, যাতে তারা নিরাপত্তা, গোয়েন্দা ও নজরদারি সংস্থার পেশাগত উৎকর্ষতা, মানবাধিকার সংবেদনশীলতা এবং প্রাসঙ্গিক আইন ও নীতির সংস্কার বিষয়ে সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে পারে।

এছাড়া, কমিশন প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে ঔপনিবেশিক যুগের পুরোনো পুলিশ আইন বাতিল করতে হবে। ২০০৭ সালের খসড়া পুলিশ আইনের ইতিবাচক দিক বিবেচনায় সময়োপযোগী নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করার বিধান রাখতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ‘সরকার কমিশনের প্রস্তাবিত বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করবে এবং নিরীক্ষিত ব্যয়ের প্রতিবেদন পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে’- মর্মে ধারা সংযোজন করতে হবে। অন্যথায় এই অধ্যাদেশ সরকারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও কমিশনকে সাবেক আমলা-পুলিশ কর্মকর্তাদের চাকরির আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করার ঝুঁকি তৈরি করবে, যা স্বাধীন পুলিশ কমিশনের মৌলিক উদ্দেশ্যের পরিপন্থি।

এসএম/কেএসআর/জিকেএস

Read Entire Article